Chapter--16

রূপতত্ত্ব

---------------------------

MCQ


1. রূপমূল হল-

(a) ভাষার ক্ষুদ্রতম অর্থপূর্ণ একক  

(b) পদের গঠনবৈচিত্র্য

(c) শব্দার্থের উপাদান

(d) ভাষার ক্ষুদ্রতম উচ্চারণগত একক


2. একই পদ পাশাপাশি দু-বার বসার প্রক্রিয়াকে বলে-

(a) সমাস

(b) সন্ধি

(c) পদদ্বৈত  

(d) প্রত্যয়


3. VIP হল একটি

(a) অনুকার শব্দ

(b) জোড়কলম শব্দ

(c) মুন্ডমাল শব্দ  

(d) বিকল্পন


4. 'মা' হল-

জটিল রূপমূল 

বন্ধ রূপমূল

মিশ্র রূপমূলঘ

মুক্ত রূপমূল  


5. 'ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমি' কী ধরনের শব্দ?

(a) শূন্যরূপ

(b) ফাঁকা রূপ  

(c) জোড়কলম রূপ 

(d) মিশ্র রূপ


6. 'লুচি-ফুচি' শব্দটি হল-

(a) পদদ্বৈত

(b) ধনাত্মক শব্দ

(c) বিকল্পনঘ

(d) অনুকার পদ  


7. রূপতত্ত্বের প্রধান আলোচ্য বিষয়ক

(a) শব্দধ্বনির গঠন বিশ্লেষণ

(b) শব্দের গঠনপ্রণালী বিশ্লেষণ  

(c) শব্দার্থ পরিবর্তন ও রীতি বিশ্লেষণ 

(d) শব্দের দল বিন্যাসকরণ


8. মহাকবি'-এটি কী ধরনের সমাস? 

(a) দ্বন্দ্ব সমাস

(b) ব্যাখ্যানমূলক সমাস  

(c) বর্ণনামূলক সমাস

(d) কোনোটিই নয়


9. নির্দেশকের ভাষাতাত্ত্বিক চেহারা হল-

(a) রূপমূল  

(a) সহরূপ

(c) রূপ

(d) ৰূপতত্ত্ব


10. দুটি রূপের সমবায়কে বলে-

(a) সমন্বয়ী রূপমূল

(b) জটিল রূপমূল

(c) মিশ্র রূপমূল  

(d) শূন্য রূপ


11.কোন্ রূপমূলটি একটি মিশ্র রূপমূল?

(a) পদ্মলোচন  

(b) ছেলেমি

(c) গড়ন

(d) মহিলারা


12. ভাষাবিজ্ঞানের কোন্ শাখায় শব্দের গঠন ও রূপবৈচিত্র্য সংক্রান্ত আলোচনা হয়?

(a) ধ্বনিতত্ত্ব

(b) রূপতত্ত্ব  

(c) বাক্যতত্ত্বঘ

(d) শব্দার্থতত্ত্ব


13. পরাধীন ব্যাকরণসম্মত রূপমূল কত প্রকার? 

(a) দুই  

(b) তিন

(c) চার
(d) পাঁচ


14 . টুপটাপ' কী ধরনের শব্দ? 

(a) অনুকার পদ সংগঠন  

(b) ক্লিপিংস

(c) বিকল্পন

(d) মুণ্ডমাল শব্দ


15. উপসর্গ এক ধরনের-

(a) অব্যয়  

(b) বিশেষ্য

(c) বিশেষণ

(d) সর্বনাম


16. বাগ্যন্ত্রের একবারের চেষ্টায় উচ্চারিত ধ্বনি বা ধ্বনিসমূহ হল

(a) রূপ

(b) শব্দ

(c) ধ্বনি

(d) দল  


17. ভাষার অর্থপূর্ণ, ক্ষুদ্রতম একক হল-

(a) রূপ  

(b) শব্দ

(c)দল

(d) পদ


18. অর্থের বদল না ঘটিয়ে যখন রূপের বৈচিত্র্য দেখা যায়, তখন সেই বৈচিত্র্যগুলোকে বলে-

রূপমূল

সহরূপ  

মুক্তরূপ

বন্ধরূপ


19. শব্দকে আমরা সম্পূর্ণ একক রূপে পাই-

(a) পদে

(b) বাক্যে

(c) অভিধানে  

(d) রূপমূলে


20. একটি রূপমূলের পরিবারের একটা রূপের বিকল্প- 

(a) সহরূপমূল  

(b) স্বাধীন রূপমূল

(c) পরাধীন রূপমূল

(d) দল


21. রূপ-এর নিজস্ব অর্থ-

(a) থাকে  

(b) থাকে না 

(c) অল্পক্ষেত্রে থাকে

(d) বেশিরভাগ ক্ষেত্রে থাকে


22. মৌলিক ভাবপ্রদানকারী অবিভাজ্য পদ বা পদাংশই হল-

(a) প্রতিপাদক

(b) প্রকৃতি  

(c) সহরূপ

(d) প্রত্যয়


23. ব্যাবহারিক প্রয়োগ অনুযায়ী প্রত্যয় কত প্রকার? 

(a) দুই  

(b) তিন

(c) চার

(d) পাঁচ


24. যে-সমস্ত রূপমূলের অর্থ অভিধান ঘেঁটে বের করা যায়, তা-

(a) ব্যাকরণসম্মত রূপমূল

(b) আভিধানিক রূপমূল  

(c) সমন্বয়ী রূপমূলঘ

(d) নিষ্পাদিত রূপমূল


25. বিভক্তি কোন্ জাতীয় রূপমূল? 

(a) আভিধানিক

(b) সমন্বয়ী  

(c) নিষ্পাদিত

(d) স্বাধীন


Short Question Answer


1. রূপতত্ত্বের আলোচ্য বিষয় কী?

উত্তব়ঃ রূপতত্ত্বের আলোচ্য বিষয় হল শব্দের নানা দিক, অর্থাৎ তার গঠন, রূপবৈচিত্র্য, রূপবৈচিত্র্য সাধনের বিভিন্ন উপকরণ যেমন-প্রত্যয়, বিভক্তি ইত্যাদি।


2. 'আমসত্ত্ব' কথাটি একটি রূপ রূপ নয় কেন?

উত্তব়ঃ এর কারণ, এটি ক্ষুদ্রতম ধ্বনিসমষ্টি নয়। একে ক্ষুদ্রতর দুটি অর্থপূর্ণ ধ্বনিসমষ্টিতে ভাগ করা যায়- 'আম' ও 'সত্ত্ব'। তাই 'আমসত্ত্ব' রূপ নয়, সমস্তপদ।


3. 'বাঘের' শব্দটির রূপ বিভাগ করে দেখাও কোল্টি কী ধরনের রূপ?

উত্তব়ঃ 'বাঘের' শব্দটিকে ভাঙলে দুটি রূপ পাওয়া যাবে। 'বাঘ' ও 'এর'। 'বাঘ' হল মুক্ত রূপ এবং 'এর' হল বন্ধ রূপ।


4. শব্দের সঙ্গে রূপের একটা পার্থক্যের সূত্র নির্দেশ করো।

উত্তব়ঃ সব শব্দই একা একা ব্যবহৃত হতে পারে, কিন্তু সব রূপই একা একা ব্যবহৃত হতে পারে না।


5. মুক্ত রূপমূল কাকে বলে?

উত্তব়ঃ যে অর্থপূর্ণ ক্ষুদ্রতম ধ্বনিসমষ্টি অন্য ধ্বনিসমষ্টির সঙ্গে যুক্ত না হয়েও স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত হতে পারে, তাকে মুক্ত রূপমূল বলে। যেমন-আম।


6. বদ্ধ রূপমূল বলতে কী বোঝ?

উত্তব়ঃ যে অর্থপূর্ণ ক্ষুদ্রতম ধ্বনিসমষ্টি কখনও অন্য ধ্বনিসমষ্টির সঙ্গে যুক্ত না হয়ে স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত হতে পারে না, তাই বন্ধ রূপমূল। যেমন-'ছেলেটি'র 'টি'।


7. বাংলায় একটি জোড়কলম শব্দের উদাহরণ দাও।

উত্তব়ঃ বাংলায় একটি জোড়কলম শব্দের উদাহরণ হল 'ধোঁয়াশা', যা 'ধোঁয়া' শব্দের প্রথমাংশ এবং 'কুয়াশা' শব্দের শেষাংশ জুড়ে তৈরি।


8. দুটি পরাধীন রূপমূলের উদাহরণ দাও।

উত্তব়ঃ তামাটে শব্দের 'টে' (প্রত্যয়) এবং অভিন্ন শব্দের 'অ' (উপসর্গ) হল পরাধীন রূপমূল।


9. মিশ্র রূপমূলের প্রধান বৈশিষ্ট্য কী?

উত্তব়ঃ দুটি মুক্ত রূপমূল সহযোগে একটি মিশ্র রূপমূল গঠিত হলে মুক্ত রূপমূল দুটির পূর্ব অর্থের বদলে একটি নতুন অর্থ প্রকাশিত হয় (যেমন- 'গাং' + 'চিল' = গাংচিল)।


10. জটিল রূপমূলের সংজ্ঞা-সহ উদাহরণ দাও।

উত্তব়ঃ দুইয়ের বেশি মুক্ত রূপমূলের সংযোগে যে রূপমূল গঠিত হয়, তাকে জটিল রূপমূল বলা হয়। বাংলায় একটি জটিল রূপমূল হল-বহুবর্ণপাথর।


11. দুই-এর বেশি রূপমূলের সমবায়কে কী বলা হয়?

উত্তব়ঃ দুই-এর বেশি রূপমূলের সমবায়কে বলা হয় জটিল রূপমূল। যেমন-জাতীয়তাবাদ।


12. 'মা' শব্দটিকে আমরা মৌলিক শব্দ বলি কেন?

উত্তব়ঃ একটি মাত্র রূপিম নিয়ে গঠিত শব্দকে মৌলিক শব্দ বলে। 'মা' শব্দটিও একটি মাত্র রূপিম দ্বারা গঠিত (কারণ 'মা'-কে ভাঙলে আমরা পাব 'ম্' + 'অ', যার কোনো অর্থ নেই)। তাই 'মা' মৌলিক শব্দ।


13. জটিল শব্দ কাকে বলে?

উত্তব়ঃ এক বা একাধিক মুক্ত রূপিমের সঙ্গে এক বা একাধিক বন্ধ রূপিমের সংযোগে অথবা শুধুই একাধিক বন্ধ রূপিমের সংযোগে গঠিত শব্দকে জটিল শব্দ বলে। যেমন-ছেলে মি ছেলেমি।


14. 'দেশ + বিদেশ = দেশবিদেশ'-এই ধরনের শব্দগঠনকে ব্যাকরণের ভাষায় কী বলে?

উত্তব়ঃ আমরা জানি, যে শব্দ একাধিক মুক্ত রূপিম বা একাধিক শব্দ নিয়ে গঠিত, তাকে সমাসবদ্ধ শব্দ বলে। তাই 'দেশবিদেশ' একটি সমাসবদ্ধ শব্দ।


15. ব্র্যানবেরি রূপমূলের একটি উদাহরণ দাও।"

উত্তব়ঃ আলাপ, প্রলাপ, বিলাপ, সংলাপ-ইত্যাদি শব্দের 'লাপ' অংশটি ব্র্যানবেরি রূপমূলের উদাহরণ।


16. ভাষাবিজ্ঞানে 'রূপ' কাকে বলে?

উত্তব়ঃ ভাষাবিজ্ঞানে রূপ হল ভাষার সবচেয়ে ছোটো অর্থপূর্ণ একক।


17. রূপতত্ত্ব কোন্ বিষয় নিয়ে কাজ করে?

উত্তব়ঃ রূপতত্ত্ব ভাষার ক্ষুদ্রতম অর্থপূর্ণ একক নিয়ে অর্থাৎ রূপ (Morph) নিয়ে কাজ করে।


18. শব্দকে আমরা সম্পূর্ণ একক রূপে কোথায় পাই?

উত্তব়ঃ শব্দকে আমরা সম্পূর্ণ একক রূপে অভিধানে পাই।


19. দল কাকে বলে?

উত্তব়ঃ বাগ্যন্ত্রের একবারের চেষ্টায় উচ্চারিত ধ্বনি বা ধ্বনিসমূহই দল।


20. সহরূপ কী?

উত্তব়ঃ কোনো রূপ-এর অর্থ না পালটে যদি তার একাধিক বিভিন্ন রূপভেদ দেখা যায়, তবে রূপের সেই বিচিত্র রূপভেদগুলিকে বলে সহরূপ।


21. রূপমূল কী?

উত্তব়ঃ প্রতিটি রূপ (ভাষার ক্ষুদ্রতম, অর্থপূর্ণ একক)-এর মূল ধারণা হল রূপমূল।


22. স্বাধীন রূপমূল কাকে বলে?

উত্তব়ঃ ভাষার ক্ষুদ্রতম, অর্থপূর্ণ একক (অর্থাৎ রূপ) স্বাধীনভাবে বাক্যে তথা ভাষায় ব্যবহৃত হলে তাকে বলে স্বাধীন রূপমূল। স্বাধীন রূপমূল হল মৌলিক শব্দ।


23. পরাধীন রূপমূল কাকে বলে?

উত্তব়ঃ ভাষার ক্ষুদ্রতম, অর্থপূর্ণ একক (অর্থাৎ রূপ) স্বাধীনভাবে বাক্যে তথা ভাষায় ব্যবহৃত হতে না পারলে তাকে বলে পরাধীন রূপমূল। যেমন-উপসর্গ, প্রত্যয়, বিভক্তি।


24. 'প্রকৃতি' কাকে বলে?

উত্তব়ঃ মৌলিক ভাব প্রদান করে এমন অবিভাজ্য ভাষাখণ্ডই হল প্রকৃতি।


25. প্রকৃতি কত প্রকার ও কী কী?

উত্তব়ঃ প্রকৃতি দু-প্রকার-নামপ্রকৃতি এবং ধাতুপ্রকৃতি।


26. প্রাতিপদিক বা স্টেম কী?

উত্তব়ঃ প্রকৃতি ও প্রত্যয়ের যোগে যে শব্দ তৈরি হয়, তাকে বলে প্রাতিপদিক। প্রাতিপদিকের সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত হয়।


27. ধাতুপ্রকৃতি কাকে বলে?

উত্তব়ঃ যে প্রকৃতির মধ্য দিয়ে কাজ করার অর্থ প্রকাশিত হয়, তাকে বলা হয় ধাতুপ্রকৃতি। যেমন-যা, চল্, বল্ ইত্যাদি।


28.নামপ্ৰকৃতি কাকে বলে

উত্তব়ঃ যে প্রকৃতির মধ্য দিয়ে কাজ করার অর্থ ছাড়া অন্য কোনো অর্থ প্রকাশিত হয়, তাকে বলে নামপ্রকৃতি। যেমন-গাছ, হাত ইত্যাদি।


29. সহরূপ হওয়ার মৌলিক শর্তদুটি কী কী?

উত্তব়ঃ (১) একটি রূপের সহরূপগুলোর অর্থগত সাদৃশ্য থাকতে হবে, (২) সহরুপগুলোকে একে অপরের পরিপুরক হতে হবে বলে এক সহরূপের স্থানে অন্য সহরুপ নেওয়া যাবে না।


30. প্রত্যয় কাকে বলে?

উত্তব়ঃ যে ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি নাম-শব্দ বা ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ তৈরি করে, তাকে বলে প্রত্যয়।


31. কৃৎ প্রত্যয় কাকে বলে?

উত্তব়ঃ যে প্রত্যয় কেবল ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হয়, তাকে বলে কৃৎ প্রত্যয়। যেমন-√পূজ + অনীয় = পূজনীয়। এখানে অনীয় কৃৎ প্রত্যয়।


32. তদ্ধিত প্রত্যয় কাকে বলে?

উত্তব়ঃ যে প্রত্যয় নাম-শব্দের সঙ্গেই কেবল যুক্ত হয়, তাকে বলে তদ্ধিত প্রত্যয়। যেমন-বাঁশি + ওয়ালা = বাঁশিওয়ালা। এখানে 'ওয়ালা' তদ্ধিত প্রত্যয়।


33. প্রত্যয়ের ফলে পদ-পরিবর্তনের একটি উদাহরণ দাও।

উত্তব়ঃ চালাক + ই = চালাকি। এখানে 'চালাক' এই বিশেষণ নাম-শব্দের সঙ্গে তদ্ধিত প্রত্যয় 'ই' যুক্ত হয়ে 'চালাকি' এই বিশেষ্য নাম-শব্দ তৈরি করেছে।


34. ভিত্তি কাকে বলে?

উত্তব়ঃ শব্দ বা পদের যে অংশ কোনো নির্দিষ্ট প্রত্যয় বা উপসর্গের ভিত হিসেবে কাজ করে, সেই অংশকে বলে ভিত্তি।


35. বিভক্তি কাকে বলে?

উত্তব়ঃ যে ধ্বনি বা ধ্বনিগুচ্ছ শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শব্দকে পদে পরিণত করে এবং বাক্য-মধ্যস্থ পদগুলির পারস্পরিক সম্পর্ক তৈরি করে, তাকে বলে বিভক্তি।


36. আভিধানিক রূপমূল কাকে বলে?

উত্তব়ঃ যেসব রূপমূলের অর্থ অভিধান ঘেঁটে বের করা যায়, সেইসব রূপমূলকে বলে আভিধানিক রূপমূল। যেমন মৌলিক শব্দ, উপসর্গ ইত্যাদি।


37. ব্যাকরণসম্মত রূপমূল কাকে বলে?

উত্তব়ঃ যেসব রূপমূলের অর্থ অভিধান ঘেঁটে বের করা না গেলেও ব্যাকরণে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাদের বলে ব্যাকরণসম্মত রূপমূল। যেমন-প্রত্যয়, অনুসর্গ ইত্যাদি।


38. ব্যাকরণসম্মত রূপমূল কত প্রকার ও কী কী?

উত্তব়ঃ ব্যাকরণসম্মত রূপমূল দুই প্রকারের-পরাধীন এবং স্বাধীন। প্রত্যয় হল পরাধীন ব্যাকরণসম্মত রূপমূল, অনুসর্গ হল স্বাধীন ব্যাকরণসম্মত রূপমূল।


39. পরাধীন ব্যাকরণসম্মত রূপমূল কত প্রকার ও কী কী?

উত্তব়ঃ পরাধীন ব্যাকরণসম্মত রূপমূল দু-প্রকারের-সমন্বয়ী রূপমূল এবং নিষ্পাদিত রূপমূল।


40. সমন্বয়ী রূপমূল কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

উত্তব়ঃ যে পরাধীন রূপমূল শব্দকে পদে পরিণত করে এবং তার পর অন্য কোনো রূপমূল তার সঙ্গে বসে না, তাকে বলে সমন্বয়ী রূপমূল। যেমন-বিভক্তি।


Long Question Answer


প্রশ্ন.1 জোড়কলম শব্দ সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তরঃ একাধিক রূপের মিশ্রণের ফলেই তৈরি হয় পোর্টম্যানটু ওয়ার্ড বা জোড়কলম শব্দ। যখন একটি শব্দ বা শব্দাংশের সঙ্গে অন্য শব্দ বা শব্দাংশ জুড়ে একটি নতুন শব্দ তৈরি করা হয়, তখন তাকে বলে জোড়কলম শব্দ। যেমন-আরবি 'মিন্নৎ' শব্দের প্রথমাংশ এবং সংস্কৃত 'বিজ্ঞপ্তি' শব্দের শেষাংশ জুড়ে তৈরি হয়েছে জোড়কলম শব্দ 'মিনতি'। জোড়কলম শব্দ 'ধোঁয়াশা' সৃষ্টি হয়েছে তেমনি 'ধোঁয়া' শব্দের প্রথমাংশ এবং 'কুয়াশা' শব্দের শেষাংশ জুড়ে। জোড়কলম শব্দসৃষ্টি তাই রূপের মিশ্রণগত নিষ্পাদন প্রক্রিয়া। জোড়কলম শব্দ এমনই এক রূপমূল যা দিয়ে একাধিক রূপ-বাক্যতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য বোঝানো হয়। একাধিক রূপমূলের সমবায় হল জোড়কলম শব্দ। যে দুটি শব্দের যোগসাধন ঘটে, তাদের অর্থ জোড়কলম শব্দে সমানভাবে গুরুত্ব পায়।


প্রশ্ন.2 সমাস বলতে কী বোঝ? উদাহরণ-সহ বুঝিয়ে দাও। সমাসবদ্ধ পদের গঠনবৈশিষ্ট্য অনুযায়ী সমাসের ভাগগুলি উদাহরণ-সহ উল্লেখ করো।

উত্তরঃ পদের যে গঠন-প্রক্রিয়ায় একাধিক পদ একত্র জুড়ে একটি বড়ো পদের জন্ম দেয়, সেই গঠন-প্রক্রিয়াকে বলে সমাস। যেমন, 'কাগজ' ও 'পত্র' পদ দুটি একত্র যুক্ত হয়ে তৈরি হয়েছে 'কাগজপত্র' পদটি। এই যে 'কাগজপত্র' পদটি তৈরি হল, তার গঠন-পদ্ধতিটি হল সমাস। সমাসের ফলে যে পদ তৈরি হয় তাকে বলে সমস্তপদ বা মিলিত পদ। 'কাগজপত্র' তাই মিলিতপদ বা সমস্তপদ। 

সমাসবদ্ধ পদের গঠনবৈশিষ্ট্য অনুযায়ী সমাসকে তিনভাগে ভাগ করা যায়-(১)সংযোগমূলক সমাস,(২) ব্যাখ্যানমূলক সমাস(৩)বর্ণনামূলক সমাস। সংযোগমূলক সমাস: যে জাতীয় সমাসে একাধিক পদ সংযুক্ত হয় কিন্তু পদগুলির নিজস্ব অর্থের কোনোরকম পরিবর্তন ঘটে না, তাকে বলে সংযোগমূলক সমাস। দ্বন্দ্ব সমাস হল সংযোগমূলক সমাস। এই সমাসে একাধিক সমার্থক বা প্রায়-সমার্থক শব্দ পাশাপাশি বসে অথবা দুই বিপরীতার্থক পদ একসঙ্গে বসে। তবে এ সমাসে ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি বা বস্তুর সমন্বয় বোঝায় না, পরন্তু একই ব্যক্তি বা বস্তুর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের সমন্বয় বোঝায়। যেমন, জলবায়ু, দীনদরিদ্র, টাকাপয়সা, ছোটো-বড়ো, স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল ইত্যাদি।

ব্যাখ্যানমূলক সমাস: যে সমাসের পাশাপাশি-বসা দুটি পদের মধ্যে প্রথম পদটি দ্বিতীয় পদটিকে ব্যাখ্যা করে, তাকে বলে ব্যাখ্যানমূলক সমাস। যেমন-মহাকবি, মিশ-কালো, গোলাপ-লাল। কর্মধারয়, তৎপুরুষ সমাস এই জাতীয়।

বর্ণনামূলক সমাস: যে সমাসের সমস্তপদের মধ্য দিয়ে পূর্ববর্তী বা পরবর্তী কোনো পদের অর্থই প্রাধান্য পায় না, বরং অন্য কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর অর্থটি প্রাধান্য পায়, তাকে বলে বর্ণনামূলক সমাস। যেমন-বহুব্রীহি সমাস। যেমন চন্দ্রমুখী, ক্ষুরধার, হাতাহাতি।


প্রশ্ন.3 মুণ্ডমাল শব্দ কাকে বলে? উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দাও

উত্তরঃ কোনো শব্দগুচ্ছ বা বাক্যাংশ (Phrase)-এর প্রতিটি শব্দ তথা পদের প্রথম ধ্বনি বা দল (Syllable)-এর সমাবেশ ঘটিয়ে যখন একটি নতুন শব্দ তৈরি করা হয়, তখন সেই শব্দকে বলে মুণ্ডমাল শব্দ বা অ্যাক্রোনিম। ইংরেজি ভাষায় এই জাতীয় শব্দের সংখ্যা অগণিত এবং সেগুলি অভিধানসম্মত। যেমন- VIP (<Very Important Person), BBC (<British Broadcasting Corporation), প্রতিটি প্রশ্নের  DM (< District Magistrate), BA (Bachelor of Arts), News (<North East West South) ইত্যাদি। লেসার, রাডার, ইউনেসকো ইত্যাদিও এই জাতীয় শব্দ। বাংলায় মুন্ডমাল শব্দ অপ্রতুল। যেমন-সসেমিরা (সদ্‌ভাব সেতু মিত্রদ্রোহী রাজা), ল.সা.গু (লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক), গ.সা.গু (পরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক), পিপুফিশু (পিঠ পুড়ছে, ফিরে শুই।)


প্রশ্ন.4 ক্লিপিংস ও ব্র্যানবেরি রূপমূল কাকে বলে তা উদাহরণ-সহ আলোচনা করো।

উত্তরঃ ক্লিপিংস: এই রূপতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ায় একটি শব্দ আকৃতিতে ছোটো হয়ে যায়, অথচ তার ব্যাকরণগত ও অর্থগত কোনো পরিবর্তন হয় না। যেমন-ছোটোকাকা > ছোটকা, বড়োদাদা > বড়দা। ইংরেজি ভাষায় ক্লিপিংস ওয়ার্ড বা সংক্ষেপিত পদের উদাহরণ বেশি পাওয়া যায়। যেমন-এরোপ্লেন > প্লেন, মাইক্রোফোন > মাইক, টেলিফোন > ফোন।

ব্র্যানবেরি রূপমূল: যেসব পরাধীন রূপমূলের আভিধানিক অর্থ আপাতভাবে নেই এবং কোনো ব্যাকরণসম্মত অর্থও থাকে না, অথচ তা একটি শব্দকে অন্য শব্দ থেকে পৃথক করে, তাকে বলে ব্র্যানবেরি রূপমূল। যেমন-আলাপ, প্রলাপ, বিলাপ, সংলাপ শব্দগুলির 'লাপ' এই পরাধীন রূপমূল। 'লাপ' রূপমূলের আপাত অর্থ না থাকলেও এই তৎসম শব্দের ব্যুৎপত্তি হল, লিপ্ (কথা বলা) + ভাববাচ্য অর্থযুক্ত 'ঘ' (> অ)। 'লাপ'-এর অর্থ তাই 'কথা বলা'।


প্রশ্ন.5 রূপ এবং দল-এর সাদৃশ্য এবং বৈসাদৃশ্য আলোচনা করো।

উত্তরঃ ভাষার সবচেয়ে ছোটো অর্থপূর্ণ একক হল রূপ (Morph)। আর, নিশ্বাসের এক-একটি ধাক্কা (One breath impulse)-তে উচ্চারিত ধ্বনি বা ধ্বনিগুচ্ছ হল দল বা অক্ষর (Syllable)। রূপ-এর অর্থ সর্বদা থাকলেও দল-এর অর্থ থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে। মোট কথা, রূপ-এর ক্ষেত্রে অর্থের কদর আছে। কিন্তু দল-এর ক্ষেত্রে অর্থের কদর নেই। তবে, যে দল অর্থপূর্ণ, তা অবশ্যই রূপ-এর মর্যাদা পায়। তা দলও বটে, রূপও বটে। যেমন-'বিদেশ' শব্দটির দুটি দল-'বি' এবং 'দেশ'। এই দল দুটি আবার রূপও বটে। কেন-না 'বি' উপসর্গ এবং 'দেশ'। এই দল দুটি আবার রূপও বটে। কেন-না 'বি' উপসর্গ এবং 'দেশ' নাম-শব্দ বলে তারা উভয়েই অর্থপূর্ণ ধ্বনিগুচ্ছ। আবার, যে দল-এর কোনো অর্থ নেই, তা শুধুই দল, রূপ নয়। যেমন 'বাচ্চা' শব্দের দুটো দল-'বাচ্' ও 'চা'। দুটিই দল, কিন্তু কোনোটিই রূপ নয়। রূপ কখনও দল-এর মতো ক্ষুদ্র হতে পারে, কখনও নাও হতে পারে। কখনো-কখনো একাধিক দল-এ তৈরি রূপ পাওয়া যায়। যেমন-'হাসপাতাল' শব্দটি। এটি তিনটি দল (হাস্ + পা + তাল) নিয়ে তৈরি হলেও এটি একটি রূপ। কিন্তু একাধিক রূপ দিয়ে তৈরি দল-এর অস্তিত্ব বাংলা ভাষায় নেই। কারণ, দল-এর চেয়ে ক্ষুদ্র একক রূপ নয়। দল হল উচ্চারণগত অর্থাৎ ধ্বনিগত একক, আর রূপ হল অর্থগত একক।


প্রশ্ন.6 রূপমূল কাকে বলে? উদাহরণ-সহ স্বাধীন ও পরাধীন রূপমূলের পরিচয় দাও|

উত্তরঃ এক বা একাধিক ধ্বনি দ্বারা গঠিত অর্থপূর্ণ ক্ষুদ্রতম একক হল রূপমূল (Morpheme) I রূপমূল দু-প্রকারের-মুক্ত রূপমূল বা স্বাধীন রূপমূল (Free Morpheme) এবং বন্ধ রূপমূল বা পরাধীন রূপমূল (Bound Morpheme) | যে অর্থপূর্ণ, ক্ষুদ্রতম ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি অন্য ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টির সহযোগ ছাড়াই স্বাধীনভাবে বাক্যে ব্যবহৃত হতে পারে, তাকে বলে মুক্ত বা স্বাধীন রূপমূল। আর, যে অর্থপূর্ণ, ক্ষুদ্রতম ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি সর্বদা অন্য ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টির সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাক্যে ব্যবহৃত হয়, কখনও স্বাধীনভাবে বাক্যেব্যবহৃত হতে পারে না, তাকে বলে বন্ধ বা পরাধীন রূপ। যেমন-'বেড়ালগুলো'র 'বেড়াল' হল মুক্ত রূপমূল এবং 'গুলো' হল বন্ধ রূপমূল। ধাতু, মৌলিক নাম-শব্দ, অনুসর্গ হল মুক্ত রূপমূল। আর, উপসর্গ, প্রত্যয়, বিভক্তি, নির্দেশক ইত্যাদি হল বন্ধ রূপমূল। তবে ধাতু (যেমন-তুই বাড়ি যা) বা মৌলিক নাম-শব্দ (যেমন-বাড়ি যাচ্ছি)। কিন্তু শূন্যবিভক্তি অর্থাৎ শূন্য রূপ সহযোগে পদে পরিণত হয়, অর্থাৎ বাক্যে প্রবেশ করে।


প্রশ্ন.7 রূপতত্ত্বের সংজ্ঞা দিয়ে তার আলোচনার বিষয়টি স্পষ্ট করো।

উত্তরঃসংজ্ঞা: এক বা একাধিক ধ্বনির সম্মিলনে যে অর্থপূর্ণ ক্ষুদ্রতম একক গঠিত হয়, তাকে রূপমূল বলে। কোনো ভাষার রূপমূলগুলি এবং তাদের পরিবেশগত বৈচিত্র্য নির্ণয় করাকে রূপমূলবিজ্ঞান বা রূপিমবিজ্ঞান (Morphemic) বলে। রূপমূল দিয়ে কী করে শব্দ গঠিত হয়, শব্দ ও ধাতুর সঙ্গে কী কী শব্দবিভক্তি, ক্রিয়াবিভক্তি ও প্রত্যয় যোগ হয়, যোগ হওয়ার ফলে শব্দরূপ ও ক্রিয়ারূপ কী রকম হয়, ইত্যাদি বিষয় ভাষাবিজ্ঞানের যে বিভাগে আলোচিত হয়, তাকেই রূপতত্ত্ব (Morphology) বলে।


আলোচ্য বিষয়: পদ এবং শব্দের গঠন ও রূপবৈচিত্র্যই হল রূপতত্ত্বের প্রধান আলোচ্য বিষয়।

যে-কোনো ভাষার রূপতত্ত্বের আলোচনায় প্রথম আলোচিত হয় ভাষায় ব্যবহৃত শব্দের গঠনকৌশল সম্পর্কে। সেক্ষেত্রে দেখা যায় যে, রূপ হল শব্দগঠনের প্রধান উপাদান। এই রূপ কখনও একাই একটি শব্দ, যেমন-মা, এ, ও; কখনও-বা একটা রূপ-এর সঙ্গে অন্য একটা রূপ যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গড়ে ওঠে, যেমন- গড়ু + অন = গড়ন। আবার কখনও দুটো আলাদা শব্দ পরস্পর যুক্ত হয়েও নতুন শব্দ গঠিত হয়, যেমন-জন শূন্য = জনশূন্য।

এই নবগঠিত শব্দ যখন ভাষায় বা বাক্যে ব্যবহৃত হয় তখন কীভাবে তার রূপবৈচিত্র্য সাধিত হয়, সেটাই হল রূপতত্ত্বের পরবর্তী আলোচনার বিষয়। বাক্যের মধ্যে শব্দ কী ভূমিকা গ্রহণ করে এবং তার সেই ভূমিকা কীভাবে চিহ্নিত হয়, সেটাই এই অংশে আলোচিত হয়। বাক্যে ব্যবহৃত শব্দকে পদ বলে। বাক্যের পদগুলির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক প্রকাশ করার জন্য শব্দের অঙ্গ হিসেবে যেসব রূপ যোগ করা হয়, সেগুলিকে বলে বিভক্তি। এই বিভক্তি ছাড়াও প্রত্যয়, উপসর্গ ইত্যাদি রূপ যুক্ত হয়ে শব্দের রূপবৈচিত্র্য সাধন করে।


প্রশ্ন.8 সহরূপমূলের রূপভেদ হিসেবে শূন্য রূপমূলের ভূমিকা নির্দিষ্ট করো।

উত্তরঃ আমরা অনেক সময় কোনো রূপমূলের বহুবচন নির্দেশ করতে 'রা', 'গুলি', 'গুলো' ইত্যাদি সহরূপমূলকে রূপমূলের সঙ্গে যুক্ত করে ব্যবহার করি।

কিন্তু যেসব ক্ষেত্রে রূপমূলের বহুবচন নির্দেশে রূপমূলের সঙ্গে কোনো প্রকার সহরূপমূল সংযুক্ত হয় না, এই শ্রেণির সহরূপমূল শূন্য রূপমূল রূপে চিহ্নিত। এই ধরনের শূন্য রূপমূলের ব্যবহার ইংরেজি ভাষায় বেশি দেখতে পাওয়া যায়। যেমন-sheep (একবচন)-sheep (বহুবচন) বা put (বর্তমান কালের রূপ)-put (অতীত কালের রূপ)। এক্ষেত্রে sheep বা put-এর সঙ্গে শূন্য রূপমূল যুক্ত করে বহুবচন বা অতীত কালের ক্রিয়ারূপ নির্দেশ করা হয়েছে। বাংলা ভাষায় অনেক ক্ষেত্রে পরিমাণসূচক বিশেষ্যের বহুবচন নির্দেশের ক্ষেত্রে শুন্য রূপমূলের প্রয়োগ করা হয়। যেমন এক্ষেত্রে একই শব্দের দ্বিত্ব প্রয়োগ শূন্য সহরূপমূল-এর ব্যবহার দেখা যায়-হাসাহাসি, বাড়িবাড়ি, ছোটো ছোটো ইত্যাদি অনন্তবাচক, অসীম দিকনির্দেশক রূপমূল।

এই শ্রেণির শূন্য রূপমূলগুলি আবার ধ্বনি পরিবর্তন করে বহুবচন নির্দেশও করে। যেমন-mouse-mice, tooth-teeth, man-men ইত্যাদি। বাংলায় কর্তৃকারকের প্রথমা বিভক্তির কোনো ধ্বনিগত প্রকাশ নেই। তবে সংস্কৃত প্রাচীন ব্যাকরণবিদগণ এসব ক্ষেত্রে একটি রূপের বা সহরূপমূলের অদৃশ্য উপস্থিতি অনুমান করে এর নাম দিয়েছিলেন শূন্য বিভক্তি। আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানীরা এই ধারণাটিকেই শূন্য রূপমূল বা Zero allomorph হিসেবে গ্রহণ করেছেন, যা রূপহীন রূপভেদ এবং তা উহ্য বা শূন্য রূপে অবস্থিত। বাংলা ভাষায় একটা উদাহরণ দিলে শূন্য রূপমূল বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠবে। যেমন- ছেলেটি ভাত খাচ্ছে।

সোনা গান গাইছে। এক্ষেত্রে 'ভাতকে' খাচ্ছে এবং 'গানকে' গাইছে বললে ব্যাকরণের দিক থেকে হয়তো ঠিক হত। কিন্তু বাংলা ভাষার রীতি অনুসারে 'ভাত' এবং 'গান'-এর সঙ্গে কোনো বিভক্তি যোগ হয় না। তবু অদৃশ্য 'কে' বিভক্তিটি রয়ে গেছে। এই অদৃশ্য বিভক্তি বা রূপমূলটিকেই শূন্য রূপমূল হিসেবে ভাষাবিদরা চিহ্নিত করেন।


প্রশ্ন.9 বাক্যে ব্যবহৃত শব্দের রূপবৈচিত্র্য সম্পর্কে আলোকপাত করো।

উত্তরঃকোনো ভাষার শব্দ যখন বাক্যে ব্যবহৃত হয়, তখন কীভাবে তার রূপবৈচিত্র্য সাধিত হয়, সে সংক্রান্ত আলোচনা রূপতত্ত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা কোনো শব্দকে যখন বাক্যে ব্যবহার করি, তখন শব্দের এক নতুন ভূমিকা শুরু হয়। বাক্যে ব্যবহারের পর শব্দ আর শব্দ থাকে না, তা পদ-এ পরিণত হয় (Parts of speech) | বাংলা বাক্যে ভিন্ন ভিন্ন পদের ভূমিকা এবং পদগুলির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বিচার করে পদকে পাঁচটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যেমন-নামপদ বা বিশেষ্য, সর্বনাম, বিশেষণ, ক্রিয়া এবং অব্যয়।

বাক্যের পদগুলির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক প্রকাশ করার জন্য অথবা বাক্যের মধ্যে পদগুলির ভূমিকা চিহ্নিত করার জন্য শব্দের অঙ্গ হিসেবে যেসব রূপ যোগ করা হয়, সেগুলিকে বলে বিভক্তি। এই রূপগুলি যুক্ত হয়ে থাকার ফলে শব্দের রূপবৈচিত্র্য সাধিত হয়। অব্যয় পদের কোনো রূপবৈচিত্র্য নেই, কারণ, অব্যয়ের সঙ্গে কোনো বিভক্তি যোগ হয় না, শুধু বিশেষ্য, সর্বনাম ও ক্রিয়ার রূপবৈচিত্র্য সাধিত হয়। তার মধ্যে নি বিশেষ্য ও সর্বনামের বিভক্তি একই বিভাগে আলোচ্য, কারণ সর্বনাম বিশেষ্যের পরিবর্ত পদ। এই বিভাগকে বলা হয় কারকবিভক্তি। বিশেষণ যখন বিশেষ্যের সঙ্গে ব্যবহৃত হয়, তখন তার সঙ্গে সাধারণত কোনো কারকবিভক্তিই যুক্ত হয় না। সুতরাং বিভক্তি যোগে রূপবৈচিত্র্য সাধিত হয় প্রধানত নামপদ বা বিশেষ্য ও

ক্রিয়া পদের। তাই বিভক্তি হল দু-প্রকার- (১) নামবিভক্তি এবং (২) ক্রিয়াবিভক্তি। স স দি বি ক বা কন স সাহ পরি খোঁ পাল এই দু-ধরনের বিভক্তি যোগে যে রূপবৈচিত্র্য সাধিত হয়, তা-ই রূপতত্ত্বের প্রধান আলোচ্য বিষয়। বিশেষ্য ও ক্লিয়ার রূপবৈচিত্র্যই বাংলা রূপতত্ত্বে প্রধান স্থান অধিকার করে আছে। এদের যথাক্রমে শব্দরূপ ও ক্রিয়ারূপ বলে। এই নেয় বচন, লিঙ্গ, পুরুষ, কারক, কাল, ভাব-প্রকার প্রভৃতি। এদেরকে একত্রে বলা সংবর্গ। হয় ব্যাক্যানিবালক সংবর্ণ সব ভাষার রূপতত্ত্বকে সমানভাবে নিগ্রহণ করে না। এক-এক ভাষায় এদের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা এক-এক রকম। তাই এই ব্যাকরণিক সংবার্ণের ওপরই ভাষাবিশেষের রূপতত্ত্বের মূল বৈশিষ্ট্যগুলিও নির্ভর করে।


EDITING BY-- Liza Mahanta