সংক্ষিপ্ত / দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর.
1. শৌচাগার বা আস্তাবলের কাছে অ্যামোনিয়ার ঝাঁজালো গন্ধ পাওয়া যায় কেন?
উত্তর: প্রাণীর মূত্রে ইউরিয়া (NH₂CONH₂) নামক জৈব পদার্থ উপস্থিত থাকে। এটি ব্যাকটেরিয়ার ক্রিয়ায় বিয়োজিত হয়ে অ্যামোনিয়াতে পরিণত হয়। তাই শৌচাগার বা আস্তাবলের কাছে অ্যামোনিয়ার ঝাঁজালো গন্ধ পাওয়া যায়।
2. অ্যামোনিয়া গ্যাস প্রস্তুতির সাধারণ নীতিটি উল্লেখ করো।
উত্তর: বিভিন্ন অ্যামোনিয়াম লবণ, যেমন-অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড বা অ্যামোনিয়াম সালফেট এবং পোড়াচুন বা কলিচুন কিংবা কস্টিক সোডার শুষ্ক মিশ্রণকে উত্তপ্ত করে অ্যামোনিয়া গ্যাস প্রস্তুত করা হয়।
2NH4CI + CaO তাপ 2NH3 ↑ + CaCI2+ H2
অ্যামোনিয়াম পোড়াচুন অ্যামোনিয়া
ক্লোরাইড
2NH4CI + Ca(OH)2তাপ 2NH3 ↑ + CaCI2+ 2H2O
অ্যামোনিয়াম কলিচুন অ্যামোনিয়া
ক্লোরাইড
(NH4)2SO4+ 2NaOH তাপ 2NH3 ↑ + Na2SO4+ 2H2O
অ্যামোনিয়াম কস্টিক সোডা অ্যামোনিয়া
ক্লোরাইড
3. পরীক্ষাগারে কীভাবে অ্যামোনিয়া গ্যাস প্রস্তুত করা হয়? অনুরূপ প্রশ্ন, অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইডকে কলিচুনসহ উত্তপ্ত করলে কোন্ গ্যাস উৎপন্ন হয়? বিক্রিয়ার সমীকরণ লেখো।
উত্তর: [ 1:3 ভর অনুপাতে অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড ও কলিচুনের শুষ্ক মিশ্রণ নিয়ে এটিকে একটি গোলতল ফ্লাস্কে রাখা হয়। এরপর মিশ্রণসহ গোলতল ফ্লাস্কটিকে বুনসেন বার্নারের সাহায্যে উত্তপ্ত করা হলে অ্যামোনিয়া গ্যাস উৎপন্ন হয়। এভাবে পরীক্ষাগারে অ্যামোনিয়া গ্যাস প্রস্তুত করা হয়।
2NH4CI + Ca(OH)2তাপ 2NH3 ↑ + CaCI2+ 2H2O
4 .পরীক্ষাগারে অ্যামোনিয়া গ্যাস প্রস্তুতিতে কী কী রাসায়নিক দ্রব্যের প্রয়োজন? বিক্রিয়ার শর্ত ও রাসায়নিক সমীকরণ লেখো।
অথবা, পরীক্ষাগারে অ্যামোনিয়া গ্যাস প্রস্তুতির বিক্রিয়ার শর্ত ও রাসায়নিক সমীকরণ লেখো।
উত্তর: প্রয়োজনীয় রাসায়নিক দ্রব্য: শুষ্ক অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড (NH4CI) ও শুষ্ক কলিচুন ( C aO) ।
চিত্র 1: পরীক্ষাগারে অ্যামোনিয়া প্রস্তুতি
রাসায়নিক বিক্রিয়ার সমীকরণ: 2NH4CI + Ca(OH)2তাপ 2NH3 ↑ + CaCI2+ 2H2O
5. পরীক্ষাগারে অ্যামোনিয়া গ্যাস প্রস্তুতিতে কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার?
উত্তর: ① ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও রাসায়নিক দ্রব্য শুষ্ক হওয়া প্রয়োজন। ② বিক্রিয়কগুলিকে খুব ভালোভাবে গুঁড়ো করে নেওয়া উচিত যাতে এদের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল তথা বিক্রিয়ার গতি বৃদ্ধি পায়। ③ ব্যবহৃত গোলতল ফ্লাস্কটির সমস্ত অংশকে সমানভাবে উত্তপ্ত করতে হয় যাতে ফ্লাস্কটি ফেটে না যায়। ④ অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইডের তুলনায় কলিচুনকে বেশি পরিমাণে নেওয়া উচিত ও এদেরকে খুব ভালোভাবে মেশানো দরকার। ⑤ ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিতে কোথাও যেন কোনো লিক না থাকে। ফ্লাস্কটিকে নির্গম নলের দিকে সামান্য হেলিয়ে রাখতে হবে।
6. পরীক্ষাগারে অ্যামোনিয়া প্রস্তুতির সময় NH4 ও Ca(OH2) - এর চূর্ণকে শুষ্ক অবস্থায় খুব ভালোভাবে মিশিয়ে তারপর উত্তপ্ত করা উচিত কেন?
উত্তর: শুষ্ক অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড উর্ধ্বপাতিত হয়, অর্থাৎ তাপ দিলে কঠিন অবস্থা থেকে সরাসরি বাষ্পে পরিণত হয়। তাই NH4Cl ও Ca (OH)2 চূর্ণকে ভালোভাবে না মিশিয়ে উত্তপ্ত করলে NH4Cl হয়ে বিক্রিয়া-মাধ্যম থেকে অপসারিত হতে পারে। প্রস্তুতিতে NH4 ও Ca (OH)2 -এর মিশ্রণকে শুদ্ধ অবস্থায় উত্তপ্ত করা হয়, কারণ । ফলে বিক্রিয়ক দুটির জলীয় দ্রবণকে উত্তপ্ত করলে অ্যামোনিয়া গ্যাস মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যাবে না।
7. পরীক্ষাগারে অ্যামোনিয়া প্রস্তুতিতে NaOH অপেক্ষা Ca(OH2) অধিক গ্রহণযোগ্য কেন?
উত্তর: পরীক্ষাগারে অ্যামোনিয়া প্রস্তুতিতে NaOH অপেক্ষা Ca (OH)2 অধিক গ্রহণযোগ্য কারণ-① এটি সহজলভ্য ও দামে সস্তা, ② NaOH-এর মতো পরিবেশ থেকে জল শোষণ করে না।
৪. পরীক্ষাগারে উৎপন্ন অ্যামোনিয়া (NH3 ) গ্যাসকে কীভাবে জলীয় বাষ্প মুক্ত করা হয়? এক্ষেত্রে একটি বিশেষ রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করার কারণ কী? অনুরূপ প্রশ্ন, অ্যামোনিয়াকে শুষ্ক করতে কী ব্যবহার করা হয়?
উত্তর: পরীক্ষাগারে উৎপন্ন অ্যামোনিয়া গ্যাসকে বিক্রিয়া-মাধ্যম থেকে নির্গম নলের সাহায্যে একটি চুনস্তম্ভের মধ্য দিয়ে পাঠানো হয়। চুনস্তম্ভে উপস্থিত পোড়াচুন ( C a0) অ্যামোনিয়ার সঙ্গে মিশে থাকা জলীয় বাষ্পকে শোষণ করে নেয়, ফলে গ্যাসটি জলীয় বাষ্প মুক্ত হয়। পোড়াচুন (CaO) ও অ্যামোনিয়া উভয়ই ক্ষারকীয় পদার্থ হওয়ায় এরা পরস্পরের সাথে কোনো বিক্রিয়া করে না। তাই এক্ষেত্রে শুষ্ককারক পদার্থ হিসেবে পোড়াচুন ব্যবহার করা হয়।
9 .পরীক্ষাগারে উৎপন্ন NH3গ্যাসকে জলীয় বাষ্প মুক্ত করতে গাঢ় H2 SO4 ফসফরাস পেন্টক্সাইড (P2O5) বা অনার্স CaCl₂ ব্যবহার করা যায় না কেন?
উত্তর: অ্যামোনিয়া একটি ক্ষারকীয় পদার্থ। তাই গাঢ় H2 SO4 ও P2O5 -এর মতো আম্লিক শুষ্ককারক পদার্থের সাথে বিক্রিয়া করে যথাক্রমে অ্যামোনিয়াম সালফেট ও অ্যামোনিয়াম ফসফেট উৎপন্ন করে।
2NH3 + H2SO4 (NH4)2 SO4
6NH3 + P2O2 + 3H2O 2(NH4)3PO4
আবার, অনার্স CaCl₂ ব্যবহার করে অ্যামোনিয়াকে জলীয় বাষ্প মুক্ত করতে চাইলে এটি অ্যামোনিয়ার সঙ্গে বিক্রিয়া করে একটি যুত যৌগ গঠন করে। CaCl₂ + 8NH3 → CaCl₂ 8NH3 (যুত যৌগ)
10. [i] পরীক্ষাগারে জলীয় বাষ্প মুক্ত অ্যামোনিয়া গ্যাসকে কীভাবে সংগ্রহ করা হয়?
[ii] পরীক্ষাগারে অ্যামোনিয়াকে জলের নিম্ন অপসারণ দ্বারা সংগ্রহ করা হয় না কেন?
উত্তর: [i] অ্যামোনিয়া গ্যাস বায়ুর চেয়ে হালকা। তাই পরীক্ষাগারে উৎপন্ন অ্যামোনিয়া গ্যাসকে শুষ্ক করার পর বায়ুর নিম্ন অপসারণ দ্বারা একটি উপুড় করা শুষ্ক গ্যাসজারে সংগ্রহ করা হয়।
[ii] অ্যামোনিয়া গ্যাস জলে অত্যন্ত দ্রাব্য। গ্যাসজারে জলের নিম্ন অপসারণ দ্বারা অ্যামোনিয়া গ্যাসকে সংগ্রহ করা হলে গ্যাসটি জলে দ্রবীভূত হয়ে অ্যামোনিয়াম হাইড্রক্সাইড গঠন করে। এই অবস্থায় গোলতল ফ্লাস্কে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয় তা পূরণের জন্য গ্যাসজার থেকে জল উত্তপ্ত গোলতল ফ্লাস্কে প্রবেশ করে। এর ফলে ফ্লাস্কটি ফেটে যায়। তাই অ্যামোনিয়া গ্যাসকে জলের নিম্ন অপসারণ দ্বারা সংগ্রহ করা হয় না।
11. পরীক্ষাগারে সাধারণ উয়তায় কীভাবে অ্যামোনিয়া গ্যাস প্রস্তুত করা যায়?
উত্তর: কঠিন কস্টিক পটাশ বা কস্টিক সোডার ওপর ফোঁটা ফোঁটা করে লাইকার অ্যামোনিয়ার দ্রবণ ফেললে দ্রবণের জল কস্টিক পটাশ বা কস্টিক সোডা দ্বারা শোষিত হয় এবং অ্যামোনিয়া গ্যাস নির্গত হয়।
12. হেবার পদ্ধতিতে অ্যামোনিয়ার শিল্পোৎপাদন সংক্ষেপে আলোচনা করো। অথবা, হেবার পদ্ধতিতে অ্যামোনিয়ার শিল্প উৎপাদনে যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে সেটির সমিত রাসায়নিক সমীকরণ লেখো। এই পদ্ধতির শর্তগুলি লেখো। অথবা, হেবার পদ্ধতিতে অ্যামোনিয়ার শিল্পোৎপাদনের শর্তাবলি ও সমিত রাসায়নিক সমীকরণ লেখো।
উত্তর: অনুঘটকরূপে আয়রন চূর্ণ এবং উদ্দীপকরূপে K₂O ও AI2O3 চূর্ণের মিশ্রণ ব্যবহার করে 450C উয়তা ও 200 বায়ুমণ্ডলীয় চাপে শুষ্ক ও বিশুদ্ধ নাইট্রোজেন ও হাইড্রোজেন গ্যাসের ( 1/3 আয়তন অনুপাতে) মিশ্রণকে উত্তপ্ত করলে অ্যামোনিয়া গ্যাস উৎপন্ন হয়।
N2 + 3H2 2NH3+ তাপ (22.4Kcal)
এক্ষেত্রে বিক্রিয়া-প্রকোষ্ঠ থেকে যে মিশ্রণ নির্গত হয় তাতে উৎপাদিত পদার্থ হিসেবে 10-12 শতাংশ (আয়তন হিসেবে) অ্যামোনিয়া উপস্থিত থাকে। অবিকৃত N2 ও H2 এর মিশ্রণকে আবার চাপ প্রয়োগ করে NH2 উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা হয়।
13. অ্যামোনিয়ার ভৌত ধর্মগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর: ① অ্যামোনিয়া তীব্র ঝাঁজালো গন্ধবিশিষ্ট, বর্ণহীন গ্যাস। ② এটি বায়ুর তুলনায় হালকা (অ্যামোনিয়ার বাষ্পঘনত্ব = 8.5, বায়ুর বাষ্পঘনত্ব = 14.4)। ও সাধারণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপে ও - 33.4C উয়তায় শীতল করলে অ্যামোনিয়া বর্ণহীন তরলে পরিণত হয়। একে তরল অ্যামোনিয়া বলে। ④ গ্যাসটি জলে খুবই দ্রাব্য এবং এর জলীয় দ্রবণ ক্ষারধর্মী। 20C উন্নতা ও 1 atm চাপে 1 mL জলে প্রায় 700mL অ্যামোনিয়া গ্যাস দ্রবীভূত হয়।
14. একটি পরীক্ষার সাহায্যে প্রমাণ করো অ্যামোনিয়া গ্যাস বায়ুর তুলনায় হালকা।
উত্তর: চিত্র ২-এর মতো করে অ্যামোনিয়া গ্যাস-পূর্ণ গ্যাসজারটির ঢাকনা সরিয়ে তার ওপর একটি বায়ু-পূর্ণ গ্যাসজার উপুড় করে রাখা হল। কিছু সময় পরে ওপরের গ্যাসজারটিকে সোজা করে রেখে তার মুখে এক টুকরো ভিজে লাল লিটমাস কাগজ ধরা হলে কাগজের বর্ণ নীল হয়ে যায়। এক্ষেত্রে পরীক্ষার ঠিক গুরুর মুহূর্তে নীচের গ্যাসজারে অ্যামোনিয়া গ্যাস ও ওপরের গ্যাসজারে বায়ু ছিল। কিছু সময় পরে ভিজে লাল লিটমাস কাগজের বর্ণের পরিবর্তন নির্দেশ করে যে ওপরের গ্যাসজারে অ্যামোনিয়া বায়ু
চিত্র 2: বায়ুর নিম্ন অপসারণ দ্বারা অ্যামোনিয়া গ্যাস সংগ্রহ গ্যাস বর্তমান। এর থেকে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে অ্যামোনিয়া গ্যাস বায়ুর তুলনায় হালকা। তাই অ্যামোনিয়া গ্যাস বায়ুর নিম্ন অপসারণ দ্বারা ওপরের গ্যাসজারে প্রবেশ করেছে।
15. অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণকে তাপ প্রয়োগ করে গাঢ় করা যায় না কেন?
উত্তর: অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণকে তাপ প্রয়োগ করলে দ্রবণে দ্রবীভূত অ্যামোনিয়া গ্যাস দ্রবণ থেকে বেরিয়ে যায়। ফলে দ্রবণে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ হ্রাস পায় এবং দ্রবণ গাঢ় হওয়ার পরিবর্তে লঘু হয়ে যায়।
16. অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণকে অ্যামোনিয়াম হাইড্রক্সাইড বলা কতটা যুক্তিযুক্ত বলে তোমার মনে হয়?
উত্তর: বাস্তবে NH4OH সংকেতবিশিষ্ট যৌগের পৃথক কোনো অস্তিত্ব নেই। সেদিক থেকে বিচার করলে অ্যামোনিয়াম হাইড্রক্সাইড (NH4OH)- এর পরিবর্তে 'অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণ' বা 'অ্যাকুয়াস অ্যামোনিয়া (aqueous ammonia)' কথাটিই অধিক যুক্তিযুক্ত। তবে কাজের সুবিধার্থে রাসায়নিক সমীকরণ প্রকাশ করার ক্ষেত্রে অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণ বলতে আমরা অ্যামোনিয়াম হাইড্রক্সাইডকেই বুঝি এবং এর সংকেতরূপে NH4OH ব্যবহার করি।
17. একটি পীরক্ষার সাহায্যে প্রমাণ করো-অ্যামোনিয়া জলে অত্যন্ত দ্রাব্য ও এর জলীয় দ্রবণ ক্ষারধর্মী।
উত্তর: চিত্র 3-এর মতো করে একটি বিকারে লাল লিটমাস দ্রবণ ও ওপরের গোলতল ফ্লাস্কে শুষ্ক অ্যামোনিয়া গ্যাস ভরতি করে রাখা হয়। ফ্লাস্কের বাইরের পৃষ্ঠকে বরফ শীতল জল দিয়ে ঠান্ডা করলে ফ্লাস্কের ভিতরে থাকা অ্যামোনিয়া গ্যাসের আয়তনের সংকোচন ঘটে ও এর চাপ কমে যায়। ফলে ফ্লাস্কের ভিতরে আংশিক শূন্যতা সৃষ্টি হয়। এই অবস্থায় ফ্লাস্কের ভিতরের চাপের তুলনায় বাইরের চাপ কিছুটা বেশি হওয়ায় স্টপকক্ খুলে দিলে বিকারের লাল লিটমাস দ্রবণ নল বেয়ে ওপরের ফ্লাস্কে প্রবশে করে। ফলস্বরূপ ফ্লাস্কের অ্যামোনিয়া গ্যাস দ্রবণের জলে দ্রবীভূত হয়ে যায় ও ফ্লাস্কের মধ্যে আরও শূন্যতার সৃষ্টি হয়। তখন বাইরের চাপ অপেক্ষা ফ্লাস্কের ভিতরের চাপ বেশ অনেকখানি কমে যাওয়ায় বিকার থেকে লাল লিটমাস দ্রবণ তীব্র বেগে ফোয়ারার আকারে ওপরের ফ্লাস্কে প্রবেশ করে এবং নীল বর্ণের দ্রবণে পরিণত হয়। এক্ষেত্রে অ্যামোনিয়া গ্যাস জলে দ্রবীভূত হয়ে মৃদু ক্ষার অ্যামোনিয়াম হাইড্রক্সাইড উৎপন্ন করে, যা লাল লিটমাস দ্রবণের বর্ণ নীল করে। এই পরীক্ষার সাহায্যে প্রমাণিত হয় যে অ্যামোনিয়া গ্যাস জলে অত্যন্ত দ্রাব্য ও এর জলীয় দ্রবণ ক্ষারধর্মী। এই পরীক্ষা ফোয়ারা পরীক্ষা নামে পরিচিত। দ্রবণ U
18. অ্যামোনিয়া যে একটি ক্ষারকীয় প্রকৃতির যৌগ তা কীভাবে বোঝা যায়? অনুরূপ প্রশ্ন, রাসায়নিক বিক্রিয়ার সাহায্যে দেখাও যে, অ্যামোনিয়া ক্ষারধর্মী।
উত্তর: অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণ লাল লিটমাস কাগজকে নীল করে অথবা অ্যামোনিয়া-পূর্ণ গ্যাসজারে ভিজে লাল লিটমাস কাগজ প্রবেশ করালে কাগজটির বর্ণ নীল হয়ে যায়। আবার অ্যামোনিয়া বিভিন্ন অ্যাসিড, যেমন- নাইট্রিক অ্যাসিড, হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড, সালফিউরিক অ্যাসিড প্রভৃতির সাথে বিক্রিয়ায় যথাক্রমে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট (NH4NO3) , অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড (NH4Cl) অ্যামোনিয়াম সালফেট [ (NH4)2SO4 ] ইত্যাদি লবণ উৎপন্ন করে।
NH3+ HNO3 NH4NH3; NH3+ HCI NH4CI
2NH3 + H2SO4 (NH4)2SO4
উপরোক্ত ঘটনাগুলি থেকে বোঝা যায় যে, অ্যামোনিয়া একটি ক্ষারকীয় প্রকৃতির যৌগ।
19. বিলীয়মান রং কী? এর এরূপ নামকরণের কারণ কী? অনুরূপ প্রশ্ন, অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণে ফেনলপথ্যালিন যোগ করলে কী হবে? সাদা জামায় এই মিশ্রণটি ঢেলে দিলে তাৎক্ষণিক এবং কিছু সময় পরে পর্যবেক্ষণ কী হবে এবং কেন?
উত্তর: সামান্য ফেনলস্থ্যালিন মিশ্রিত অ্যামোনিয়ার গোলাপি রঙের জলীয় দ্রবণকে বিলীয়মান রং বলে। অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণ ক্ষারীয় প্রকৃতির। ক্ষারীয় মাধ্যমে ফেনলস্থ্যালিন গোলাপি রং ধারণ করে। অ্যামোনিয়া উদ্দ্বায়ী হওয়ায় কিছুক্ষণ পর জলীয় দ্রবণ থেকে এটি বাষ্পীভূত হয়ে যায়। ফলে দ্রবণটি ক্ষারকীয়তা হারিয়ে প্রশম দ্রবণে পরিণত হয়। প্রশম দ্রবণে ফেনল্যালিন বর্ণহীন হওয়ায় দ্রবণের গোলাপি রং বিলীন হয়ে যায়। তাই উক্ত দ্রবণটির এরূপ নামকরণ করা হয়েছে।
20. অ্যামোনিয়া গ্যাস হাইড্রোজেন ক্লোরাইডের সংস্পর্শে এলে কী ঘটবে সমীকরণসহ লেখো। অনুরূপ প্রশ্ন, একটি বিক্রিয়ার উদাহরণ দাও যেখানে সাধারণ উয়তায় দুটি গ্যাসের বিক্রিয়ায় একটি কঠিন পদার্থ উৎপন্ন হয়।
উত্তর: অ্যামোনিয়া গ্যাস হাইড্রোজেন ক্লোরাইডের সংস্পর্শে এলে সাদা ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়। এই ধোঁয়া আসলে কঠিন অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইডের (NH4Cl) সূক্ষ্ম কণার সমষ্টি। NH3(g) + HCl (g) NH4Cl (s)
এই বিক্রিয়াটি সাধারণ উন্নতায় দুটি গ্যাসের বিক্রিয়ায় কঠিন পদার্থ উৎপন্ন হওয়ার একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।
21. কী ঘটে যখন অক্সিজেনের উপস্থিতিতে অ্যামোনিয়া গ্যাসে আগুন ধরানো হয়?
উত্তর: অ্যামোনিয়া গ্যাস দহনে সহায়ক না হলেও নিজে দাহ্য। অক্সিজেনের উপস্থিতিতে অ্যামোনিয়া গ্যাসে আগুন ধরালে অ্যামোনিয়া হলুদ শিখায় জ্বলতে থাকে ও জারিত হয়ে বর্ণহীন, গন্ধহীন নাইট্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন করে। 4NH3+3O2 2N2↑ + 6H2O
22. অনুঘটকের উপস্থিতিতে অ্যামোনিয়াকে জারিত করলে কী উৎপন্ন হবে সমীকরণসহ লেখো। অনুরূপ প্রশ্ন, অ্যামোনিয়াকে বায়ুর অক্সিজেন দ্বারা জারণ ঘটিয়ে কীভাবে নাইট্রিক অক্সাইড উৎপাদন করা হয়। অনুঘটকের নাম ও শর্তসহ উল্লেখ লেখো। বিক্রিয়াটির সমিত রাসায়নিক সমীকরণও লেখো।
উত্তর: 700°C উয়তায় উত্তপ্ত প্ল্যাটিনাম অথবা প্ল্যাটিনাম-রোডিয়াম ধাতু-সংকরের তৈরি তারজালির (অনুঘটক) ওপর দিয়ে অ্যামোনিয়া ও অতিরিক্ত অক্সিজেনের মিশ্রণকে অতি দ্রুত চালনা করলে (সংস্পর্শকাল 0.0014s) অ্যামোনিয়া জারিত হয়ে নাইট্রিক অক্সাইডে (NO) পরিণত হয়: 4NH3+ 5O2→ 4NO↑ + 6H2O + তাপ (90.3kJ)
23. অ্যামোনিয়া গ্যাসের বিজারণ ধর্মের সমীকরণসহ উদাহরণ দাও। অনুরূপ প্রশ্ন, উত্তপ্ত কিউপ্রিক অক্সাইডের ওপর NH₃ গ্যাস চালনা করলে কী ঘটে? সমীকরণ দাও। অনুরূপ প্রশ্ন, প্রমাণ করো, NH₃ হল তীব্র বিজারক পদার্থ।
উত্তর: উত্তপ্ত কালো কিউপ্রিক অক্সাইডের ওপর দিয়ে অ্যামোনিয়া চালনা করলে কিউপ্রিক অক্সাইড বিজারিত হয়ে লাল বর্ণের ধাতব কপার উৎপন্ন করে ও অ্যামোনিয়া জারিত হয়ে নাইট্রোজেনে পরিণত হয়। স্বভাবতই এক্ষেত্রে কিউপ্রিক অক্সাইড জারক পদার্থ ও অ্যামোনিয়া বিজারক পদার্থ।
24. উত্তপ্ত লেড অক্সাইডের ওপর দিয়ে অ্যামোনিয়া গ্যাস চালনা করলে কী ঘটে সমীকরণসহ লেখো।
উত্তর: উত্তপ্ত লেড অক্সাইডের (PbO) ওপর দিয়ে অ্যামোনিয়া চালনা করলে অ্যামোনিয়া হলুদ বর্ণের লেড অক্সাইডকে বিজারিত করে ধূসর বর্ণের ধাতব লেডে পরিণত করে এবং নিজে N₂-তে জারিত হয়।
3PbO (হলুদ) + 2NH3 → 3Pb (ধূসর) + N2↑ + 3H2O
25. [i] উত্তপ্ত সোডিয়ামের ওপর দিয়ে অ্যামোনিয়া গ্যাস চালনা করা হলে, কী ঘটে সমীকরণসহ লেখো।
[ii] উৎপন্ন বিক্রিয়াজাত পদার্থ থেকে কীভাবে পুনরায় অ্যামোনিয়া গ্যাস ফিরে পাওয়া যায়?
উত্তর: প্রায় 360°C উয়তায় উত্তপ্ত সোডিয়াম ধাতুর ওপর দিয়ে ঝাঁজালো গন্ধবিশিষ্ট অ্যামোনিয়া গ্যাস চালনা করা হলে সাদা মোমের মতো কঠিন সোডামাইড বা সোডিয়াম অ্যামাইড ও বর্ণহীন, গন্ধহীন হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন হয়। 2Na + 2NH3 → 2NaNH2 (সোডামাইড) + H₂↑ ii] উৎপন্ন সোডামাইডের সাথে জল যোগ করলে পুনরায় ঝাঁজালো গন্ধবিশিষ্ট অ্যামোনিয়া গ্যাস ফিরে পাওয়া যায়।
NaNH2 + H2O NaOH + NH3↑
26. অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইডের জলীয় দ্রবণে অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণ যোগ করলে কী ঘটবে সমীকরণসহ লেখো।
উত্তর: অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইডের (AlCI3) বর্ণহীন জলীয় দ্রবণে অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণ (বা অ্যামোনিয়াম হাইড্রক্সাইড) যোগ করলে অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রক্সাইডের [Al (OH)3 ] জিলেটিনের মতো সাদা আঠালো অধঃক্ষেপ উৎপন্ন হয়।
AlCI3 + 3H2O + 3NH3 → Al(OH)3↓ + 3NH4Cl
বর্ণহীন দ্রবণ সাদা আঠালো অধঃক্ষেপ
27. অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইডের জলীয় দ্রবণে অ্যামোনিয়া গ্যাস চালনা করলে কী ঘটে তা সমিত সমীকরণসহ লেখো।
উত্তর: অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইডের বর্ণহীন জলীয় দ্রবণে অ্যামোনিয়া গ্যাস চালনা করলে অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রক্সাইডের [Al (OH)3] জিলেটিনের মতো সাদা আঠালো অধঃক্ষেপ উৎপন্ন হয়।
AlCI3 + 3H2O + 3NH3→ Al(OH)3↓ + 3NH4Cl
বর্ণহীন দ্রবণ সাদা আঠালো
অধঃক্ষেপ
28. ফেরিক ক্লোরাইডের জলীয় দ্রবণে অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণ যোগ করলে কী ঘটবে সমীকরণসহ লেখো। অনুরূপ প্রশ্ন, ফেরিক ক্লোরাইড দ্রবণে NH4OH যোগ করলে কী ঘটে?
FeCI3 + 3NH4OH → Fe(OH)3↓+3NH4Cl
হলুদ বর্ণের দ্রবণ বাদামি অধঃক্ষেপ
29. দুটি জলীয় দ্রবণের একটি ফেরিক ক্লোরাইড ও অপরটি অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড। অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণের সাহায্যে কীভাবে ফেরিক ক্লোরাইড দ্রবণটি শনাক্ত করবে? সমিত রাসায়নিক সমীকরণসহ উত্তর দাও।
উত্তর: প্রদত্ত দ্রবণ দুটির প্রতিটিতে অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণ অর্থাৎ অ্যামোনিয়াম হাইড্রক্সাইড যোগ করলে একটির ক্ষেত্রে জিলেটিনের মতো সাদা আঠালো অধঃক্ষেপ পড়ে এবং অন্যটির ক্ষেত্রে বাদামি বর্ণের অধঃক্ষেপ পড়ে। সাদা আঠালো অধঃক্ষেপটি হল অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রক্সাইড [Al (OH)3] ও বাদামি বর্ণের অধঃক্ষেপটি হল ফেরিক হাইড্রক্সাইড [Fe (OH)3 ] । উৎপন্ন অধঃক্ষেপ দুটির প্রকৃতি ও বর্ণ দেখে সহজেই বলা অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণ যোগ করার ফলে বাদামি বর্ণের অধঃক্ষেপ পড়ে, সেটিই হল ফেরিক ক্লোরাইড দ্রবণ।
AlCI3+ 3NH4OH → Al(OH)3 ↓+ 3NH4 CI
অ্যালুমিনিয়াম অ্যামোনিয়াম অ্যালুমিনিয়াম
ক্লোরাইড হাইড্রক্সাইড হাইড্রক্সাইড
30. কয়েকটি নির্দিষ্ট ধাতব লবণের সাথে অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণের বিক্রিয়ার গুরুত্ব উল্লেখ করো। অনুরূপ প্রশ্ন, বিভিন্ন ধাতব ক্যাটায়নের শনাক্তকরণে অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণ কীভাবে ব্যবহার করা হয়?
উত্তর: অ্যামোনিয়া জলীয় দ্রবণে OH- আয়ন উৎপন্ন করে। পরীক্ষাগারে নির্দিষ্ট গাঢ়ত্বের অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণের সঙ্গে কয়েকটি ধাতব লবণের বিক্রিয়ায় নির্দিষ্ট বর্ণবিশিষ্ট ধাতব হাইড্রক্সাইডের অধঃক্ষেপ উৎপন্ন হয়। এই বিক্রিয়ার গুরুত্ব হল① অধঃক্ষিপ্ত ধাতব হাইড্রক্সাইডের বর্ণ ও প্রকৃতি দেখে সংশ্লিষ্ট ধাতব ক্যাটায়নটিকে (ধাতুটিকে) শনাক্ত করা যায়। ② বিভিন্ন ধাতব ক্যাটায়নের মিশ্রণ থেকে একটি নির্দিষ্ট ক্যাটায়নকে অধঃক্ষেপণের দ্বারা পৃথক করা যায়। যেমন-
FeCI3+ 3NH4OH → Fe(OH)3 ↓ + 3NH4Cl
বাদামি অধঃক্ষেপ
AICI3+3NH4OH → Al(OH)3↓ + 3NH4 CI
সাদা আঠালো অধঃক্ষেপ
উপরোক্ত বিক্রিয়া দুটিতে প্রাপ্ত অধঃক্ষেপগুলি দ্বারা নির্দেশিত হয় যে সংশ্লিষ্ট ধাতব ক্যাটায়নগুলি হল যথাক্রমে Fe3+ ও AI3+।
31. অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণের সঙ্গে কপার সালফেটের জলীয় দ্রবণের বিক্রিয়া ঘটালে তুমি কী কী ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য পরিবর্তন লক্ষ করবে? অনুরূপ প্রশ্ন, কপার সালফেট দ্রবণে প্রথমে ধীরে ধীরে NH4OH যোগ করলে এবং পরে অতিরিক্ত NH4OH যোগ করলে কী ঘটে সমীকরণসহ লেখো।
উত্তর: কপার সালফেটের নীল বর্ণের জলীয় দ্রবণে অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণ ধীরে ধীরে যোগ করলে প্রথমে ক্ষারকীয় কপার সালফেটের [CuSO4 . Cu (OH)2 ] নীলাভ সাদা অধঃক্ষেপ উৎপন্ন হয়। এরপর অতিরিক্ত পরিমাণে যোগ করলে গাঢ় নীল রঙের জটিল লবণ কিউপ্রামোনিয়াম সালফেট বা টেট্রাঅ্যামিনকপার (II) সালফেট ([Cu (NH3)4] SO4) গঠিত হয় যা জলে দ্রাব্য। তাই দ্রবণের বর্ণ গাঢ়
2CuSO4 + 2NH4OH → CuSO4 . Cu(OH)2 + (NH4)22SO4
নীলাভ সাদা
CuSO4 . Cu(OH)2 + (NH4)2SO4 + 6NH4OH 2[ Cu(NH3)4] SO4 + 8H2O
গাঢ় নীল
32. নেসলার বিকারক কাকে বলে? নেসলার বিকারকের সংস্পর্শে এলে অ্যামোনিয়ার কী পরিবর্তন লক্ষ করা যায়? অনুরূপ প্রশ্ন, নেসলার বিকারক কী ও এর সংকেত লেখো।
অনুরূপ প্রশ্ন, প্রথমে স্বল্প পরিমাণ ও পরে অতিরিক্ত পরিমাণ অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণের সঙ্গে নেসলার বিকারকের বিক্রিয়ায় কী দেখা যায় লেখো।
উত্তর: পটাশিয়াম মারকিউরিক আয়োডাইডের (K₂HgI4) ক্ষারীয় দ্রবণকে নেসলার বিকারক বলে। নেসলার বিকারক স্বল্প পরিমাণ অ্যামোনিয়ার সংস্পর্শে তামাটে বাদামি দ্রবণ এবং অতিরিক্ত পরিমাণ অ্যামোনিয়ার সংস্পর্শে তামাটে বাদামি অধঃক্ষেপ উৎপন্ন করে। বাতাসে বা জলে সামান্য পরিমাণ NH3 -এর উপস্থিতিও এই বিকারকের সাহায্যে শনাক্ত করা যায়।
1. অ্যামোনিয়াম সালফেট ও কস্টিক সোডার বিক্রিয়ায় উৎপন্ন হয়—-----
(a) অ্যামোনিয়া
(b) সোডিয়াম সালফেট
(c) জলীয় বাষ্প
(d) সবকটিই
উত্তর: সবকটিই
2. নীচের কোনটি আর্দ্র অ্যামোনিয়াকে শুষ্ক করতে ব্যবহৃত হয়?
(a) গাঢ় H2SO4
উত্তর: CaO
3. জলীয় দ্রবণে NH3 —----
(a) প্রশম
(b) তীব্র ক্ষারীয়
(c) মৃদু ক্ষারীয়
(d) মৃদু আম্লিক
4. অ্যামোনিয়ার অনুঘটকীয় জারণের দ্বারা NO উৎপন্ন করতে ব্যবহৃত অনুঘটকটি হল—---
(a) MnO₂
(b) প্ল্যাটিনাম
(c) লোহা
(d) কপার
উত্তর: প্ল্যাটিনাম
5. পরীক্ষাগারে NH3 গ্যাস সংগ্রহ করা হয় —---
(a) বায়ুর উর্ধ্ব অপসারণ দ্বারা
(b) জলের ঊর্ধ্ব অপসারণ দ্বারা
(c) বায়ুর নিম্ন অপসারণ দ্বারা
(d) জলের নিম্ন অপসারণ দ্বারা
উত্তর: বায়ুর নিম্ন অপসারণ দ্বারা
6. কপার সালফেটের জলীয় দ্রবণে অতিরিক্ত পরিমাণ জলীয় অ্যামোনিয়া যোগ করলে উৎপন্ন দ্রবণের রং কী হবে?
(a) হলুদ
(b) সবুজ
(c) গাঢ় নীল
(d) বাদামি
উত্তর: গাঢ় নীল
7. NH3 রাসায়নিকভাবে—----
(a) জারক পদার্থ
(b) বিজারক পদার্থ
(c) কখনও জারক কখনও বিজারক পদার্থ
(d) নিষ্ক্রিয়
উত্তর: বিজারক পদার্থ
৪. অ্যামোনিয়ার শিল্পোৎপাদন পদ্ধতির নাম—----
(a) অস্ট্রয়াল্ড পদ্ধতি
(b) সল্ভে পদ্ধতি
(c) বায়ার পদ্ধতি
(d) হেবার পদ্ধতি
উত্তর: হেবার পদ্ধতি
9. কোনটির জলীয় দ্রবণে NH3 গ্যাস চালনা করলে বা NH4OH যোগ করলে কোনো অধঃক্ষেপ পড়ে না?
(a) CuSO4
উত্তর: NH4NO3
10. হেবার পদ্ধতিতে অ্যামোনিয়া গ্যাস উৎপাদনকালে সর্বোত্তম তাপমাত্রা হল—-----
(a) 723C
উত্তর: 723K
11. অতি বিশুদ্ধ অ্যামোনিয়া গ্যাস পেতে হলে অ্যামোনিয়াকে সংগ্রহ করা হয়—---
(a) জলের ওপর
(c) ইথারের ওপর
(d) মার্কারির ওপর
উত্তর: মার্কারির ওপর
12. নেসলার বিকারক সামান্য পরিমাণ অ্যামোনিয়ার সংস্পর্শে যে বর্ণ ধারণ করে, তা হল—---
(a) নীল
(b) তামাটে বাদামি
(c) কালো
(d) সাদা
উত্তর: তামাটে বাদামি
13. কোন্ উন্নতায় শীতল করলে অ্যামোনিয়া বর্ণহীন তরলে পরিণত হয়?
(a) 0C
উত্তর: -33.4C
14. NH3-এর জলীয় দ্রবণের সঙ্গে কোন্ ধাতব লবণের জলীয় দ্রবণের বিক্রিয়ায় বাদামি অধঃক্ষেপ উৎপন্ন হয়?
(a) AI3+-এর লবণ
(b) Cu2+-এর লবণ
(c) Fe3+-এর লবণ
(d) Ni2+ -এর লবণ
উত্তর: Fe3+-এর লবণ
(a) CO2
উত্তর: NH3
16. ইউরিয়ার নিয়াম সালফেট অতির প্রথম ধাপে উৎপন্ন হয়—--
(a) অ্যামোনিয়াম কার্যামেট
(b) অ্যামোনিয়াম কার্বনেট
(c) অ্যামোনিয়াম সালফাইট
(d) অ্যামোনিয়াম সালফাইটন
উত্তর: অ্যামোনিয়াম কার্যামেট
17. বোযোগ বিক্রিয়ানিয়া প্রস্তুতির বিক্রিয়াটি—---
(a) প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া
(b) যুত বিক্রিয়া
(c) বিয়োজন বিক্রিয়া
(d) প্রত্যক্ষ সংযোগ বিক্রিয়া
উত্তর: প্রত্যক্ষ সংযোগ বিক্রিয়া
18. আমোনিয়াম কার্বামেটকে উত্তপ্ত করলে কোনটি উৎপন্ন হয়?
(a) NH₃
উত্তর: CO(NH₂)2
19. সাধারণ উন্নতা ও চাপে 1m L জলে NH3গ্যাস দ্রবীভূত হয় প্রায়—---
(a) 1300mL
উত্তর: 700mL
20. হেবার পদ্ধতিতে অ্যামোনিয়া প্রস্তুতির সময় যে অনুঘটকটি ব্যবহৃত হয়, সেটি হল—--
(a) MnO₂
(b) প্ল্যাটিনাম চূর্ণ
(c) লোহা চূর্ণ
(d) কপার চূর্ণ
উত্তর: লোহা চূর্ণ
21. লাইকার অ্যামোনিয়াতে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ—----
(a) 35%
উত্তর: 35%
22. অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ও ক্যালশিয়াম অক্সাইডকে NO উত্তপ্ত করলে কোটি পাওয়া যায়?
(a) N2
উত্তর: NH3
23. কোনটির সাথে অ্যামোনিয়া বিক্রিয়া করে না?
(a) NaOH
উত্তর: NaOH
24. ফেরিক ক্লোরাইডের দ্রবণে নিম্নের কোনটি বাদামি বর্ণের অধঃক্ষেপ তৈরি করে?
(a) NH4CI
উত্তর: NH4OH
25. নীচের কোল্টি অ্যামোনিয়ার ধর্ম নয়?
(a) বিজারণ
(b) জলে অতিমাত্রায় দ্রাব্য
(c) বিরঞ্জন
(d) ঝাঁজালো গন্ধ
উত্তর: বিরঞ্জন
26. কালাজ্বরের ওষুধ তৈরিতে কোন্ যৌগটি প্রয়োজন হয়?
(a) ইউরিয়া
(b) সালফিউরিক অ্যাসিড
(c) নাইট্রিক অ্যাসিড
(d) হাইড্রোজেন সালফাইড
উত্তর: ইউরিয়া
27. ঘুমের ওষুধ বারবিটিউরেট প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়—----
(a) অ্যামোনিয়া
(b) নাইট্রিক অ্যাসিড
(c) হাইড্রোজেন সালফাইড
(d) ইউরিয়া
উত্তর: ইউরিয়া
28. কোন্ গ্যাসটির জলে দ্রাব্যতা সর্বোচ্চ?
(a) N₂
উত্তর: NH3
29. অ্যামোনিয়ার শিল্পোৎপাদনে অনুঘটকের উদ্দীপকরূপে ব্যবহৃত হয়—--
(a) CaO
উত্তর: k2O ও AI2O3
30. বরফ কারখানায় শীতলীকরণের কাজে ব্যবহৃত হয়—----
(a) NH3
উত্তর: NH3
31. উত্তপ্ত CuO-এর ওপর দিয়ে NH3 গ্যাস চালনা করলে, উৎপন্ন গ্যাসটি হল—--
(a) H₂
উত্তর: N2
32. ইউরিয়া প্রস্তুতির ক্ষেত্রে প্রয়োজন নয়—----
(a) NH3
উত্তর: MnO₂ অনুঘটক
33. HCI-এর সংস্পর্শে সাদা ধোঁয়ার সৃষ্টি করে—--
(a) CO2
উত্তর: NH3
34. কোন্টির সাথে জলের বিক্রিয়ায় অ্যামোনিয়া উৎপন্ন হয় না?
(a) Mg3N2
উত্তর: NO2
35. অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণে ফেনল্যালিন যোগ করলে দ্রবণের বর্ণ হয়—---
(a) লাল
(b) লালচে বেগুনি বা গোলাপি
(c) বর্ণহীন
(d) বাদামি
উত্তর: লালচে বেগুনি বা গোলাপি
36. হেবার পদ্ধতিতে অ্যামোনিয়া প্রস্তুতির সময় N2 ও H2 গ্যাসকে যে আয়তন অনুপাতে মেশানো হয়, তা হল—--
(a) 2:3
উত্তর: 1:3
37. নেসলার বিকারকের সংকেত কী?
(a) K₂HgI₄ + KOH
(b) K₂SO₄ 10H2O + KOH
(c) K₂HgCI4 + KOH
(d) K₂MgI4 + KOH
উত্তর: K₂HgI₄ + KOH
38. অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণে ফেরিক ক্লোরাইড যোগ করলে কোন্ বর্ণের অধঃক্ষেপ উৎপন্ন হয়?
(a) সাদা
(b) সবুজ
(c) বাদামি
(d) হলুদ
উত্তর: বাদামি
39. কোন্টি ভেজা লাল লিটমাসকে নীল করে?
(a) CO2
উত্তর: NH3
40. অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণের সঙ্গে ধাতব লবণের বিক্রিয়ায় নীচের কোন্টির সাদা আঠালো অধঃক্ষেপ পাওয়া যায়?
(a) Al(OH)3
(b) CuSO4
(c) Fe(OH)3
(d) NaCl
উত্তর: Al(OH)3
একটি বা দুটি শব্দে অথবা একটি বাক্যে উত্তর হাও
1. মেরুদন্ডী প্রাণীর মুত্রে থাকা কোন্ উপাদানের বিয়োজনে অ্যামোনিয়া গ্যাস মুক্ত হয়?
উত্তরঃ ইউরিয়ার বিয়োজনে অ্যামোনিয়া গ্যাস মুক্ত হয়।
2. অ্যামোনিয়া-ঘটিত খনিজ পদার্থ প্রকৃতিতে পাওয়া যায় না কেন?
উত্তরঃ অ্যামোনিয়া-ঘটিত খনিজ পদার্থ প্রকৃতিতে পাওয়া যায় না কারণ অ্যামোনিয়া ও অ্যামোনিয়াম লবণগুলি জলে অতিমাত্রায় দ্রবীভূত হয়।
3. ক্ষারীয় বায়ু কোন্ প্যাসকে বলা হয়।
•উত্তরঃ অ্যামোনিয়া গ্যাসকে ক্ষারীয় বায়ু বা alkaline air বলা হয়।
4. পরীক্ষাগারে অ্যামোনিয়া গ্যাস প্রস্তুতিতে কী কী রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়?
উত্তরঃ শুষ্ক অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড (NH4Cl) ও শুষ্ক কলিচুন [Ca (OH)2 ] ব্যবহার করা হয়।
5. পরীক্ষাগারে অ্যামোনিয়া গ্যাস প্রস্তুতির নীতি উল্লেখ করো।
উত্তরঃ পরীক্ষাগারে 1:3 ভর অনুপাতে নেওয়া অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড (NH4Cl) ও কলিচুন [Ca (OH)2] এর শুষ্ক মিশ্রণকে উত্তপ্ত করে অ্যামোনিয়া গ্যাস প্রস্তুত করা হয়।
6. পরীক্ষাগারে অ্যামোনিয়া গ্যাস সংগ্রহ করা হয় বায়ুর কী অপসারণ দ্বারা?
উত্তরঃ বায়ুর নিম্ন অপসারণ দ্বারা সংগ্রহ করা হয়।
7. অ্যামোনিয়া শুষ্ক করতে কোন্ রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহৃত হয়?
উত্তরঃ পোড়াচুন (CaO) ব্যবহৃত হয়।
৪. জলীয় বাষ্প-যুক্ত অ্যামোনিয়া গ্যাস ও ফসফরাস পেন্টক্সাইডের (P2O5) বিক্রিয়ায় কী উৎপন্ন হয়?
উত্তরঃ অ্যামোনিয়াম ফসফেট [ (NH4)3 PO4] উৎপন্ন হয়।
9. অনার্স CaCI2 অ্যামোনিয়াকে শোষণ করে যে যুত যৌগটি গঠন করে তার সংকেত কী?
উত্তরঃ যুত যৌগটির সংকেত হল CaCl₂ . 8NH3।
10. বাণিজ্যিকভাবে অ্যামোনিয়া প্রস্তুত করার পদ্ধতিটির নাম লেখো।
উত্তরঃ হেবার পদ্ধতি
11. হেবার পদ্ধতিতে উদ্দীপক হিসেবে AI2O3ও K2O চূর্ণের মিশ্রণের পরিবর্তে আর কী ব্যবহার করা যায়?
উত্তরঃ এক্ষেত্রে AI2O3ও K2O চূর্ণের মিশ্রণের পরিবর্তে মলিবডেনাম (Mo) চুর্ণ ব্যবহার করা যায়।
12. হেবার পদ্ধতিতে অ্যামোনিয়া প্রস্তুতির রাসায়নিক বিক্রিয়াটি তাপমোচী না তাপগ্রাহী?
উত্তরঃ বিক্রিয়াটি হল তাপমোচী রাসায়নিক বিক্রিয়া।
13. ম্যাগনেশিয়াম নাইট্রাইড ও জলের বিক্রিয়ায় কোন্ গ্যাস উৎপন্ন হয়?
উত্তরঃ অ্যামোনিয়া গ্যাস উৎপন্ন হয়।
14. অ্যামোনিয়ার বাস্পনসহ কত?
উত্তরঃ অ্যামোনিয়ার ব্যস্পসনত্ব ৪.5।
15. তরল অ্যাসোনিয়া বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ সাধারণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপে ও 33.4°C, উন্নতায় অ্যাসোসিয়া সাইস তরলে পরিণত হয়, একেই তরল অ্যামোনিয়া বলে।
16. সোয়ারা পরীক্ষা দ্বারা অ্যাসোনিয়ার কোন কোন ধর্ম প্রমাণিত এর?
উত্তরঃ (1) অ্যামোনিয়া জলে অত্যন্ত দ্রাব্য, (2) এর জলীয় দ্রবণ ক্ষারদর্শী।
17. ভেজা লাল লিটমাসকে নীল করে এরূপ একটি গ্যাসের নাম লেখো।
উত্তরঃ এরূপ একটি প্যাস হল অ্যামোনিয়া (NH3)।
18. উপযুক্ত লিটমাস কাগজের সাহায্যে দেখাও যে, অ্যাসোনিতার জলীত প্রবণ ক্ষারীয় প্রকৃতির।
উত্তরঃ অ্যামোনিয়ার জলীয় প্রবণে একটুকরো লাল লিটমাস কাগজ ডোবালে কাগজের বর্ণ নীল হয়ে যায়, এই পর্যবেক্ষণ থেকে বোঝা যায় অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণ ক্ষারীয় প্রকৃতির।
19. HCI অ্যাসিডে সিস্ত কাচদণ্ড কোন গ্যাসের সংস্পর্শে এলে সাদা ধোঁয়ার সৃষ্টি হবে?
উত্তরঃ HCI অ্যাসিডে সিস্ত কাদেও অ্যাসোনিয়া (NH₃) প্যাসের সংস্পর্শে এলে সাদা ধোঁয়ার সৃষ্টি হবে।
20. উত্তপ্ত CuO-এর উপর দিয়ে কোন গ্যাস চালনা করলে N₂ উৎপন্ন হয়?
উত্তরঃ অ্যামোনিয়া (NH3) গ্যাস চালনা করলে N2 উৎপন্ন হয়।
21. অ্যামোনিয়া গ্যাসকে অক্সিজেনের উপস্থিতিতে দহন করলে কোন গ্যাস পাওয়া যায়?
উত্তরঃ নাইট্রোজেন গ্যাস পাওয়া যায়।
22. Na-এর সঙ্গে NH3-এর বিক্রিয়ায় কোন্ গ্যাস উৎপন্ন হয়?
উত্তরঃ Na -এর সঙ্গে NH3-এর বিক্রিয়ায় H2প্যাস উৎপন্ন হয়।
23. অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইডের জলীয় দ্রবণে অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণ যোগ করলে যে অধঃক্ষেপ পড়ে তার সংকেত লেখো।
উত্তরঃ অধঃক্ষেপটির সংকেত AI(OH)3 ।
24. ফেরিক ক্লোরাইডের জলীয় দ্রবণে অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণ যোগ করলে যে অধঃক্ষেপ পড়ে তার সংকেত কী?
উত্তরঃ অধঃক্ষেপটির সংকেত Fe (OH)3 ।
25. কপার সালফেট দ্রবণে অতিরিক্ত জলীয় অ্যামোনিয়া যোগ করলে দ্রবণের বর্ণ কী হবে?
উত্তরঃ অ্যামোনিয়া গ্যাস উৎপন্ন হয়।
26. পটাশিয়াম মারকিউরিক আয়োডাইডের (K2HgI4) ক্ষারীয় দ্রবণকে কী বলা হয়?
উত্তরঃ নেসলার বিকারক বলা হয়।
27. নেসলার বিকারকের সাহায্যে কোন্ গ্যাস শনাক্ত করা হয়?
উত্তরঃ নেসলার বিকারকের সাহায্যে অ্যামোনিয়া গ্যাস শনাক্ত করা হয়।
28. নেসলার দ্রবণের সঙ্গে অ্যামোনিয়া বিক্রিয়া করে কোন্ বর্ণের দ্রবণ তৈরি করে?
অনুরূপ প্রশ্ন, নেসলার বিকারকের সঙ্গে অ্যামোনিয়ার বিক্রিয়ায় কী রং উৎপন্ন হয়?
উত্তরঃ তামাটে বাদামি বর্ণের দ্রবণ তৈরি করে।
29. অ্যামোনিয়ার সঙ্গে অতিরিক্ত ক্লোরিনের বিক্রিয়ায় যে বিস্ফোরকধর্মী তৈলাক্ত তরল পদার্থটি উৎপন্ন হয় তার নাম ও সংকেত লেখো।
উত্তরঃ উৎপন্ন বিস্ফোরকধর্মী তৈলাক্ত তরল পদার্থটি হল নাইট্রোজেন ট্রাইক্লোরাইড যার সংকেত NCI₃।
30. অ্যামোনিয়া থেকে প্রস্তুত করা হয় এমন একটি অজৈব সারের নাম উল্লেখ করো।
উত্তরঃ অ্যামোনিয়াম ফসফেট [(NH4)₃ PO₄]
31. নাইট্রোজেনের একটি যৌগের নাম লেখো যা হিমায়করূপে ব্যবহৃত হয়।
উত্তরঃ অ্যামোনিয়া (তরল অ্যামোনিয়া) হিমায়করূপে ব্যবহৃত হয়।
32. তরল অ্যামোনিয়ার একটি ব্যবহার লেখো।
উত্তরঃ এটি বরফ তৈরির কারখানায় হিমায়করূপে ব্যবহৃত হয়।
33. কী কারণে তরল অ্যামোনিয়া হিমায়করূপে ব্যবহৃত হয়?
উত্তরঃ তরল অ্যামোনিয়ার বাষ্পীভবনের লীনতাপের মান খুব বেশি হওয়ায় এটি হিমায়করূপে বহুল ব্যবহৃত হয়।
34. বরফ কারখানায় বা কোনো স্টোরেজে শীতলীকরণের কাজে কোন্ গ্যাসটি ব্যবহৃত হয়?
উত্তরঃ অ্যামোনিয়া (NH3)
35. স্মেলিং সল্ট তৈরি করতে কোন্ গ্যাস ব্যবহৃত হয়?
উত্তরঃ অ্যামোনিয়া (NH3)
36. লাইকার অ্যামোনিয়া কী লেখো।
উত্তরঃ 0.88 আপেক্ষিক গুরুত্ববিশিষ্ট অ্যামোনিয়ার গাঢ় জলীয় দ্রবণকে লাইকার অ্যামোনিয়া বলে, এক্ষেত্রে উচ্চ চাপে প্রায় 35% অ্যামোনিয়া গ্যাস জলে দ্রবীভূত থাকে।
37. লাইকার অ্যামোনিয়ার আপেক্ষিক গুরুত্ব কত?
উত্তরঃ লাইকার অ্যামোনিয়ার আপেক্ষিক গুরুত্ব 0.88 ।
38. নাইট্রোজেন-ঘটিত একটি জৈব সারের নাম ও সংকেত লেখো।
উত্তরঃ সারটি হল ইউরিয়া যার সংকেত H₂NCONH₂ |
39. ইউরিয়া উৎপাদনে দুটি পদার্থ ব্যবহৃত হয়। একটি অ্যামোনিয়া, অপরটি কী?
উত্তরঃ ইউরিয়া উৎপাদনে ব্যবহৃত দুটি পদার্থের মধ্যে একটি হল অ্যামোনিয়া এবং অপরটি হল কার্বন ডাইঅক্সাইড।
40. ইউরিয়ার উৎপাদনে ব্যবহৃত দুটি পদার্থের মধ্যে একটি কার্বন ডাইঅক্সাইড, অপরটি কী?
উত্তরঃ ইউরিয়া উৎপাদনে ব্যবহৃত দুটি পদার্থের মধ্যে একটি কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং অপরটি অ্যামোনিয়া।
41. তরল অ্যামোনিয়া ও কার্বন ডাইঅক্সাইড থেকে কোন্ শর্তে ইউরিয়া উৎপন্ন করা হয়?
উত্তরঃ প্রায় 175 বায়ুমণ্ডলীয় চাপে ও 170-190°C তাপমাত্রায় তরল অ্যামোনিয়া ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের বিক্রিয়া দ্বারা ইউরিয়া উৎপন্ন করা হয়।
42. ইউরিয়ার একটি ব্যবহার লেখো।
উত্তরঃ কৃষিক্ষেত্রে নাইট্রোজেন-ঘটিত জৈব সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
43. কালাজ্বরের ওষুধ তৈরিতে কোন্ নাইট্রোজেন-যুক্ত জৈব যৌগ ব্যবহৃত হয়? [
উত্তরঃ নাইট্রোজেন-যুক্ত জৈব যৌগটি হল ইউরিয়া।
শূন্যস্থান পূরণ করো
1. 1774 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী—---------- অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড ও চুনের মিশ্রণকে উত্তপ্ত করে প্রথম অ্যামোনিয়া গ্যাস প্রস্তুত করেন।
উত্তরঃ প্রিস্টলি
2. অ্যামোনিয়া—--------দার্থ হওয়ায় গাঢ় H₂SO₄ ব্যবহার করে অ্যামোনিয়াকে জলীয় বাষ্প মুক্ত করা যায় না।
উত্তরঃ ক্ষারীয়
3. গাঢ় H₂SO₄ অ্যামোনিয়া গ্যাসের সঙ্গে বিক্রিয়া করে—-------- লবণ উৎপন্ন করে।
উত্তরঃ (NH4)2SO4
4. অনার্দ্র CaCl₂ অ্যামোনিয়ার সঙ্গে বিক্রিয়া করে—------ যৌগ গঠন করে।
উত্তরঃ যুত
5. পোড়াচুন—------- প্রকৃতির পদার্থ হওয়ায় NH₃-কে শুষ্ক করতে একে ব্যবহার করা যায়।
উত্তরঃ ক্ষারকীয়
6. হেবার পদ্ধতিতে NH₃ -এর শিল্পোৎপাদনের সময় সন্তোষজনক উন্নতা—------ এবং—----------চাপ I
উত্তরঃ 450°C, 200 atm
7. অ্যামোনিয়া গ্যাস বায়ু অপেক্ষা—----------I
উত্তরঃ হালকা
৪. অ্যামোনিয়া গ্যাসের বাষ্পঘনত্ব—---------I
উত্তরঃ 8.5
9. তরল অ্যামোনিয়ার স্ফুটনাঙ্ক—-----------এবং কঠিন অবস্থায় অ্যামোনিয়ার গলনাঙ্ক—------I
উত্তরঃ -33.4°C,-77.7°C
10. STP-তে 1 mL জলে—------ mL অ্যামোনিয়া গ্যাস দ্রবীভূত হয়।
উত্তরঃ 700
11. অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণে এক ফোঁটা ফেনলস্থ্যালিন যোগ করলে দ্রবণের বর্ণ—--------হয়।
উত্তরঃ গোলাপি
12. অ্যামোনিয়া মৃদু —------ধর্মী হওয়ায় অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়ায় এটি অ্যামোনিয়াম লবণ উৎপন্ন করে।
উত্তরঃ ক্ষার
13. সোডিয়ামের সঙ্গে অ্যামোনিয়ার বিক্রিয়ায়—------তৈরি হয়।
উত্তরঃ সোডামাইড
14. কপার সালফেটের জলীয় দ্রবণে অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণ যোগ করলে উৎপন্ন যৌগটি অতিরিক্ত NH4OH -এ দ্রবীভূত হয়ে গাঢ় নীল বর্ণের যে জটিল লবণটি উৎপন্ন করে তার সংকেত—------I
উত্তরঃ [Cu(NH3)4 ]SO4
15. তরল অ্যামোনিয়ার বাষ্পীভবনের লীনতাপের মান খুব—------------I
উত্তরঃ বেশি
16. অ-জলীয় দ্রাবক হিসেবে—---------ব্যবহার করা যায়।
উত্তরঃ তরল অ্যামোনিয়া
17. ইউরিয়ার আরও একটি নাম হল—----------I
উত্তরঃ কার্বামাইড
সত্য/মিথ্যা নির্বাচন করো
1. বিজ্ঞানী প্রিস্টলি অ্যামোনিয়া গ্যাসের নামকরণ করেছিলেন ক্ষারীয় বায়ু বা alkaline air।
উত্তরঃ সত্য
2. বিজ্ঞানী ডেভি অ্যামোনিয়ার সংকেত নির্ণয় করেন।
উত্তরঃ সত্য
3. পরীক্ষাগারে অ্যামোনিয়া গ্যাস প্রস্তুতিতে অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইডের জলীয় দ্রবণে কলিচুন যোগ করে উত্তপ্ত করা হয়।
উত্তরঃ মিথ্যা
4. গ্যাসকে শুষ্ক বরফে পোড়াচুন ব্যবহার করা হয়।
উত্তরঃ সত্য
উত্তরঃ মিথ্যা
6. অ্যামোনিয়া তীব্র ঝাঁজালো গন্ধযুক্ত গ্যাসীয় পদার্থ।
উত্তরঃ সত্য
7. অ্যামোনিয়া জলে খুব একটা দ্রাব্য নয়।
উত্তরঃ মিথ্যা
৪. উত্তপ্ত সোডিয়ামের ওপর দিয়ে অ্যামোনিয়া গ্যাস চালনা করলে হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন হয়।
উত্তরঃ সত্য
9. ফেরিক হাইড্রক্সাইড [Fe (OH)3] যৌগটি হল সাদা রং-এর জেলির মতো থকথকে একটি পদার্থ।
উত্তরঃ মিথ্যা
10. অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণের সাথে অতিরিক্ত CuSO, এর জলীয় দ্রবণের বিক্রিয়ায় নীলাভ সাদা অধঃক্ষেপ পড়ে।
উত্তরঃ সত্য
11. কিউপ্রিক সালফেটের জলীয় দ্রবণের মধ্যে অতিরিক্ত পরিমাণে অ্যামোনিয়াম হাইড্রক্সাইড দ্রবণ যোগ করলে ঘন নীল বর্ণের দ্রবণ পাওয়া যায়।
উত্তরঃ সত্য
12. NH3গ্যাস শোষণে নেসলার দ্রবণ বাদামি হয়ে যায়।
উত্তরঃ সত্য
13. লাইকার অ্যামোনিয়া হল অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণ।
উত্তরঃ সত্য
14. লাইকার অ্যামোনিয়া আম্লিক।
উত্তরঃ মিথ্যা
উত্তরঃ মিথ্যা
16. তরল অ্যামোনিয়া দ্রাবক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
উত্তরঃ সত্য
17. অ্যামোনিয়া লিকেজ হলে প্রথমেই চোখে ভালো করে জলের ঝাপটা দিতে হবে।
উত্তরঃ সত্য
18. হেবার পদ্ধতিতে অ্যামোনিয়া প্রস্তুতির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত মূল রাসায়নিক পদার্থ হল অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট।
উত্তরঃ মিথ্যা
19. হেবার পদ্ধতিতে 2 atm চাপের প্রয়োজন।
উত্তরঃ মিথ্যা
20. N2 ও H2 থেকে NH3 এর শিল্প প্রস্তুতিতে আয়রন চূর্ণ অনুঘটক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
উত্তরঃ সত্য
21. ইউরিয়া প্রস্তুতির শিল্প পদ্ধতির নাম হেবার পদ্ধতি।
উত্তরঃ সত্য
22. ইউরিয়া একটি জৈব সার।
উত্তরঃ সত্য
23. সেলোফেন প্রস্তুতিতে ইউরিয়া ব্যবহৃত হয়।
উত্তরঃ সত্য
24. রেয়ন প্রস্তুতিতে ইউরিয়া ব্যবহৃত হয়।
উত্তরঃ সত্য
সংক্ষিপ্ত / দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর
1. পরীক্ষাগারে হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস প্রস্তুতির পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর: দীর্ঘনল ফানেল ও সমকোণে বাঁকানো নির্গম নল যুক্ত একটি উলফ্ বোতলে কিছু পরিমাণ FeS -এর টুকরো নেওয়া হয়। এরপর বোতলে এমন পরিমাণে জল যোগ করা হয় যাতে FeS-এর টুকরো ও দীর্ঘনল ফানেলের শেষপ্রান্ত জলে ডুবে থাকে। নির্গম নলের শেষপ্রান্তকে খাড়াভাবে দাঁড় করানো একটি ফাঁকা গ্যাসজারের প্রায় নীচ পর্যন্ত প্রবেশ করানো হয়। তারপর লঘু H₂SO₄ দীর্ঘনল ফানেলের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে ঢালা হয়। এই অ্যাসিড FeS-এর সংস্পর্শে আসা মাত্রই বিক্রিয়া শুরু হয় এবং H₂S গ্যাস উৎপন্ন হয়ে নির্গম নল দিয়ে বেরিয়ে আসে। বায়ুর ঊর্ধ্ব অপসারণ দ্বারা এই গ্যাসকে গ্যাসজারে সংগ্রহ করা হয়।
FeS + H2SO4 → FeSO4 + H2S↑
2. H₂S গ্যাস প্রস্তুতি-সংক্রান্ত প্রদত্ত তথ্যগুলি উল্লেখ করো- বিক্রিয়ার নীতি ও শর্ত, বিক্রিয়ার সমীকরণ, গ্যাস সংগ্রহ। অনুরূপ প্রশ্ন, কী ঘটে সমীকরণসহ লেখো যখন ফেরাস সালফাইডে লঘু H2SO4 যোগ করা হয়।
উত্তর: নীতি ও শর্ত: সাধারণ উয়তায় ফেরাস সালফাইডের (FeS) সঙ্গে লঘু সালফিউরিক অ্যাসিডের (H2SO4) বিক্রিয়ায় পরীক্ষাগারে হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস প্রস্তুত করা হয়।
গ্যাস সংগ্রহ: হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসকে বায়ুর ঊর্ধ্ব অপসারণ দ্বারা গ্যাসজারে সংগ্রহ করা হয়।
3. পরীক্ষাগারে H2S গ্যাস প্রস্তুতির সময় কী কী সতর্কতা নেওয়া দরকার?
উত্তর: ① উলফ বোতলে H2S প্রস্তুতিতে H2S এর নির্গমন নিয়ন্ত্রণ করা যায় না বলে ফেরাস সালফাইডের সঙ্গে প্রয়োজনমতো অল্প অল্প করে লঘু H2SO4 যোগ করতে হবে। ② H2S একটি বিষাক্ত গ্যাস যা প্রশ্বাসের সঙ্গে আমাদের দেহে প্রবেশ করলে শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাই পরীক্ষাগারে H2S প্রস্তুতির বিক্রিয়াটি খুব সতর্কতার সঙ্গে সংঘটিত করা উচিত, যাতে উৎপন্ন H2S গ্যাস পরীক্ষাগারের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে না পারে। ও নির্গম নলের শেষপ্রান্ত গ্যাসজারের তলদেশ পর্যন্ত প্রবেশ করাতে হবে।
উত্তর: H2S ঠান্ডা জলে দ্রাব্য হওয়ায় এটিকে ঠান্ডা জলের অপসারণ দ্বারা সংগ্রহ করা হয় না। কিন্তু H2S গ্যাস গরম জলে অদ্রাব্য ও জলের তুলনায় হালকা বলে এটিকে গরম জলের নিম্ন অপসারণ দ্বারা সংগ্রহ করা হয়। আবার H2S বায়ুর চেয়ে 1.2 গুণ ভারী হওয়ায় একে বায়ুর ঊর্ধ্ব অপসারণ দ্বারা গ্যাসজারে সংগ্রহ করা হয়।
5. পরীক্ষাগারে উৎপন্ন H2S গ্যাসকে কীসের সাহায্যে শুষ্ক করা হয়? এই গ্যাসকে জলীয় বাষ্প মুক্ত করতে গাঢ় H2SO4অনার্ড CaCl₂ বা পোড়াচুন (CaO) ব্যবহার করা হয় না কেন?
উত্তর: পরীক্ষাগারে উৎপন্ন H2S গ্যাসকে ফসফরাস পেন্টক্সাইড
(P2O5) -এর মধ্য দিয়ে চালনা করে শুষ্ক করা হয়। [ পরীক্ষাগারে উৎপন্ন H2S গ্যাসকে জলীয় বাষ্প মুক্ত করতে গাঢ়
H2SO4 ব্যবহার করা হলে H2S , গাঢ় H2SO4 দ্বারা জারিত হয়ে সালফারে (S) পরিণত হয়। H2S + H2SO4 S + SO4 + 2H2O অপরদিকে, H₂S, CaCl₂-এর সঙ্গে বিক্রিয়া করে ক্যালশিয়াম সালফাইড (CaS) গঠন করে এবং HCI গ্যাস নির্গত হয়।
CaCI2 + H2S → CaS + 2HCl↑
জলের উপস্থিতিতে H₂S মৃদু অম্লধর্মী হওয়ায় পোড়াচুন বা ক্যালশিয়াম অক্সাইডের সাথে বিক্রিয়া করে ক্যালশিয়াম সালফাইড (CaS) লবণ গঠন করে: CaO + H2S → CaS + H2O
6 .পরীক্ষাগারে উৎপন্ন H₂S গ্যাসকে শুষ্ক করতে P2O5 যৌগ ব্যবহারের কারণ কী?
উত্তর: ফসফরাস পেন্টক্সাইড (P2O5) একটি আম্লিক অক্সাইড এবং H₂S গ্যাসও অম্লধর্মী। ফলে এরা পরস্পরের সাথে কোনো বিক্রিয়া করে না। তাই পরীক্ষাগারে উৎপন্ন H₂S গ্যাসকে শুষ্ক করতে P2O5 ব্যবহার করা হয়।
7. পরীক্ষাগারে উৎপন্ন H₂S-কে জলীয় বাষ্প মুক্ত করতে নিরুদক হিসেবে কোনো ক্ষারীয় পদার্থ ব্যবহার করা যায় না কেন?
উত্তর: H₂S একটি অম্লধর্মী গ্যাস। তাই ক্ষারীয় নিরুদকের (যেমন- CaO) সঙ্গে এটি বিক্রিয়া করতে সক্ষম। স্বাভাবিকভাবেই পরীক্ষাগারে উৎপন্ন H₂S গ্যাসকে জলীয় বাষ্প মুক্ত করতে ক্ষারীয় নিরুদক পদার্থ ব্যবহার করা যায় না।
৪ .কী ধরনের গ্যাস প্রস্তুতিতে কিপ্ যন্ত্র ব্যবহার করা যায়? কিপ্ যন্ত্র ব্যবহারের সুবিধা কী?
পরীক্ষাগারে কিপ্ যন্ত্র ব্যবহার করে প্রয়োজনমতো কোনো গ্যাস প্রস্তুত করা যায় এবং প্রয়োজন শেষ হলেই গ্যাস উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া যায়।
9. কিপ্ যন্ত্রের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।
উত্তর: কিপ যন্ত্র হল পরীক্ষাগারে ব্যবহৃত কাচের তৈরি একটি যন্ত্র যার দুটি অংশ আছে। প্রথম বা ওপরের অংশটি একটি পূর্ণগোলক যার নীচের দিকে একটি দীর্ঘনল যুক্ত থাকে। দ্বিতীয় বা নীচের অংশে একটি পূর্ণগোলক ও একটি অর্ধগোলক যুক্ত থাকে। এই দুটি অংশ এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে ওপরের অংশটি নীচের অংশের ওপর দৃঢ় ও বায়ু-নিরুদ্ধভাবে বসে এবং এই অবস্থায় দীর্ঘনলটির শেষপ্রান্ত নীচের অর্ধগোলকের প্রায় তলা অবধি পৌঁছায়। মাঝের পূর্ণগোলকে একটি পার্শ্বমুখ থাকে, যার সাথে একটি স্টপকক্-যুক্ত নির্গম নল কর্কের সাহায্যে লাগানো থাকে। এই স্টপকক্ খুললে যন্ত্রটিতে উৎপন্ন গ্যাস বাইরে আসে। নীচের অর্ধগোলকেও কাচের ছিপি আটকানো একটি পার্শ্বমুখ থাকে। এই মুখ দিয়ে ব্যবহৃত অ্যাসিডকে প্রয়োজনমতো বাইরে আনা যায়। একেবারে ওপরের গোলকের মুখে আটকানো কর্কের মধ্যে দিয়ে একটি দীর্ঘনল ফানেল যুক্ত থাকে। এর সাহায্যে বিক্রিয়ক হিসেবে ব্যবহৃত অ্যাসিডকে যন্ত্রের মধ্যে ঢালা হয়।
10. কিপ্ যন্ত্রে H₂S প্রস্তুতি সংক্ষেপে বর্ণনা করো। অনুরূপ প্রশ্ন, কিপ্ যন্ত্রে প্রস্তুত করা যায় এমন একটি গ্যাসের নাম করো। গ্যাসটি প্রস্তুতির বিক্রিয়ার সমিত রাসায়নিক সমীকরণ লেখো।
উত্তর: নিম্নলিখিতভাবে কিপ্ যন্ত্রে H₂S গ্যাস প্রস্তুত করা হয়—(FeS)-এর টুকরো রেখে ওপরের গোলকের ফানেলের মধ্য দিয়ে লঘু H2SO4 ঢালা হয়।
① কিপ্যন্ত্রের মাঝের গোলকে ফেরাস সালফাইড ② এই অ্যাসিড ওপরের গোলকের দীর্ঘনল বেয়ে নীচের অর্ধগোলকে আসে এবং অর্ধগোলক পূর্ণ হলে মাঝের গোলকে প্রবেশ করে। অ্যাসিডটি FeS-এর সংস্পর্শে এসে H2S গ্যাস উৎপন্ন করে, যা স্টপকক্ লাগানো নল দিয়ে বের হয়। ④ স্টপকটি বন্ধ করলে উৎপন্ন গ্যাস বেরিয়ে যেতে না পেরে মাঝের গোলকে থাকা অ্যাসিডের ওপর চাপ দেয়। ফলে অ্যাসিড নীচের অর্ধগোলকে নেমে যায় এবং দীর্ঘনল বেয়ে ওপরের গোলকে কিছুটা উঠে আসে। এর ফলে অ্যাসিড ও FeS - এর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয় এবং H2S এর উৎপাদন বন্ধ হয়। ⑤ স্টপকটি খুলে দিলে মাঝের গোলকে জমে থাকা H2S গ্যাস বেরিয়ে যায়। চাপ কমে যাওয়ায় ওপরের গোলক থেকে অ্যাসিড আবার নীচের অর্ধগোলকে নেমে আসে এবং সেখানে অ্যাসিডের তলের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে একসময় সংস্পর্শে আসে এবং H2S উৎপন্ন হতে শুরু করে।
বিক্রিয়ার সমীকরণ: FeS + H₂SO₄ → FeSO4 + H2S↑
চিত্র 5: কিপ্ যন্ত্রের সাহায্যে H_{2}*S প্রস্তুতি
11. H2S প্রস্তুতিতে গাঢ় H2SO4 ব্যবহার করা হয় না কেন?
উত্তর: গাঢ় H2SO4 একটি তীব্র জারক অ্যাসিড। ফলে এটি FeS-এর সাথে বিক্রিয়ায় উৎপন্ন H2S কে সালফারে জারিত করে ও নিজে SO2 - তে বিজারিত হয়। এর দরুন H2S গ্যাস পাওয়া যায় না। এইজন্য H2S প্রস্তুতিতে গাঢ় H2SO4 ব্যবহার করা হয় না।
FeS + H₂SO₄ (গাঢ়) → FeSO4 + H₂S
H2S + H2SO4(গাঢ়) SO2 + S+ 2H2O
12. H2S প্রস্তুতিতে HNO3 ব্যবহার করা হয় না কেন?
উত্তর: নাইট্রিক অ্যাসিড জারক পদার্থ হওয়ায় এটি উৎপন্ন হাইড্রোজেন সালফাইডকে সালফারে জারিত করে ও নিজে NO2তে বিজারিত হয়।
FeS + 2HNO3 → Fe(NO3)2 + H2S
H2S + 2HNO3 → S↓ + 2NO2↑+2H2O
13. পারদের অপসারণ দ্বারা পরীক্ষাগারে উৎপন্ন H2S কে সংগ্রহ করা হয় না কেন? অনুরূপ প্রশ্ন, H2S কে পারদের ওপর সংগ্রহ করা যাবে কি? যুক্তি দাও।
উত্তর: H2S পারদের সাথে বিক্রিয়া করে কালো বর্ণের মারকিউরিক সালফাইড HgS) ও হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন করে। তাই পারদের অপসারণ দ্বারা পরীক্ষাগারে উৎপন্ন H2S কে সংগ্রহ করা হয় না।
H2S + Hg HgS + H2 ↑
14.পরীক্ষাগারে প্রস্তুত H₂S গ্যাস থেকে কীভাবে অ্যাসিড বাষ্প দূর করবে?
উত্তর: পরীক্ষাগারে প্রস্তুত H₂S গ্যাসকে সোডিয়াম হাইড্রোজেন সালফাইডের সম্পৃক্ত দ্রবণের মধ্য দিয়ে চালনা করে অ্যাসিড (H₂SO₄) বাষ্প মুক্ত করা হয়।
H2SO4 + 2NaHS → 2Na22SO4 + 2H2S↑
(অ্যাসিড বাষ্প)
15. পরীক্ষাগারে প্রস্তুত হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসে কী কী অশুদ্ধি থাকে? এই অশুদ্ধিগুলি কীভাবে দূর করা যায়?
উত্তর: পরীক্ষাগারে প্রস্তুত হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসের সাথে অশুদ্ধি হিসেবে সামান্য অ্যাসিড বাষ্প, জলীয় বাষ্প ও হাইড্রোজেন গ্যাস মিশে থাকে।
সোডিয়াম হাইড্রোজেন সালফাইডের সম্পৃক্ত দ্রবণের মধ্য দিয়ে H₂S গ্যাস পরিচালনা করে অ্যাসিড বাষ্প এবং P2O5 -এর মধ্য দিয়ে পরিচালনা করে জলীয় বাষ্প দূর করা যায়। এরপর গ্যাসটিকে কঠিন কার্বন ডাইঅক্সাইড বা শুষ্ক বরফ দিয়ে ঠান্ডা করলে হাইড্রোজেন সালফাইড তরলে পরিণত হয় এবং হাইড্রোজেন গ্যাস বেরিয়ে যায়। তরল হাইড্রোজেন সালফাইডকে সামান্য উত্তপ্ত করলে সেটি পুনরায় গ্যাসে পরিণত হয় যাকে শুষ্ক গ্যাসজারে বায়ুর ঊর্দ্ধ অপসারণ দ্বারা সংগ্রহ করা যায়।