---------------------------------------------------
1. প্রাচীন যুগের কোন্ গ্রন্থে নারীদের জলক্রীড়া এবং 'উদ্যান রচনার' উল্লেখ আছে?
(a) পবনদূত ✔
(b) মেঘদূত
(c) রঘুবংশ
(d) গীতগোবিন্দ
2. প্রাচীনযুগে বিবাহ-উৎসবের অঙ্গ ছিল কোন্ খেলা?
(a) তাস
(b) দাবা
(c) পাশা ✔
(d) কুস্তি
3. কলকাতায় প্রথম হিন্দুমেলা অনুষ্ঠিত হয় কত খ্রিস্টাব্দে?
(a) ১৮৬৩
(b) ১৮৬৫
(c) ১৮৬৭ ✔
(d) ১৮৬৯
4. কুস্তি কোন্ দেশের জাতীয় খেলা?
(a) চিন
(b) জাপান ✔
(c) পাকিস্তান
(d) শ্রীলঙ্কা
5. 'কুস্তি ফেডারেশন' অর্থাৎ 'রেসলিং ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া' গড়ে ওঠে কত খ্রিস্টাব্দে?
(a) ১৯৩৭
(b) ১৯৪১
(c) ১৯৪৮ ✔
(d) ১৯৫৩
6. কত খ্রিস্টাব্দে কুস্তি এথেন্সের অলিম্পিকে স্থান পায়?
(a) ১৮৮২
(b) ১৮৮৬
(c) ১৮৯২
(d) ১৮৯৬ ✔
7. বিখ্যাত কুস্তিগির গোবর গৃহ-র প্রকৃত নাম-
(a) যতীন্দ্রচরণ গৃহ ✔
(b) যতীন্দ্রনাথ গৃহ
(c) অম্বিকাচরণ গুহ
(d) যতীন্দ্রমোহন গৃহ
8. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত কুস্তির 'বিশ্ব লাইট হেভিওয়েট চাম্পিয়নশিপ' জেতেন প্রথম কোন্ এশীয়?
(a) ফণীন্দ্রকৃয় গৃহ
(b) যতীন্দ্রচরণ গৃহ ✔
(c) গোঁসাইদাস গুপ্ত
(d) ক্ষেত্রমোহন গৃহ
9. গোবর গুহ 'লাইট হেভিওয়েট চাম্পিয়নশিপ' জেতেন কত খ্রিস্টাব্দে?
(a) ১৯১১
(b) ১৯১৩
(c) ১৯১৮
(d) ১৯২১ ✔
10. গোবর গুহের নাম কোন্ খেলার?
(a) কুস্তি ✔
(b) ব্রতচার
(c) তিরন্দাজি
(d) কবাডি
11. কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ফণীন্দ্রকৃয় গুপ্তের কে ছিলেন?
(a) ঠাকুরদা
(b) দাদু ✔
(c) বাবা
(d) দাদা
12. কুস্তির আন্তর্জাতিক রেফারি ছিলেন-
(a) গোবর গৃহ
(b) মিহির সেন
(c) মানিক গুহ ✔
(d) শ্যামসুন্দর মিত্র
13. 'প্যাঁচ লুকানো ধোঁকা' কোন্ খেলায় আছে?
(a) কুস্তি ✔
(b) লন টেনিস
(c) বক্সিং
(d) মোরগ লড়াই
14. ভারতের প্রথম ফুটবল ক্লাব কোন্টি?
(a) ট্রেস্ ক্লাব
(b) ডালহৌসি ক্লাব
(c) ন্যাভাল ভলান্টিয়ার্স ক্লাব
(d) ক্যালকাটা ফুটবল ক্লাব ✔
15. একক ক্রিয়াকলাপ কোন খেলার বৈশিষ্ট্য?
(a) কবাডি
(b) খোখো
(c) হকি
(d) যোগাসন ✔
16. আত্মরক্ষামূলক খেলা কোল্টি ?
(a) জুডো ✔
(b) ক্রিকেট
(c) টেবিল টেনিস
(d) ব্যাডমিন্টন
17. ব্যালেন্স বিম কোন্ খেলায় আছে?
(a) ফুটবল
(b) বাস্কেটবল
(c) জিমন্যাস্টিক ✔
(d) হ্যান্ডবল
18. লৌহমানব নীলমণি দাস কার ছাত্র ছিলেন?
(a) যতীন্দ্রচরণ গৃহ
(b) অম্বিকাচরণ গৃহ
(c) ফণীন্দ্রকৃয় গুপ্ত ✔
(d) গোঁসাইদাস গুপ্ত
19. সোমা দত্ত, জয়দীপ কর্মকারের নাম কোন্ খেলার সঙ্গে যুক্ত?
(a) তিরন্দাজি
(b) কবাডিপ
(c) ব্যাডমিন্টন
(d) শ্যুটিং ✔
Long Question Answer
প্রশ্ন.1 বাঙালির ক্রীড়া সংস্কৃতির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। প্রত্যেক ধরনের খেলার নাম উল্লেখ করো।
উত্তরঃ বাঙালির ক্রীড়া সংস্কৃতির প্রসঙ্গে আলোচনা করতে হলে হাজার বছর আগের সময়ে ফিরে তাকাতে হবে। সেই প্রাচীন চর্যাপদেও সাঁতার, নৌকা চালানো, মাছ ধরা প্রভৃতি খেলার উল্লেখ আছে। দাবা, পাশা, কবাডি, কুস্তি, লাঠি খেলা, সাঁতার, নৌকাবাইচ, তিরন্দাজি, মাছধরা সমস্ত খেলাই বহুযুগ ধরে বাঙালির ক্রীড়াসংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত। কোম্পানির শাসনের সময় থেকেই ফুটবল, হকি, ক্রিকেট, টেনিস, ব্যাডমিন্টন, ভলিবল ইত্যাদি ইউরোপিয়ান খেলাকে কেন্দ্র করে নানা ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। ইংরেজদের 'ইনডোর গেমস্' হিসেবে ছিল মুকার, বিলিয়ার্ড, অকশন ব্রিজ ইত্যাদি। ধীরে ধীরে অনুশীলনের মাধ্যমে এইসব খেলাগুলিতে বাঙালিরাও বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করে। মাঠের খেলা হিসেবে প্রথমেই নাম ফুটবলের। এই বিদেশি খেলাটিকে বাঙালি তার আবেগ-ভালোবাসা দিয়ে আপন করে নিয়েছে বহু বছর আগে থেকেই। জনপ্রিয়তার নিরিখে তারপরেই রয়েছে ক্রিকেট, হকি, ব্যাডমিন্টন, লন টেনিস, ভলিবল, বাস্কেট বল। অন্যরকম খেলার মধ্যে রয়েছে ঘোড়দৌড়। শরীরচর্চা বিষয়ে কুস্তি, বক্সিং, বডি বিল্ডিং, কবাডি ইত্যাদি খেলাগুলি জনপ্রিয় হয়। নদীনালা-খালবিলে ভরা এই বাংলায় সাঁতার শুধু খেলা নয়, একসময় এটি ছিল এখানের মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ। একই কারণে মাছ ধরাও এখানে জনপ্রিয় ক্রীড়া বিনোদন। এ ছাড়া ছোটোবেলার পুতুলখেলা থেকে শুরু করে দাঁড়িয়াবান্ধা, রুমালচোর, পিন্টু,
ডাংগুলি, চাক্কা চালানো, মোরগ লড়াই, চু-কিতকিত, গানের লড়াই আর রয়েছে খো-খো-এগুলি বাঙলার নিজস্ব সম্পদ। এইসব খেলাকে কেন্দ্র করে যুগ যুগ ধরে বাঙালির স্মৃতি, আবেগ, ভালোবাসা, আড্ডা, বিনোদন, শরীরচর্চা সবটাই চলে আসছে।
প্রশ্ন.2 বাঙালির ফুটবল চর্চার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উত্তরঃ বাঙালি সমাজে ফুটবল বিশেষ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ব্রিটিশ শাসনের সময় থেকে। ১৮৫০ সাল নাগাদ কলকাতায় বাঙালিরা ফুটবল ক্লাব স্থাপন করেন। প্রথমদিকের ভারতীয় ফুটবল দলগুলির মধ্যে শোভাবাজার ক্লাব (১৮৮৫), ওয়েলিংটন ক্লাব (১৮৮৪), টাউন ক্লাব (১৮৮৫), কুমারটুলি (১৮৮৫), মোহনবাগান (১৮৮৯), এরিয়ান্স (১৮৮৯), মহামেডান স্পোর্টিং (১৮৯১) এবং স্পোর্টিং ইউনিয়ন (১৮৯৫) উল্লেখযোগ্য। প্রথম দিকে খালি পায়ে খেলার সময়েই বাঙালি ফুটবলাররা ইউরোপের সামরিক ও অসামরিক দলগুলির বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতায় সফল হন। পরবর্তীতে ১৯০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ কলকাতা ও মফস্বলে বহু ফুটবল ক্লাব প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে দুর্ধর্ষ ব্রিটিশ দলের বিরুদ্ধে মোহনবাগান ক্লাবের হয়ে বাংলার খেলোয়াড়রা জয়লাভ করে। জিতে নেয় আইএফএ শিল্ড। এর সঙ্গেই কলকাতা পরিচিত হয় ভারতীয় ফুটবলের রাজধানী হিসেবে। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ থেকে বাংলা দল সন্তোষ ট্রফি প্রতিযোগিতায় ৩১ বার জয়লাভ করে, ফাইনালে পৌঁছোয় ৪৩ বার। কলকাতার মাঠে ৭০-৮০-র দশক থেকে তোলপাড় তোলে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের ম্যাচ। এর সঙ্গে জড়িয়ে যায় 'বাঙাল-ঘটির' লড়াইয়ের এক মজার বাঙালি সংস্কৃতি। রেডিয়োতে ফুটবলের ধারাবিবরণী শুনেই তখন বাঙালি যুদ্ধক্ষেত্রে জয়পরাজয়ের অনুভূতি লাভ করত। কলকাতা ফুটবলের ইতিহাস খুঁজলে মোটামুটি তিনটি পর্বের উল্লেখ পাওয়া যায়- (১) প্রীতিম্যাচ পর্ব, (২) ট্রেডস ফুটবল কাপ পর্ব এবং (৩) অ্যাসোসিয়েশন বা সংগঠিত ফুটবলের পর্ব। ব্যক্তিনাম হিসেবে বাঙালির ফুটবলের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য নগেন্দ্রপ্রসাদ, কালীচরণ মিত্র, হরিদাস শীল, মন্মথ গাঙ্গুলি এবং নরেন্দ্রনাথ দত্ত। প্রখ্যাত বাঙালি ফুটবলার হিসেবে গোষ্ঠ পাল, চুনী গোস্বামী, পিকে ব্যানার্জি, তুলসীদাস বলরাম, শৈলেন মান্না প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
প্রশ্ন.3 প্রথম ভারতীয় দল হিসেবে আই এফ এ শিল্ড জয়ী মোহনবাগান ক্লাবের ইতিহাস পর্যালোচনা করো।
উত্তরঃ ইংরেজ শাসনাধীন ভারতবর্ষে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে মোহনবাগান ক্লাব (প্রতিষ্ঠা ১৮৮৯) প্রথম ভারতীয় দল হিসেবে আইএফএ শিল্ড প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়। ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে কলকাতায় আইএফএ শিল্ড প্রতিযোগিতা শুরু হলেও মোহনবাগান ক্লাব ১৯০৯-এ প্রথম এতে অংশগ্রহণ করে। ১৯১১-র ১০ জুলাই শিল্ডের খেলা শুরু হয়। প্রথম ম্যাচে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ দল
৩-০-য় হেরে যায়। গোল করেন অভিলাষ ঘোষ এবং বিজয়দাস ভাদুড়ি। ১৪ জুলাই রেঞ্জার্স ক্লাবকে মোহনবাগান ২-১ গোলে হারিয়ে দেয়। গোলদাতা ছিলেন বিজয়দাস ভাদুড়ি এবং শিবদাস ভাদুড়ি। এরপর মোহনবাগান কোয়ার্টার ফাইনালে রাইফেল ব্রিগেডকে ১-০ গোলে হারিয়ে দেয়। ২৪ জুলাই মিডলসেক্সের সঙ্গে ডালহৌসি মাঠে ১-১ ড্র করার পরবর্তী ম্যাচে ২৬ জুলাই ৩-০ গোলে মোহনবাগান জয় লাভ করে ফাইনালে চলে যায়। গোল করেন হাবুল সরকার, শিবদাস ভাদুড়ি এবং কানু রায়। শেষ পর্যন্ত ২৯ জুলাই অত্যাচারী ইংরেজদের বিরুদ্ধে খেলার মাঠে জয়ের স্বপ্ন নিয়ে নেমে লাখখানেক দর্শকের সামনে খালি পায়ে দুর্ধর্ষ ফুটবল খেলে ইস্টইয়র্ক দলের বিরুদ্ধে ২-১ গোলে জিতে চ্যাম্পিয়ন হয় মোহনবাগান। গোল করেন শিবদাস ভাদুড়ি এবং অভিলাষ ঘোষ। খেলার মাঠে বাঙালির সেই অবিশ্বাস্য সংগ্রামে সমগ্র জাতি যেন পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্ত হয়। এই জয়ের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতাকামী পরাধীন জাতি তার লুপ্ত আত্মসম্মানবোধ ও মর্যাদা ফিরে পায়।
প্রশ্ন.4 'জাদুবিশ্বাস' সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তরঃ ম্যাজিক বা জাদুবিশ্বাস হল এক আদিম অথচ বর্তমান সমাজেও সুলভ- একপ্রকার লোকবিশ্বাস। আদিম মানুষ কোনো প্রাকৃতিক বা জাগতিক ঘটনার কার্যকারণ বিশ্লেষণ করতে যখনই বৈজ্ঞানিক চেতনার অপ্রতুলতার কারণে ব্যর্থ হয়েছে, তখন তারা ওই কাজ বা ঘটনার কারণ বা নিয়ন্ত্রক হিসেবে এক অদৃশ্য শক্তির কথা কল্পনা করেছে। এই বিশেষ শক্তিরই নাম 'মান্যা'-যাকে তারা জীবজগৎ থেকে শুরু করে বিভিন্ন নৈসর্গিক ঘটনায়, এমনকি জড়বস্তুর মধ্যেও বিদ্যমান বলে মনে করত। এই 'মান্যা'র ধারণা থেকেই পরবর্তীকালে সর্বপ্রাণবাদ, দেবতা, ধর্মবিশ্বাস, টোটেম, জাদুবিশ্বাস প্রভৃতির উদ্ভব বলে গবেষকেরা মনে করে থাকেন। জাদুকে সাধারণত দু-ভাগে ভাগ করা যায়-(১) অনুকরণাত্মক/অনুকৃতিমূলক জাদু এবং (২) সংযোগমূলক/ সংক্রামক/সংস্পর্শমূলক জাদু।
লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, জাদুকে এমন এক অতিপ্রাকৃত শক্তি মনে করা হয়, যার দ্বারা নিজের বা অন্যের মঙ্গলসাধন এবং শত্রুপক্ষের অমঙ্গলসাধন সম্ভব। এর নিরিখে জাদুকে আবার White Magic (হিতকারী জাদু) এবং Black Magic (অহিতকারী জাদু) এই দুইভাগে ভাগ করা যায়। বৈদিক যাগযজ্ঞ, উর্বরতা বিষয়ক নানান আচার-অনুষ্ঠান, দেবতাকে পশু উৎসর্গ ইত্যাদির মধ্যে হিতকারী জাদুর প্রভাব দেখা যায়।
আধুনিক মানুষও জীবনে নানাবিধ অনিশ্চয়তার থেকে রক্ষা পেতে কখনও আংটি, তাবিজ, কবচ, মাদুলি প্রভৃতি ধারণ করে এই জাদুশক্তির ওপর ভরসা রাখে। এভাবেই আদিম নানান সংস্কার-বিশ্বাসের মতো জাদুবিশ্বাসও আজকের পৃথিবীর বিজ্ঞান-শাসিত সময়েও নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রেখেছে।
EDITING BY--Liza Mahanta