Chapter 15

ধবনিতত্ত্ব

--------------------------

MCQ

1, বাধ্বনির উচ্চারণগত, শ্রুতিগত ও ধ্বনিতরঙ্গঙ্গত বিশ্লেষণ করে-

(a) ধ্বনিতত্ত্ব

(b) ধ্বনিবিজ্ঞান   

(c) ধ্বনিপরিবর্তনঘ

(d) রূপতত্ত্ব


2. ভাষার বাধ্বনিগুলি সেই ভাষায় কীভাবে ব্যবহৃত হয়, তা বিশ্লেষণ করে- 

(a) ধ্বনিতত্ত্ব   

(b) ধ্বনিবিজ্ঞান

(c) ধ্বনিপরিবর্তন

(d) বাক্যতত্ত্ব


3, বাধ্বনি প্রধানত কয় প্রকার?

(a) দুই   

(b) তিন

(c) চার

(d) পাঁচ


4. বিভাজ্য ধ্বনিকে ক-টি ভাগে ভাগ করা যায়

(a) দুটি   

(b) তিনটি

(c) চারটি

(d) পাঁচটি


5. দৈর্ঘ্য, শ্বাসাঘাত, সুরতরঙ্গ, যতি হল-

(a) বিভাজ্য ধ্বনি

(b) অবিভাজ্য ধ্বনি   

(c) বাধ্বনি

(d) সহধ্বনি


6. বাংলায় মৌলিক স্বরধ্বনি আছে ক-টি

(a) ৬টি

(b) ৭টি   

(c) ৮টি

(d) ১১টি


7.বাংলা উচ্চারণে অর্ধস্বরের সংখ্যা-

(a) তিনটি

(b) চারটি   

(c) পাঁচটি

(d) ছয়টি


8.বাংলায় অনুনাসিক স্বরধ্বনি আছে ক-টি

(a) 4টি

(b) ৭টি   

(c) ৮টি

(d) ১১টি


9. বাংলায় ব্যঞ্জনকানি আছে কাটি

(a) ৩০টি   

(b) ২৮টি

(c) ৩৬টি

(d) ৩৯টি


10. ' ধ্বনিটি

(a) পার্শ্বিক

(b) নাসিক্য

(c) কম্পিত

(d) উন্না   


11. '' ধ্বনিটি-

(a) পার্শ্বিক

(b) নাসিক্য

(c) কম্পিত

(d) উষ্ম  


12. 'ম্//'ত্' ধ্বনিটি-

(a) পার্শ্বিক

(b) কম্পিত

(c) তাড়িত

(d) নাসিক্য   


13. ‘ব়্’/ ধ্বনিটি

(a) কম্পিত   

(b) পার্শ্বিক

(c) তাড়িত

(d) নাসিক্য


14. 'ডু/চু' ধ্বনিটি

(a) কম্পিত

(b) পার্শ্বিক

(c) তাড়িত   

(d) নাসিক্য 


15. দুটি ভিন্ন শব্দেব় মধ্যে নূনতম উচ্চাব়ণ পাৰ্থক্য থাকলে, তাকে বলে– 

(a) মুক্ত বৈচিত্ৰ্য

(b) পব়িপূব়ক অবস্থান

(c) ন্যূনতম শব্দজোড়   

(d) ধ্বনিব় সমাবেশ


16. স্বরধ্বনির সঙ্গে অর্ধস্বরের সমাবেশে তৈরি হয়-

(a) যুগ্মধ্বনি

(b) গুচ্ছধ্বনি 

(c) যুক্তধ্বনি 

(d) দ্বিস্বরধ্বনি   


17. একদলের অন্তর্গত ব্যঞ্জন-সমাবেশকে বলে- 

(a) যুগ্মধ্বনি

(b) গুচ্ছধ্বনি

(c) যুক্তধ্বনিঘ   

(d) দ্বিস্বরধ্বনি


18. মাঝে দলসীমা থাকা ব্যঞ্জন-সমাবেশকে বলে- 

(a) যুগ্মধ্বনি 

(b) গচ্ছধ্বনি   

(c) যুক্তধ্বনি

(d) দ্বিস্বরধ্বনি


19. বাংলায় দুটি ব্যঞ্জনের সমাবেশে তৈরি গুচ্ছধ্বনির সংখ্যা কমপক্ষে 

(a) ১০০

(b) ২০   

(c) ২৮

(a) ১৮


20. শব্দের শুরুতে বা শেষে থাকে যে ব্যঞ্জন-সমাবেশ, তা- 

(a) যুগ্মধ্বনি

(b) গুচ্ছধ্বনি

(c) যুক্তধ্বনি    

(d) সহধ্বনি


21. তৎসম বাংলা যুক্তধ্বনির সংখ্যা হল- 

(a) ২০০

(b) ২৮   

(c) ১৮

(d) ১০০


22.'' ধ্বনিটি

(a) পার্শ্বিক ধ্বনি  

(b) নাসিকা ধ্বনি

(c) কম্পিত ধ্বনি

(d) উম্ম ধ্বনি


23. কোল্টি বাগ্যন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত নয়

(a) দন্ড

(b) নাসিকা

(c) কর্ণ  

(d) কণ্ঠ


24. 'টু'-এর উচ্চারণ প্রকার হল- 

(a) তাড়িত মহাপ্রাণ    

(b) তাড়িত অল্পপ্রাণ

(c) কম্পিতধ্বনি

(d) পার্শ্বিকধ্বনি


25. তিনটি ব্যঞ্জনের গুচ্ছধ্বনি বাংলায়-

(a) ৫টি

(b) ৬টি

(c) ৭টি

(d) ৮টি   


Short Question Answer


1. দুটি যৌগিক স্বরধ্বনির উদাহরণ দাও।

উত্তৰঃ দুটি যৌগিক স্বরধ্বনি হল ঐ (ও+ই), ঔ (ও+উ)।


2. বিভাজ্য ধ্বনি কাকে বলে?

উত্তৰঃযেসব ধ্বনিকে মুখের কথার ধ্বনিপ্রবাহ থেকে কৃত্রিমভাবে হলেও খন্ড খন্ড করে বিভাজন করা যায়, তাদের বলে বিভাজ্য ধ্বনি। যেমন-স্বরধ্বনি, ব্যঞ্জনধ্বনি।


3. ধ্বনিবিজ্ঞান কাকে বলে?

উত্তৰঃ ভাষাবিজ্ঞানের যে শাখায় বাধ্বনির উচ্চারণগত, শ্রুতিগত এবং ধ্বনিতরঙ্গগত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা হয়, তাকে ধ্বনিবিজ্ঞান বলে।


4. ধ্বনিমূলের অবস্থান বলতে কী বোঝ?

উত্তৰঃ একটি ধ্বনিমূল যে যে অবস্থানে উচ্চারিত হয়, তাকেই বলা হয় ধ্বনিমূলের অবস্থান। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় '' ধ্বনিমূল শব্দের আদি, মধ্য ও অন্ত অবস্থানে উচ্চারিত হয় বলে এই তিনটিই হল '' ধ্বনিমূলের অবস্থান।


5. বাংলা ওষ্ঠ্য ধ্বনিগুলি কী কী?

উত্তৰঃ বাংলা ওষ্ঠ্য ধ্বনিগুলি হল প, , , , ম্।


6. বাংলা দন্ত্য ধ্বনিগুলি কী কী?

উত্তৰঃ বাংলা দন্ত্য ধ্বনিগুলি হল-ত, , , ধ।


7. বাংলা দন্তমূলীয় ধ্বনিগুলি কী কী?

উত্তৰঃ বাংলা দন্তমূলীয় ধ্বনিগুলি হল-স্, , র্, ল্।


8. বাংলা মূর্ধন্য ধ্বনিগুলি কী কী?

উত্তৰঃ বাংলা মূর্ধন্য ধ্বনিগুলি হল-টু, , , , , ঢ়।


9. বাংলায় 'অ্যা' ধ্বনির অবস্থান নির্ণয় করো।

উত্তৰঃ  'অ্যা' ধ্বনিটি শব্দের সব অবস্থানেই বসতে পারে। অন্তে বসলে তার পূর্ববর্তী ব্যঞ্জন দ্বৈত উচ্চারিত হয় (যেমন-বন্যা = বোন্না)। শব্দের শেষে 'অ্যা'-এর পূর্ণাঙ্গ উচ্চারণও (যেমন-জ্যা) হয়।


10. শব্দের আদিতে বসে না, এমন তিনটি বাংলা ধ্বনি কী কী?

উত্তৰঃ বাংলা ভাষায় শব্দের আদিতে '', '' এবং 'ডু' ধ্বনি কখনও পাওয়া যায় না।


11. বাংলা তালব্য ধ্বনিগুলি কী কী?

উত্তৰঃ বাংলা তালব্য ধ্বনিগুলি হল-চ, , , , শ।


12. বাংলা কণ্ঠ্যধ্বনিগুলি কী কী?

উত্তৰঃ বাংলা কণ্ঠ্যধ্বনিগুলি হল-ক্, , , , ত্।


13. বাংলা কণ্ঠনালীয় ধ্বনিটি কী?

উত্তৰঃ বাংলা কণ্ঠনালীয় ধ্বনিটি হল-''


14. বাংলা অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনিগুলি কী কী?

উত্তৰঃ বাংলা অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনিগুলি হল-প, ত্, , , ক্।


15. বাংলা অঘোষ মহাপ্রাণ ধ্বনিগুলি কী কী?

উত্তৰঃ বাংলা অঘোষ মহাপ্রাণ ধ্বনিগুলি হল-ফ্, , , ছুখ।


16. বাংলা ঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনিগুলি কী কী?

উত্তৰঃ বাংলা ঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনিগুলি হল-ব, , ড. জ. গ।


17. 'ভাষাবিজ্ঞানের ধ্বনি' কাকে বলে?

উত্তৰঃ কথা বলার সময় যেসব ধ্বনি আমরা উচ্চারণ করি, সেইসব ধ্বনিকেই 'ভাষাবিজ্ঞানের ধ্বনি' বা 'বাধ্বনি' বলা হয়।


18. ধ্বনি ও বর্ণের পার্থক্য কী?

উত্তৰঃ ধ্বনি কথ্যভাষার একক বলে তা শ্রুতিগ্রাহ্য, আর বর্ণ লেখ্য ভাষার একক বলে তা দৃষ্টিগ্রাহ্য।


19. খণ্ড ধ্বনির অপর নাম কী?

উত্তৰঃ খণ্ড ধ্বনির অপর নাম বিভাজ্য ধ্বনি।


20. ধ্বনিবিজ্ঞানের প্রধান আলোচ্য বিষয় কী?

উত্তৰঃ  ভাষা-নিরপেক্ষ বাধ্বনির উচ্চারণমৃত, শ্রুতিগত এবং ধ্বনিতরঙ্গগত বিচারবিশ্লেষণ করাই ধ্বনিবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়।


21. বাধ্বনি কাকে বলে?

উত্তৰঃ কথ্যভাষার অর্থহীন ও ক্ষুদ্রতম একককেই বলা হয় বাধ্বনি।


22. ভাষাবিজ্ঞানে বাধ্বনি নিয়ে আলোচনা করা হয় কোন্ দুটি শাখায়?

উত্তৰঃ ধ্বনিবিজ্ঞান এবং ধ্বনিতত্ত্ব এই দুটি শাখায় বাধ্বনি নিয়ে আলোচনা করে ভাষাবিজ্ঞান।


23. বাধ্বনি কত ধরনের হয়?

উত্তৰঃ বাধ্বনি বিভাজ্য ধ্বনি ও অবিভাজ্য ধ্বনি-এই দুই ধরনের হয়।


24. বিভাজ্যধ্বনির দুটি মূল ভাগ কী কী?

উত্তৰঃ বিভাজ্যধ্বনির দুটি মূল ভাগ হল-স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি।


25. মান্য বাংলা ভাষায় ক-টি স্বরধ্বনি ও ক-টি ব্যঞ্জনধ্বনি আছে?

উত্তৰঃ মান্য বাংলা ভাষায় ৭টি মৌলিক স্বরধ্বনি এবং ৩০টি ব্যঞ্জন ধ্বনি রয়েছে


26. বাংলা ভাষায় ক-টি অর্ধস্বরধ্বনি আছে?

উত্তৰঃ বাংলা ভাষায় ই, , এ (য়) এবং ও-এই চারটি অর্ধস্বরধ্বনি আছে।


27. বাংলা ভাষায় ক-টি মৌলিক স্বরের অনুনাসিক উচ্চারণ হয়?

উত্তৰঃ বাংলা ভাষায় অ, , , , , ও. অ্যা-এই সাতটি মৌলিক স্বরেরই অনুনাসিক উচ্চারণ হয়।


28, বাংলা ভাষায় ৩০টি ব্যঞ্জনধ্বনির মধ্যে কোন্ দুটির অস্তিত্ব নিয়ে ভাষাবিজ্ঞানীদের মধ্যে বিতর্ক আছে?

উত্তৰঃ'সূ''টু'-এই দুটি বাক্তনের অস্তিত্ব নিয়ে বিতর্ক আছে।


29.কোন্ বিশেষ ধরনের ধ্বনির জন্য নির্দিষ্ট কোনো চিহ্ন নেই বাংলায়?

উত্তৰঃ অর্ধস্বরগুলির জন্য বাংলায় নির্দিষ্ট কোনো চিহ্ন নেই।


30, ধ্বনিমূল কাকে বলে।

উত্তৰঃ কোনো ভাষার প্রতিটি ধ্বনিকেই বলা হয় ধ্বনিমূল। প্রতিটি ধ্বনিমূলেরই প্রতিবেশ অনুযায়ী উচ্চারণ বৈচিত্র্য দেখা যায়।


31. সহধ্বনি কাকে বলে।

উত্তৰঃ কোনো ধ্বনিমূল পূর্ববর্তী বা পরবর্তী ধ্বনির প্রভাবে (অর্থাৎ প্রতিবেশগত কারণে) যে একাধিক রূপে উচ্চারিত হয় সেগুলির প্রত্যেকটি হল সহধ্বনি। যেমন, '' ধ্বনিমূলের তিনটি সহধ্বনি আছে।


32. পরিপূরক অবস্থান কাকে বলে?

উত্তৰঃ উচ্চারণগতভাবে সদৃশ ধ্বনিগুলি পরস্পর পরস্পরের উচ্চারণস্থানে উচ্চারিত না হয়ে স্ব স্ব প্রতিবেশে উচ্চারিত হলে তাদের অবস্থানকে পরিপূরক অবস্থান বলে।


33. মুক্ত বৈচিত্র্য কী?

উত্তৰঃ  শব্দের কোনো একটি ধ্বনি অভ্যাস বা সামর্থ্যগত কারণে সদৃশ অন্য ধ্বনিতে উচ্চারিত হয়ে শব্দটির একই অর্থ বজায় রাখলে সেই উচ্চারণ ভেদকে বলে ধ্বনির 'মুক্ত বৈচিত্র্য'। গাড় > গাঢ়।


34. দ্বিস্বর ধ্বনি কী প্রকার সমাবেশে তৈরি হয়?

উত্তৰঃ মৌলিক স্বরধ্বনির সঙ্গে অর্ধস্বরের সমাবেশে তৈরি হয় দ্বিস্বরধ্বনি।


35. ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন সমাবেশে কোন্ দুই প্রকার যুগ্ম ধ্বনি তৈরি হয়?

উত্তৰঃ ব্যঞ্জন-ব্যঞ্জন সমাবেশে গুচ্ছ ধ্বনি এবং যুক্ত ধ্বনি-এই দুই প্রকার যুগ্ম ধ্বনি তৈরি হয়।


36. গুচ্ছ ধ্বনি কাকে বলে?

উত্তৰঃ শব্দমধ্যে স্বরধ্বনি না-থাকা একাধিক ব্যঞ্জন একাধিক দল (Syllable)-এর অন্তর্ভুক্ত থাকলে সেই যুগ্মব্যঞ্জনকে গুচ্ছ ধ্বনি বলে। 'উত্তর' শব্দের 'ত্ত' (+) হল গুচ্ছ ধ্বনি।


37. যুক্ত ধ্বনি বলতে কী বোঝ?

উত্তৰঃ শব্দের আদিতে বা শেষে স্বরধ্বনি না-থাকা একাধিক ব্যঞ্জন একই দল (Syllable)-এর অন্তর্ভুক্ত থাকলে সেই যুগ্ম ধ্বনিকে বলে যুক্ত ধ্বনি। যেমন, 'প্রাণ'-এর প্র ও 'ট্যাক্স'-এর ক্স।


38. বাংলা ভাষায় দুই ব্যঞ্জনের গুচ্ছ ধ্বনির সংখ্যা কত?

উত্তৰঃ বাংলা ভাষায় দুই ব্যঞ্জনের গুচ্ছ ধ্বনির সংখ্যা ২০০-রও বেশি।


39. চার ব্যঞ্জনের গুচ্ছ ধ্বনি দিয়ে তৈরি একটি শব্দের উদাহরণ দাও।

উত্তৰঃ চার ব্যঞ্জনের গুচ্ছ ধ্বনি দিয়ে তৈরি একটি শব্দ হল 'সংস্কৃত'


40, তিন ব্যঞ্জনে তৈরি বাংলা গুচ্ছ ধ্বনির সংখ্যা এবং বিশেষ বৈশিষ্ট্যটি লেখো।

উত্তৰঃ তিন ব্যঞ্জনে তৈরি বাংলা গুচ্ছ ধ্বনির সংখ্যা ৮ এবং এক্ষেত্রে তৃতীয় ব্যঞ্জনটি সর্বদা '' হয়।

 যেমন-অস্ত্র।


Long Question Answer


প্ৰশ্ন.1 ধ্বনিমূল সম্পর্কে তোমার ধারণাটি সংক্ষেপে স্পষ্ট করো।

উত্তৰঃ কৈর মানুষ যে ধ্বনি উচ্চারণ করে, তাকে বলে বাধ্বনি বা স্বন। বাগ্যন্ত্রের সহায্যে উচ্চারিত যত বাধ্বনি বা স্বন আমরা শুনতে পাই, তার মধ্যে সবগুলিই যে প্রত্যেক ভাষায় সমান তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা নেবে এমন নয়। এক-এক ভাষায় এক-এক রকমের বাধ্বনি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। এখন যে ভাষায় যে বাধ্বনিগুলি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে, সেই ভাষার সেই বাধ্বনিগুলিই হল ধ্বনিমূল।

আর-একটু অন্যভাবে বিষয়টি স্পষ্ট করা যাক। আমরা জানি, বাধ্বনিই ভাষার প্রধান উপাদান। তাহলে বাধ্বনি আর ধ্বনিমূলের মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়? কারণ, ধ্বনিমূলও তো বাধ্বনি। কিন্তু আমরা জানি, যে-কোনো বাধ্বনি ধ্বনিমূল নয়।

একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। ভাষার প্রতিটি শব্দ এক বা একাধিক ধ্বনি দিয়ে গঠিত। যেমন-বাংলায় শব্দের শুরুতে ''-এর উচ্চারণ • জ'-এর মতো কিন্তু মধ্যে বা শেষে সর্বদাই '' উচ্চারণ হয় (যেমন-'যোগ' কিন্তু 'বিয়োগ')। তা ছাড়া '' ধ্বনিটি শব্দের শুরুতে কখনও '' এবং মধ্যে বা শেষে 'জ্' উচ্চারিত হয় না। অতএব, '' একটি ধ্বনিমূল যার দুটি উচ্চারণবৈচিত্র্য অর্থাৎ সহধ্বনি হল '' এবং ''

ইংরেজি দৃষ্টান্ত দিয়েও বোঝানো যায়। যেমন- bat mat দুটি ইংরেজি শব্দ। এ দুটি শব্দ যে ধ্বনিগুলি নিয়ে তৈরি তা হল যথাক্রমে b/a/t এবং m/a/t/এখানে দেখা যাচ্ছে, ৮ আর m-এই দুটি বাধ্বনির জন্য দুটি পৃথক অর্থপূর্ণ শব্দ তৈরি হচ্ছে। কাজেই বলা যায় ৮ আর m বাধ্বনি দুটি হল ধ্বনিমূল। এই যে দুটি ধ্বনিমূলের মধ্যে অর্থ নির্মাণের পার্থক্য বা বিরোধ, সেই ক্ষমতাই এদেরকে অন্যান্য সাধারণ বাধ্বনি থেকে পৃথক করে দেয়।


প্ৰশ্ন.2 ধ্বনিমূলের স্বাতন্ত্র্যসূচক বৈশিষ্ট্য (Distinctive feature) উদাহরণ সহযোগে বুঝিয়ে দাও।

উত্তৰঃ টার। একটি ধ্বনিমূল সাধারণভাবে অন্য ধ্বনিমূলের বিরোধী। তবে এক ধ্বনিমূলের সঙ্গে অন্য ধ্বনিমূলের তফাত থাকলেও তাদের মধ্যে কিছু মিলও থাকে। যদি দেখা যায়, দুটি ধ্বনিমূলের মধ্যে উচ্চারণ স্থান বা উচ্চারণ প্রকৃতির দিক থেকে মিল থাকলেও একটি বিষয়ে অমিল আছে, তাহলে সেই অমিলটিকেই বলা হবে তাদের 'স্বাতন্ত্র্যসূচক বৈশিষ্ট্য'

প্রতিটি প্রশ্নের পূর্ণমান বাংলা মূলধ্বনির দৃষ্টান্তেই বিষয়টি স্পষ্ট হতে পারে। যেমন, 'তালা' 'থালা' শব্দ দুটির ধ্বনি বিশ্লেষণ করলে হবে-

অতএব 'তালা' 'থালা' শব্দের মধ্যে যেসব ধ্বনি আছে তার মধ্যে 'ত্' '' ধ্বনিমূল দুটি পরস্পরের থেকে পৃথক। 'ত্' একটি অঘোষ দন্ত্য অল্পপ্রাণ ধ্বনি, অন্যদিকে '' হল একটি দন্ত্য মহাপ্রাণধ্বনি। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, এই দুটি ধ্বনির মধ্যে পার্থক্য কেবল অল্পপ্রাণতা ও মহাপ্রাণতায়। আর এটাই হল 'ত্' '' ধ্বনিমূলদ্বয়ের স্বাতন্ত্র্যসূচক বৈশিষ্ট্য।

একটা ইংরেজি দৃষ্টান্ত দিলেও বিষয়টা স্পষ্ট হবে। ধরা যাক, sip আর zip দুটি শব্দ। এদের ধ্বনিগুলি হল যথাক্রমে /s, i, p/ এবং /z, i, p/এখানে দেখা যাচ্ছে যে, ১ আর z স্বনিম দুটির জন্য দুটি শব্দ আলাদা হয়ে গেছে। এখন এদের ধ্বনিচরিত্র দেখা যাক। '' একটি অঘোষ, দন্তমূলীয়, উষ্ম ধ্বনি। অন্যদিকে 'z' হল একটি ঘোষ, দন্তমূলীয়, উষ্ম ধ্বনি। তাহলে দেখা যাচ্ছে, অন্য সব দিকে মিল থাকলেও 's' 'z'-এর মধ্যে মূল অমিল হল এদের একজন ঘোষ ধ্বনি এবং অন্যজন অঘোষ ধ্বনি। এই পার্থক্যটিই হল 's' আর 'z' ধ্বনিমূলের স্বাতন্ত্র্যসূচক বৈশিষ্ট্য।


প্রশ্ন.3 ধ্বনিতত্ত্বে ন্যূনতম শব্দজোড়ের (Minimal pair) ভূমিকা সবিস্তারে লেখো।

উত্তৰঃ দুটি ছোটো শব্দের মধ্যে যদি একটি মাত্র ধ্বনিমূলের পার্থক্য থাকে, আর সেই পার্থক্যের কারণে শব্দ দুটির অর্থও যদি আলাদা হয়, তবে সেই শব্দ দুটিকে ন্যূনতম শব্দজোড় বলা হয়।

দুটি ইংরেজি শব্দ rail, mail উদাহরণ হিসেবে নেওয়া হল। প্রথম ও দ্বিতীয় শব্দের মধ্যে। ও m-এই দুটি ধ্বনিমূলের পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া আর কোনো পার্থক্য নেই। আর শব্দ দুটির অর্থও আলাদা। তাই এরা Minimal pair বা ন্যূনতম শব্দজোড়। বাংলায় কাল-খাল, শোল-খোল, মান-পান প্রভৃতি শব্দ জোড়াকে অনুরূপভাবে ন্যূনতম শব্দজোড় বলা যাবে। এমন হতে পারে যে, দুটি শব্দের একটি ধ্বনি অল্পপ্রাণ (যেমন, 'ক্'), অন্যটির ধ্বনি মহাপ্রাণ (যেমন, '')। আবার অনুনাসিক ধ্বনি নিয়েও ন্যূনতম শব্দজোড় হতে পারে। যেমন-

আঁশ-আশ, পাক-পাঁক, বাস-বাঁশ। শিক্ষার্থীবে উল্লেখযোগ্য যে, ন্যূনতম শব্দজোড়ের অনুশীলন দিয়ে ভাষার শিক্ষার্থীকে বা অন্য কোনো ভাষানাম শব্দজোড়েইজে ভাষা শেখানো যায়।

অল্পপ্রাণ-মহাপ্রাণ ধ্বনি দিয়ে তাদের ন্যূনতম শব্দজোড়ের অনুশীলন দেওয়া যায়। যেমন- চাল-ছাল, দান-ধান, চা-ছা। আবার ঘোষ-অঘোষ ধ্বনির ন্যূনতম শব্দজোড়ও হতে পারে। যেমন- থান-ধান, খাই-ঘাই । উদাহরণের প্রতিটি ক্ষেত্রে একটিমাত্র ধ্বনি বা স্বনিমের জন্য শব্দ আলাদা হয়ে গেল; অর্থও বদলে গেল।


প্রশ্ন.4 সহধ্বনির (Allophone) স্বরূপ বিশ্লেষণ করো।

উত্তৰঃ প্রতিটি ভাষারই কিছু মূলধ্বনি থাকে এবং তাদের মধ্যে কোনো-কোনোটির একাধিক উচ্চারণবৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়। এই মূলধ্বনির উচ্চারণ বৈচিত্র্যকে বলা হয় সহধ্বনি। প্রতিটি ধ্বনিমূল এক-একটি ধ্বনি-পরিবার এবং সহধ্বনিগুলি সেই পরিবারের সদস্য। অর্থাৎ ধ্বনিমূল একাধিক সহধ্বনির সমষ্টি।

ধ্বনিমূলের পরস্পরের মধ্যে সম্পর্ক যেমন বিরোধের, তেমনই সহধ্বনির পারস্পরিক সম্পর্কও বিরোধের। সহধ্বনির পারস্পরিক সম্পর্ককে ভাষাবিজ্ঞানে বলা হয় পরিপূরক অবস্থান (Complementary distribution)সহধ্বনির প্রত্যেকের অবস্থান পরস্পরের থেকে আলাদা, কোনো দুটি সহধ্বনির কখনও একইরকম পারিপার্শ্বিক অবস্থায় উচ্চারিত হয় না। যেমন-ইংরেজি 'P'-এর দুটি প্রধান পূরকধ্বনি 'P'(প্) ও 'Ph' (ফ্)। শব্দের গোড়ায় ও স্বরধ্বনির আগে, কিংবা দুটো স্বরধ্বনির মাঝখানে যে 'P'বসে, তার উচ্চারণ 'Ph' যেমন-put, penআর শব্দের শেষে, ১-এর পরে, কিংবা ব্যঞ্জনের আগে যে 'P'বসে, তার উচ্চারণ হয় 'P'-এর মতো, যেমন-cup, spoon, plug ইত্যাদি। একইরকমভাবে বাংলায় 'আলতা' 'উলটো' শব্দের '' ধ্বনি দুটির ভিন্ন ভিন্ন উচ্চারণ হয়। কারণ, বাংলায় 'ত্' ইত্যাদি দন্ত্যধ্বনির আগে যে '' বসে, তার উচ্চারণ হয় দন্ত্য 'ল্'। যেমন-আলতা, পলতা, সলতে ইত্যাদি। কিন্তু 'ট্' ইত্যাদি মূর্ধন্যধ্বনির আগে যে 'ল্' বসে তার উচ্চারণ হয় মূর্ধন্য 'ল্'। যেমন-উলটো, পালটা ইত্যাদি। আর অন্যত্র দেখা যায়, দন্তমূলীয় 'ল্'-এর উচ্চারণ। যেমন-লাল, নীল ইত্যাদি।


প্রশ্ন. বিভাজ্য ধ্বনিমূল ও অবিভাজ্য ধ্বনিমূলের তুলনামূলক আলোচনা করো।

উত্তৰঃ আমাদের বাক্সবাহকে বিশ্লেষণ করলে তার অংশ-স্বরূপ যেসব ধ্বনিগত উপাদান পাই, সেগুলি দু-রকমের। এর কতকগুলিকে সুস্পষ্টভাবে আলাদা আলাদা এককে ভাগ করা যায়। যাদের বলা হয় বিভাজ্য ধ্বনি (Segmental Sound)যেমন- রাম যায়? উপরের বাক্যটি বিশ্লেষণ করলে আমরা পাব-

র্+আ+ম্য+আ+? এই যে ছোটো ছোটো ধ্বনিগত উপাদান, এগুলির প্রত্যেকটিকে পৃথক পৃথক করে স্পষ্টভাবে স্বতন্ত্র এককরূপে ভাগ করা সম্ভব হল। আর র্, , ম্, , য-এদের প্রত্যেকের ধ্বনিগত বৈশিষ্ট্য আছে বলে, এরা প্রত্যেকেই এক-একটি বিভাজ্য ধ্বনি। বিভাজ্য ধ্বনি স্বর ও ব্যঞ্জন-এই দুই ভাগে বিভক্ত। কিন্তু আমাদের বাক্সবাহে এমন ধ্বনিও শোনা যায় যাকে এরকম সুস্পষ্ট আলাদা আলাদা এককে পৃথক করা যায় না, সেগুলিই হল অবিভাজ্য ধ্বনি (Supra-segmental sound)যেমন-রাম যায়?

(বাক্যটিতে র, , ম ইত্যাদি বিভাজ্য ধ্বনিমূল ছাড়াও আর-একটা ধ্বনি আছে, সেটা হল সুক্ষ্ম সুরের প্রবাহ। বিষয়টা বর্ণযোগে বোঝা না গেলেও উচ্চারণের সময় বোঝা যায় যে, সেই সুরের প্রবাহ এই বাক্যের গোড়ায় ক্ষীণ কিন্তু বাক্যের শেষের দিকে তীব্র হয়েছে। অর্থাৎ, বাক্যের শেষের দিকটা সুর তীব্র হল বলে বা উপরে উঠে গেল বলেই বাকাটা প্রশ্নসূচক অর্থ বহন করছে। কিন্তু শেষের দিকে সরটা নীচে নেমে গেলে বাকাটা সাধারণ বিবৃতিমূলক ইতিবাচক বাক্য হয় যেত। যেমন- রাম যায়। এই যে সুর, একে আমরা বিভাজ্য ধ্বনির মতো ছোটো ছোটো খণ্ডে ভাগ করতে পারি না, তাই এরা অবিভাজ্য ধ্বনি। সুর ছাড়াও শ্বাসাঘাত, দৈর্ঘ্য, যতি প্রভৃতিও অবিভাজ্য ধ্বনি।


প্রশ্ন.6 উদাহরণ সহযোগে ধ্বনিমূলের অবস্থান (Distribution) ব্যাখ্যা করো।

উত্তৰঃ কোনো শব্দে ধ্বনিমূল তথা ধ্বনির অবস্থান তিন জায়গায় হতে পারে শব্দের শুরুতে, মাঝে কিংবা শেষে। এই শুরু (Initial), মাঝ (Medial) ও শেষ (Final)-তিনরকম অবস্থানের সবগুলিতেই সব ভাষার সব ধ্বনি বসে না। এক্ষেত্রে সব ভাষারই কোনো-কোনো ধ্বনি সম্পর্কে নির্দিষ্ট নিয়মবিধি আছে। আবার এই নিয়ম প্রত্যেক ভাষায় খানিকটা আলাদা।

বাংলায় প্রায় সব ধ্বনি আদি-মধ্য-অন্ত-এই তিন অবস্থানে বসতে পারে। কেবল দু-একটি ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ লক্ষ করা যায়। যেমন-

বাংলায় ''/'?' ধ্বনিটি শব্দের মাঝে ও শেষে বসলেও (যেমন-রঙিন রংচঙে) কখনও শব্দের প্রথমে বসে না। '' ধ্বনির অবস্থানের এই বৈশিষ্ট্য অধিকাংশ ভাষায় লক্ষ করা যায়। যেমন-ইংরেজিতে ''ধ্বনিটি শব্দের মাঝে এবং শেষে (bank, bang) বসলেও শব্দের প্রথমে এর ব্যবহার নেই। নীচে কিছু ব্যঞ্জনধ্বনির বিভিন্ন ভাষায় তুলনামূলক অবস্থান দেখানো হল হ/h: ধ্বনিটিকে বাংলায় শব্দের শুরুতে ও মাঝে পাওয়া যায় (যেমন-হোম, মহান)। কিন্তু শব্দের শেষে '' ধ্বনির ব্যবহার খুবই কম। ইংরেজি ও জার্মান ভাষায় '' ধ্বনি শব্দের শুরুতে থাকলে উচ্চারিত হয় (ইংরেজি-house, জার্মান-haus)কিন্তু স্বরধ্বনির পরে '' ধ্বনি থাকলে তা উচ্চারিত হয় না। যেমন, ইংরেজি-aha, জার্মান numen name ইত্যাদি।

ড/d: বাংলায় এই ধ্বনিটি শব্দের শুরুতে বসে (যেমন-ডাব), মাঝখানে যুক্তব্যঞ্জন হিসেবে পাওয়া যায় (যেমন-মন্ডল, বড্ড)। কিন্তু শেষে ''-এর ব্যবহার প্রায় নেই বললেই চলে। ড/rah: ধ্বনিটি শব্দের প্রথমে কখনও বসে না, তবে মাঝে ও শেষে বসলেও (যেমন-রাঢ়ি, আষাঢ়)-এর উচ্চারণ বাংলায় প্রায় নেই।

এইভাবে শব্দে ব্যঞ্জনধ্বনির অবস্থান ও উচ্চারণের ব্যাপারে কিছু বিশেষ নিয়ম থাকলেও স্বরধ্বনির অবস্থানের বিষয়ে বাংলায় বিধিনিষেধ খুবই কম। কারণ বাংলায় সব স্বরধ্বনি শব্দের সব অবস্থানে বসে। কেবল বাংলায় '' ধ্বনিটি জার্মান ও ফরাসি ভাষার মতো শব্দের প্রথমে ও মাঝে বসে (যেমন-অল্প, সৎ) কিন্তু শব্দের শেষে বসে না। এই আলোচনা থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, ধ্বনির অবস্থানের ব্যাপারে প্রত্যেক ভাষার নিজস্ব নিয়ম আছে এবং এটা প্রত্যেক ভাষার স্বাতন্ত্র্যের চিহ্ন।


প্রশ্ন.7 দুটি করে উদাহরণ-সহ 'গুচ্ছ ধ্বনি' 'যুক্ত ধ্বনি'-র পরিচয়

উত্তৰঃ শব্দের মধ্যে পাশাপাশি অবস্থিত দুটি ব্যঞ্জনধ্বনির সমাবেশ ঘটলে। তাকেই ব্যঞ্জন-সমাবেশ বলা হয়। ব্যঞ্জন-সমাবেশ দু-প্রকারের-গুচ্ছ ধ্বনি এবং যুক্ত ধ্বনি। লক্ষণীয় যে গুচ্ছ ধ্বনিভুক্ত ব্যঞ্জনগুলি সবসময়েই আলাদা দলভুক্ত। হয়। প্রথমটি পূর্ববর্তী দলে এবং শেষেরটি পরবর্তী দলে যায়। যেমন, অবস্থা > এ বস, পানদয়এখানে গচ্ছধ্বনির '' পূর্ববর্তী ''-এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে, আর '' পরবর্তী স্বরধ্বনি '' এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে অন্য একটি দল তৈরি করেছে। প্রায় দুশোটিরও বেশি গুচ্ছধ্বনি বাংলা ভাষায় আছে। এরকমই গুচ্ছধ্বনির উদাহরণ- শব্দ, আশ্চর্য ইত্যাদি। তিন ব্যঞ্জনের গচ্ছধ্বনির উদাহরণ হল 'অস্ত্র' 'যন্ত্র' ইত্যাদি। চার ব্যঞ্জনের উদাহরণ- 'সংস্কৃত' শব্দ।


প্রশ্ন.9 উদাহরণ-সহ ধ্বনিমূল এবং সহধ্বনির সম্পর্ক নির্ণয় করো। অথবা, উদাহরণ-সহ 'ধ্বনিমূল' 'সহধ্বনি'র সম্পর্ক বুঝিয়ে দাও।

উত্তৰঃ ধ্বনিমূল এবং সহধ্বনির সম্পর্ক একটি পরিবার আর তার সদস্যদের মতো। ধ্বনিমূল হচ্ছে ধ্বনির কাল্পনিক চেহারা, আর সহধ্বনি তার বাস্তব প্রকাশ। যেমন ধরা যাক '' একটি ধ্বনিমূল। এই '' ধ্বনিকে দুটি আলাদা শব্দে ব্যবহার করা হল-পা.গোল্, আর আ.লাপ্। লক্ষ করলে দেখা যাবে, 'পাগল' এর [প] উচ্চারণের সময়ে মুখবিবর এবং ওষ্ঠ যতটা ফাঁক হচ্ছে 'আলাপ' উচ্চারণের সময় [প] ধ্বনি উচ্চারণ করতে গিয়ে তা হচ্ছে না। বরং মুখবিবর সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। জিহ্বার প্রসারিত অবস্থানও সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ প্রতিবেশ অনুসারে একটি মূলধ্বনি এই যে আলাদা আলাদা ভাবে উচ্চারিত হল এরা ভাষা ধ্বনিতত্ত্ব

প্রত্যেকেই এক-একটি সহ ধ্বনি। অর্থাৎ সহধ্বনি হল উচ্চারণভেদনির্ভর। প্রতিটি উচ্চারণভেদই তৈরি হয় প্রতিবেশ অর্থাৎ কোন্ অবস্থানে অবস্থানে ধ্বনিটি আছে তার উপরে নির্ভর করে। বাংলায় যে সাতটি মৌলিক স্বরধ্বনি এবং ৩০টি ব্যঞ্জনধ্বনি আছে তারা সকলেই এক-একটি ধ্বনিমূল। ধ্বনিমূল এবং সহধ্বনির সম্পর্ক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হল- তাদের উচ্চারণ মূলগতভাবে এক হবে। দ্বিতীয়ত, ধ্বনিমূল ভাষায় অর্থের তফাত করতে সমর্থ, কিন্তু সহধ্বনির পক্ষে সে কাজ করা সম্ভব নয়। আসলে ধ্বনিমূল একটি কল্পনা, যার বাস্তব উপলব্ধি হল সহধ্বনি। অন্যদিকে, ব্যঞ্জনধ্বনির সমাবেশ যদি শব্দের শুরুতে হয় তাকে বলে যুক্তধ্বনি। যুক্ত ধ্বনির সঙ্গে গুচ্ছ ধ্বনির প্রধান পার্থক্য হল যুক্ত ধ্বনিভুক্ত ব্যঞ্জনগুলি কখনোই আলাদা দলে বিভাজিত হয় না। প্র, ক্র, স্ত, দ্র এরকম ২৮টি যুক্ত শ্রেনি বাংলায় আছে। ইংরেজি থেকে আগত বেশ কিছু যুক্তধ্বনিও বাংলায় পাওয়া যায়। যেমন ফ্র (ফ্রাই), ট্র (ট্রাম), ক্স (ট্যাক্স)। তিন ব্যঞ্জনের যুক্তধ্বনি হল 'স্ত্রী', 'স্পৃহা' শব্দ।


প্রশ্ন.11 উদাহরণ-সহ গুচ্ছ ধ্বনির পরিচয় দাও।

উত্তৰঃ শব্দের মধ্যে বা শেষে পাশাপাশি উচ্চারিত দুই ব্যঞ্জনধ্বনির মধ্যে যদি স্বরধ্বনি না থাকে এবং ব্যঞ্জন দুটির প্রথমটি যদি পূর্ববর্তী দল (Syllable)-এর শেষ ধ্বনি এবং দ্বিতীয়টি যদি পরবর্তী দল-এর প্রথম ধ্বনি হয়, তবে সেই ব্যঞ্জনদ্বয়ের সমাবেশকে বলা হয় গুচ্ছ ধ্বনি। গুচ্ছ ধ্বনির সমাবেশ স্বভাবতই দৃঢ় নয়, কেন-না তারা একই দল-এর অন্তর্গত নয়। যেমন-'রোদ্দুর' শব্দটিতে

শব্দের মাঝামাঝি দুটি '' ধ্বনি উচ্চারিত হয়ে একটি গুচ্ছ ধ্বনি তৈরি করেছে এবং স্বভাবতই প্রথম '' প্রথম দল (রোদ)-এর শেষ ধ্বনি এবং দ্বিতীয় '' শেষ দল (দুর)-এর প্রথম ধ্বনি। 'আস্ত' শব্দটিতে শব্দের শেষে 'স্' 'ত্' ধ্বনিদ্বয় উচ্চারিত হয়ে একটি গুচ্ছ ধ্বনি তৈরি করেছে এবং 'স্' ধ্বনি প্রথম দল (আস্)-এর শেষ ধ্বনি এবং 'ত্' ধ্বনি দ্বিতীয় দল (ত)-এর প্রথম ধ্বনি। বাংলা ভাষায় দ্বিগুচ্ছ ধ্বনির অর্থাৎ দুই ব্যঞ্জনের গুচ্ছ ধ্বনির সংখ্যা ২০০টির বেশি। ত্রিগুচ্ছ ধ্বনি বাংলা ভাষায় অন্তত ৮টি। যেমন 'অস্ত্র' শব্দের 'স্ + ত্+ র'। এক্ষেত্রে সর্বদাই শেষ ব্যঞ্জন হয় ''। চার ব্যঞ্জনের গুচ্ছ ধ্বনির উদাহরণ হল 'সংস্কৃত' শব্দের 'ং + স্+ক্+র্'


প্রশ্ন.12 যুক্ত ধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দাও। অথবা, উদাহরণ-সহ যুক্ত ধ্বনির পরিচয় দাও।

উত্তৰঃ শব্দের মধ্যে পাশাপাশি অবস্থানে থাকা একাধিক ব্যঞ্জনধ্বনির মধ্যে যদি স্বরধ্বনি না থাকে, তবে তাকে বলা হয় ব্যঞ্জন-সমাবেশ। শব্দের শুরুতে বা শেষে থাকা ব্যঞ্জন-সমাবেশে কোনো দলসীমা যদি না থাকে, তবে তাকে বলা হয় যুক্ত ধ্বনি।

দুই ব্যঞ্জনের শব্দ শুরুর যুক্ত ধ্বনিতে প্রথম ব্যঞ্জনটি 'স্' হবে, নয়তো দ্বিতীয় ব্যঞ্জনটি '' বা 'ল্' হবে। যেমন প্র (প্রাণ), ত্র (ত্রাণ), তৃ (তৃণ), ধ্র (ধ্রুব), স্প (স্পন্দন), স্ফ (স্ফীত) ইত্যাদি। শব্দের শুরুতে এইরকম মোট ২৮টি যুক্ত ধ্বনি পাওয়া যায় বাংলা ভাষায়। বাংলা কৃতঋণ বা আগন্তুক (মূলত ইংরেজি) শব্দে আরও বেশ কয়েকটি যুক্ত ধ্বনি পাওয়া যায়। যেমন-ফ্র (ফ্রাই), ফ্ল (ফ্ল্যাট), ট্র (ট্রাম্) ইত্যাদি। বাংলায় তিন ব্যঞ্জনের ২টি যুক্ত ধ্বনির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। যেমন-স্ত্র (স্ত্রী), স্পু (স্পৃহা)। আগন্তুক বেশ কিছু শব্দের শেষেও যুক্ত ধ্বনির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। যেমন-ক্স (ট্যাক্স), ংক (ব্যাংক) ইত্যাদি। যুক্ত ধ্বনি এমনই এক ব্যঞ্জন-সমাবেশ যেখানে ব্যঞ্জনগুলিকে বর্ণে লিখে দেখানো যায়।


EDITING BY--- Liza Mahanta