Chapter-17

বাক্যতত্ত্ব

----------------------

 

MCQ


1.আবেগসূচক বাক্যে প্রকাশ পায়-

(a) সন্দেহ

(b) আবেগ  

(c) শর্ত

(d) প্রার্থনা


2. প্রাচীন ব্যাকরণে বাক্যের যে দুটি প্রধান ভাগের কথা বলা হয়েছে, সে দুটি হল

(a) উদ্দেশ্য ও বিধেয়   

(b) কর্তাখণ্ড ও ক্রিয়াখণ্ড

(c) বিশেষাগুচ্ছ ও ক্রিয়াগুচ্ছ

(d) এগুলির কোনোটিই নয়


3. Syntax কথাটি এসেছে যে। ভাষা থেকে, তা- 

(a) গ্রিক ভাষা   

(b) লাতিন ভাষা

(c) রোমান ভাষা

(d) হিব্রু ভাষা


  4. পদগুচ্ছের সংগঠনতত্ত্বের প্রবক্তা কে?

(a) ব্লুমফিল্ড

(b) জন গারল্যান্ড

(c) নোয়াম চমস্কি

(d) পটার  


5.কমপিটেন্স' এবং 'পারফরম্যান্স' ধারণার জনক

(a) চমস্কি 

(b) সোস্যর  

(c) সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়

(d) সুকুমার সেন


 6. যে প্রক্রিয়ায় বাক্যের চেহারা পালটে যায়, তাকে বলে-

(a) সংবর্তন  

(b) সঞ্জনন

(c) ব্যাকরণ

(d) রূপান্তর


 7. 'পদগুচ্ছেরসংগঠন তত্ত্ব'-এর প্রবক্তা হলেন-

(a) নোয়াম চমস্কি  

(b) এডওয়ার্ড স্যাপির

(c) সিমিয়ন পটার

(d) লেওনার্দ ব্লুমফিল্ড


 8. কোন্ বৈশিষ্ট্যটি অধোগঠনের বৈশিষ্ট্য নয়

(a) এটি বাক্যের অন্তর্নিহিত অর্থ প্রকাশ করে

(b) এটি বাক্যের রূপান্তরের পূর্ববর্তী স্তর

(c) বাক্যেরপ্রকাশভঙ্গিই হল অধোগঠন

(d) অধোগঠন বাক্যের অপরিবর্তনীয় গঠন


 9. কোটিন্ট অধিগঠনের বৈশিষ্ট্য

(a) বাক্যের প্রকাশভঙ্গি হল অধিগঠন বা বহির্গঠন

(b) অধিগঠন হল অন্বয়গত গঠনের স্তর

(c) অধিগঠনের প্রকাশভঙ্গিকে বদলানো যায়

(d) উপরের সবকটিই 


10. এস-ভি-ও ভাষা বলা হয়- 

(a) ইংরেজিকে 

(b) বাংলাকে

(c) সংস্কৃতকে

(d) ফরাসিকে


 11. যে বাক্যে একাধিক অসমাপিকা ক্রিয়া থাকলেও একটি মাত্র সমাপিকা ক্রিয়া থাকে, তাকে বলে

(a) সরল বাক্য

(b) জটিল বাক্য 

(c) যৌগিক বাক্য

(d) মিশ্র বাক্য


 12. "তরুণ বরুণকে পেনটা দিয়েও নিয়ে নিল"। এই বাক্যের 'পেন' হল-

(a) বিশেষ্য

(b) ক্রিয়াখন্ডের অংশ 

(c) মুখ্যকর্ম 

(d) করণ


 13. যে শব্দ বিধেয় ক্রিয়ার অর্থকে পূর্ণতা দান করে, তাকে বলে-

(a) বিধেয়র পরিপুরক

(b) বিধেয়র প্রসারক 

(c) বিধেয় ক্রিয়ার পরিপুরক 

(d) এরসবকটি


14, "রবীন্দ্রনাথ ছিলেন বিশ্বকবি।”-এই বাক্যের গঠন বিশ্লেষণের দিক থেকে 'বিশ্বকবি' পদটি হল-

(a) একটি বিধেয় প্রসারক

(b) একটি বিধেয় ক্রিয়ার পরিপূরক

(c) উদ্দেশ্যের সম্প্রসারিত রূপ

(d) এগুলির কোনোটিই নয়


15. বাক্যের ক-টি প্রধান অংশ

(a) দুটি 

(b) তিনটি

(c) চারটি

(d) পাঁচটি 


16 "যে বিভূতিভূষণ প্রকৃতিকে ভালোবাসতেন তিনি 'পথের পাঁচালী' লিখতে পেরেছেন।"-এখানে প্রধান উপবাক্য-

(a) যে বিভূতিভূষণ প্রকৃতিকে ভালোবাসতেন

(b) তিনি 'পথের পাঁচালী' লিখতে পেরেছেন 

(c) ভালোবাসতেন তিনি 'পথের পাঁচালী' লিখতে

(d) প্রকৃতিকে ভালোবাসতেন তিনি 


17. 'লাহ্' 'পারোল' তত্ত্বের প্রবক্তা-

(a) পটার

(b) চমস্কিপ

(c) সোস্যুর 

(d) ব্লুমফিল্ড 


18, "দিলীপ বই পড়ছে।” এই বাক্যের উদ্দেশ্যহল-

(a) দিলীপ 

(b) বই

(c) পড়ছে

(d) বই পড়ছে


 19"দিল্লীপ বই পড়ছে।"- এই বাক্যের বিধেয় হল-

(a) দিলীপ

(b) বই 

(c) পড়ছে

(d) বই পড়ছে 


 20. উদ্দেশ্য হয় সাধারণত বাক্যের

(a) কর্তা 

(b) কর্ম

(c) ক্রিয়া

(d) কর্ম ও ক্রিয়া


 21. বিধেয় হয় সাধারণত বাক্যের 

(a) কর্তা

(b) কর্ম

(c) ক্রিয়া 

(d) অপাদান পদ


 22. বাংলা বাক্যের পদসংস্থানের স্বাভাবিক ক্রমটি হল- 

(a) কর্ম-ক্রিয়া-কর্তা

(b) কর্ম-কর্তা-ক্রিয়া

(c) ক্রিয়া-কর্তা-কর্ম

(d) কর্তা-কর্ম-ক্রিয়া 


 23. বাংলা ভাষাকে বলা হয়-

(a) এস-ভি-ও ভাষা

(b) এস-ও-ভি ভাষা 

(c) ভি-ও-এস ভাষা

(d) ও-ডি-এস ভাষা


 24. ইংরেজি বাক্যের পদসংস্থানের স্বাভাবিক ক্রমটি হল-

(a) কর্ম-ক্রিয়া-কর্তা

(b) কর্ম-কর্তা-ক্রিয়া

(c) কর্তা-ক্রিয়া-কর্ম 

(d) কর্তা-কর্ম-ক্রিয়া


 25. ইংরেজি ভাষাকে বলা হয়-

(a) এস-ভি-ও ভাষা  

(b) এস-ও-ভি ভাষা

(c) ভি-ও-এস ভাষা

(d) ভি-এস-ও ভাষা


Short Question Answer


1. সঞ্জননী ব্যাকরণ প্রচলন কে করেন?

উত্তব়ঃত্ঞ্জননী ব্যাকরণ প্রচলন করেন প্রখ্যাত ভাষাবিজ্ঞানী নোয়াম চমস্কি।


2. "বাক্য বানাতে গেলে দুটো নিয়ম মেনে চলতে হয়।”-নিয়ম দুটি কী?

উত্তব়ঃবাক্য বানানোর পালনীয় নিয়ম দুটি হল (১) পদের ক্রম, (২) এক পদের সঙ্গে অন্য পদের সম্পর্ক।


3. বাক্যের 'উদ্দেশ্য' অংশ বলতে কী বোঝ?

উত্তব়ঃবাক্যে যার সম্বন্ধে কোনো কিছু বলা হয় বা ভাব প্রকাশ করা হয়, তা-ই উদ্দেশ্য।


4. বাক্যের বিধেয় অংশ কাকে বলে?

উত্তব়ঃবাক্যের উদ্দেশ্যকে অবলম্বন করে যা কিছু বলা হয়, অর্থাৎ উদ্দেশ্য সম্বন্ধে যা বলা হয়, তা-ই হল বাক্যের 'বিধেয়' অংশ।


5. বাক্যের বিশেষ্যখণ্ডে কী কী ধরনের পদ থাকতে পারে?

উত্তব়ঃ'বিশেষ্যখণ্ড' অংশে যেমন বিশেষ্যপদ থাকে, তেমনি সর্বনামও থাকতে পারে। এরা কর্তৃস্থানীয় (অর্থাৎ, বিশেষ্য বা সর্বনাম কর্তার স্থান দখল করে)। বিশেষণ, বিশেষণের বিশেষণ, নির্দেশক এবং সংযোজক পদও থাকতে পারে।


6. বাক্যের 'ক্রিয়াখণ্ডে' কোন্ কোন্ পদ থাকতে পারে?

উত্তব়ঃক্রিয়াখণ্ডে অবশ্যই ক্রিয়াপদ থাকে। এ ছাড়া এর সঙ্গে গৌণ কর্ম, মুখ্য কর্ম, ক্রিয়াবিশেষণ, কালবাচক পদ ইত্যাদি থাকতে পারে।


7. বাক্যের অধোগঠনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য কী?

উত্তব়ঃচমস্কির মতে, বাক্যের অধোগঠনের অর্থ অপরিবর্তনীয়। এই অপরিবর্তনীয়তাই এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য।


8. 'অধিগঠন' বলতে কী বোঝ?

উত্তব়ঃচমস্কির মতে, বাক্যের অন্বয়গত গঠনের স্তরটিই হল অধিগঠন যাকে পরিবর্তন করা যায়। এ ছাড়া তিনি অধিগঠনকে বাক্যের 'প্রকাশভঙ্গি' রূপে অভিহিত করেছেন।


9. বাক্যবিধির প্রধান দুটি দিক উল্লেখ করো।

উত্তব়ঃবাক্যবিধির প্রধান দুটি দিক হল-(১) বাক্যের মধ্যে শব্দগুলিকে সাজাবার বা বিন্যাসের নিয়ম এবং (২) বাক্যের প্রয়োজন অনুসারে শব্দের রূপপরিবর্তনের নিয়ম।


 10. ফের্দিনী দ্য সোস্যুরের জীবনকাল লেখো।

উত্তব়ঃফের্দিনী দ্য সোস্যুর ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে প্রয়াত হন।


11. বাক্যের এক শব্দের সঙ্গে অপর শব্দের সম্পর্ক বোঝানোর জন্য কোন্ বিভক্তি দুটি যুক্ত থাকে?

উত্তব়ঃবাক্যের অন্তর্গত নামশব্দের সঙ্গে যুক্ত বিভক্তিকে বলা হয় শব্দবিভক্তি এবং ক্রিয়াশব্দের সঙ্গে যুক্ত বিভক্তিকে বলা হয় ক্রিয়াবিভক্তি। এই দুটি বিভক্তিই শব্দের সঙ্গে যুক্ত থাকে।


12. ফের্দিনী দ্য সোস্যুর কোথায় অধ্যাপনা করতেন?

উত্তব়ঃফের্দিনী দ্য সোস্যুর জেনিভা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতেন।


13. কমপিটেন্স কী?

উত্তব়ঃমানুষের মস্তিষ্কে LAD (ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যাকুইজিশন ডিভাইস) থাকার ফলে ভাষার বিশ্বজনীন, নির্বিশেষ নিয়মতন্ত্র তার করায়ত্ত থাকে। ফলে ভাষা বলার যে ক্ষমতার অধিকারী হয় সে, সেই ক্ষমতাই হল কমপিটেন্স।


14. কোন্ মার্কিন ঘরানায় ভাষার অব্যবহিত উপাদান বিশ্লেষণের চেষ্টা করা হয়েছিল?

উত্তব়ঃমার্কিন গ্রন্থনবাদী ঘরানায় ভাষার অব্যবহিত উপাদান বিশ্লেষণের চেষ্টা করা হয়েছিল।


15. অভ্যন্তরীণ ঐক্য কাকে বলে?

উত্তব়ঃবাক্যের অব্যবহিত উপাদান চিহ্নিত করার জন্য জোটের ভেতরের পদগুলির মধ্যে যে উপাদানগত ঐক্য থাকা প্রয়োজনীয়, তা-ই হল অভ্যন্তরীণ ঐক্য।


16. 'বাক্যতত্ত্ব' (Syntax) কাকে বলে?

উত্তব়ঃবাক্যে অবস্থিত শব্দগুলির বিন্যাস (অর্থাৎ বাক্যের মধ্যে কোন্ শব্দ কোথায় বসবে) এবং তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ভাষাবিজ্ঞানের যে শাখায় আলোচনা করা হয়, তাকে বলে বাক্যতত্ত্ব


17. বাক্যের প্রধান দুটি অংশ কী?

উত্তব়ঃবাক্যের প্রধান দুটি অংশ হল উদ্দেশ্য এবং বিধেয়।


18. বাক্যের উদ্দেশ্য ও বিধেয় কোন্ জাতীয় পদ?

উত্তব়ঃবাক্যের উদ্দেশ্য হল কর্তা অর্থাৎ বিশেষ্য বা সর্বনাম এবং বিধেয় হল সমাপিকা ক্রিয়া।


19. পদক্রমের নিরিখে বাংলা ও ইংরেজি ভাষাকে কোন্ কোন্ ভাষা বলে অভিহিত করা হয়?

উত্তব়ঃপদক্রমের নিরিখে বাংলা ভাষাকে 'এস-ও-ভি' ভাষা অর্থাৎ 'কর্তা-কর্ম-ক্রিয়া' ভাষা এবং ইংরেজিকে 'এস-ভি-ও' ভাষা অর্থাৎ 'কর্তা-ক্রিয়া-কর্ম' ভাষা বলে।


20. গঠনগত দিক দিয়ে বাক্য কত প্রকার ও কী কী?

উত্তব়ঃগঠনগত দিক দিয়ে বাক্য তিনপ্রকার-সরল বাক্য, জটিল বাক্য এবং যৌগিক বাক্য।


21. বাংলা ভাষাকে এস-ও-ভি ভাষা বলে কেন?

উত্তব়ঃবাংলা বাক্যের পদসংস্থানের স্বাভাবিক ক্রম সাবজেক্ট-অবজেক্ট-ভার্ব অর্থাৎ কর্তা-কর্ম-ক্রিয়া হওয়ায় এ ভাষাকে বলে এস-ও-ভি ভাষা।


22. ইংরেজি ভাষাকে এস-ভি-ও ভাষা বলে কেন?

উত্তব়ঃইংরেজি বাক্যের পদসংস্থানের স্বাভাবিক ক্রম সাবজেক্ট-ভার্ব-অবজেক্ট অর্থাৎ কর্তা-ক্রিয়া-কর্ম হওয়ায় এ ভাষাকে বলে এস-ভি-ও ভাষা।


23. অর্থগত দিক থেকে বাংলা বাক্যকে মূল ক-টি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়?

উত্তব়ঃঅর্থগত দিক থেকে বাংলা বাক্যকে নির্দেশক, প্রশ্নবাচক, বিস্ময়বাচক এবং অনুজ্ঞাবাচক-এই চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়।


24. 'লাঙ্' কাকে বলে?

উত্তব়ঃযে সাধারণ ভাষাজ্ঞান ভাষার ধ্বনি ও অর্থের সংগতিসাধনের মাধ্যমে একজন মানুষকে কোনো ভাষা শিখতে সাহায্য করে, তাকে বলে 'লাঙ্'


25. 'পারোল' কাকে বলে?

উত্তব়ঃসাধারণ ভাষাজ্ঞানের নিয়ম মেনে মানুষ যখন তার ভাষা ব্যবহারের উপাদান নির্বাচন ও প্রতিস্থাপনের মধ্য দিয়ে নিজস্ব একটি বাচনক্রিয়া তৈরি করে, তখন তাকে বলে 'পারোল'


26. 'লাঙ্' 'পারোল'-এর ধারণার উদ্ভাবক কোন্ ভাষাবিজ্ঞানী?

উত্তব়ঃভাষাবিজ্ঞানী ফের্দিনী দ্য স্যোসুর (১৮৫৭-১৯১৩) 'লাঙ্' 'পারোল' ধারণার উদ্ভাবক।


27. 'কমপিটেন্স' 'পারফরমেন্স' ধারণার উদ্ভাবক কে?

উত্তব়ঃকমপিটেন্স' 'পারফরমেন্স' ধারণার উদ্ভাবক হলেন নোয়াম চমস্কি।


28. 'ল্যাড' কী?

উত্তব়ঃনোয়াম চমস্কির মতে, মানুষের মাথায় যে 'ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যাকুইজিশন ডিভাইস' থাকে, যা মানুষের ভাষা বলার সহজাত ক্ষমতাকে উসকে দেয়, সেটাই সংক্ষেপে 'ল্যাড'


29. 'অব্যবহিত উপাদান' কাকে বলে?

উত্তব়ঃবাক্যে অবস্থিত ঠিক আগে বা ঠিক পরে যে পদ বা পদগুচ্ছ থাকে, তাকে বলে অব্যবহিত উপাদান।


30. বাক্যের অব্যবহিত উপাদান বিশ্লেষণের কথা প্রথম কে বলেন?

উত্তব়ঃবাক্যতত্ত্বের আলোচনায় বাক্যের অব্যবহিত উপাদান বিশ্লেষণের কথা প্রথম বলেন লেওনার্দ ব্লমফিল্ড।


31. বাক্যে বিশেষ্যজোট বা বিশেষ্যগুচ্ছের গঠন বর্ণনা করো।

উত্তব়ঃবাক্যে বিশেষ্য এবং সর্বনাম পদ দিয়ে বিশেষ্যজোট তৈরি হলেও সঙ্গে গৌণ পদ হিসেবে অন্য পদ থাকতেও পারে।


32. অনুসর্গজোট কী?

উত্তব়ঃবাক্যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের পর অনুসর্গ বা পরসর্গ বসে তৈরি হয় অনুসর্গজোট, যে জোটের প্রধান পদ অনুসর্গ।


33. ক্রিয়াজোট কীভাবে গঠিত হয়?

উত্তব়ঃএকপদী বা বহুপদী সমাপিকা ক্রিয়া নিয়ে তৈরি হয় ক্রিয়াজোট।


34. বাক্যের ক্রিয়াবিশেষণ জোটের বৈশিষ্ট্য কী?

উত্তব়ঃক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য প্রকাশে এই জোট ব্যবহৃত হয় এবং বিভিন্ন পদ দিয়ে তৈরি পদগুচ্ছই  ক্রিয়াবিশেষণ হিসেবে কাজ করে।

35. অন্তর্মুখী সংগঠন কত প্রকার ও কী কী?

উত্তব়ঃঅন্তর্মুখী সংগঠন সাব-অর্ডিনেট বা যৌগিক এবং কো-অর্ডিনেট বা অধীনস্থ-এই দুই ভাগে বিভক্ত।


36. অধীনস্থ অন্তর্মুখী সংগঠন কাকে বলে?

উত্তব়ঃযে পদজোটে একটি মাত্র মাথা তার বর্ধকের সঙ্গে থাকে তাকে বলে অধীনস্থ অন্তর্মুখী সংগঠন।


37. যৌগিক অন্তর্মুখী সংগঠন কাকে বলে?

উত্তব়ঃযে পদজোটে একাধিক মাথা (Head) থাকে, তাকে বলে যৌগিক অন্তর্মুখী সংগঠন।


38. অব্যবহিত উপাদান বিভাজনের দরকারি নীতিগুলি লেখো।

উত্তব়ঃঅব্যবহিত উপাদান বিভাজনের প্রয়োজনীয় প্রধান নীতি তিনটি হল-(১) অভ্যন্তরীণ ঐক্য, (২) অভ্যন্তরীণ বৈচিত্র্য এবং (৩) স্বাধীনতা।


39. অব্যবহিত উপাদান চিহ্নিত করার জন্য কী প্রয়োজন?

উত্তব়ঃঅব্যবহিত উপাদান চিহ্নিত করার জন্য জোটের মধ্যে পদগত ঐক্য থাকা প্রয়োজনীয়।


40. অব্যবহিত উপাদান বিশ্লেষণের সীমাবদ্ধতা কী?

উত্তব়ঃবাক্য বর্ণনার সুযোগ নেই এই বিশ্লেষণে এবং দ্ব্যর্থক বাক্য বিশ্লেষণে অক্ষম এই পদ্ধতি।


Long Question Answer


প্রশ্ন.1 আধুনিক ভাষাবিজ্ঞান অনুযায়ী বাক্য বিশ্লেষণ করে বাক্যের গঠনের ধারণাটি সুস্পষ্ট করো।

উত্তরঃ বর্ণনামূলক ভাষাবিজ্ঞানে বাক্যকে ভাষার বৃহত্তম একক ধরা হয়। এরপর তাকে ধাপে ধাপে ক্রমশ বৃহত্তর থেকে ক্ষুদ্রতর উপাদানে বিশ্লেষণ করা হয়। এই পদ্ধতিতে বাক্য বিশ্লেষণ করতে হলে যেসব মূল ধারণা থাকা জরুরি তার মধ্যে অন্যতম হল 'গঠন'

 খণ্ডিত বা পূর্ণ অর্থসমন্বিত যে-কোনো পদসমষ্টিকে বলা হয় গঠন (Construction)যেমন- "আমরা যখন ফুটবল খেলছিলাম তখন বাইচুং দর্শকাসনে বসেছিলেন।” এই বাক্যটির মধ্যে একটি সম্পর্কের বন্ধন আছে এবং এরও একটি পূর্ণাঙ্গ অর্থ আছে। তাই এটি একটি বাক্য। আর এই সমগ্র বাক্যটি হল একটি গঠন। আবার, "আমরা যখন ফুটবল খেলছিলাম”-এই পদসমষ্টির অর্থ পূর্ণাঙ্গ নয়। কিন্তু এরও একটা অর্থ আছে যদিও তা খন্ডিত এবং এর পদগুলির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক আছে। এই পদসমষ্টি একটি উপবাক্য (Clause)এরকমের খণ্ডিত অর্থযুক্ত পদসমষ্টিও বাক্যের একটি গঠন।.

উপবাক্যের চেয়ে ছোটো পদসমষ্টি হল “ফুটবল খেলছিলাম”-এরও কিছু অর্থ আছে, যদিও তা আরও খন্ডিত। এই রকমের পদসমষ্টিকে বলা হয় পদগুচ্ছ (Phrase)এটাও বাক্যের একধরনের গঠন।

সুতরাং ভাষাবিজ্ঞানের আলোচনায় বাক্যের 'গঠন' কথাটি ব্যাপক অর্থ বহন করে। একাধিক শব্দ বা রূপ নিয়ে যখনই কোনো খন্ডিত বা পূর্ণ অর্থযুক্ত একক গড়ে ওঠে, তখনই তাকে গঠন বলে।

আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানী ডেভিড ক্রিস্টাল আলোচিত বাক্যের তিনটি গঠন স্তর ছাড়াও আরও দুটি স্তরের কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন "ফুটবল খেলছিলাম" পদসমষ্টিকে ভাঙলে পাওয়া যাবে দুটি শব্দ 'ফুটবল' 'খেলছিলাম'। আবার 'ফুটবল' শব্দটিকে ভাঙলে পাওয়া যাবে দুটি রূপিম বা রূপমূল, যেমন- ফুট + বল = ফুটবল। ক্রিস্টালের মতে, বাক্যের গঠনের শেষ সীমায় আছে রূপমূল। তবে শব্দ' 'রূপমূল' কখনোই বাক্যের গঠন নয়, এরা বাক্যের এক-একটি উপাদানমাত্র।


প্রশ্ন.2 বাংলা বাক্যের ভঙ্গিগত শ্রেণিবিভাগ করে তাদের বৈশিষ্ট্য নির্দেশ করো। অথবা, ভঙ্গিগত দিক থেকে বাক্যের শ্রেণিবিভাগ করো। যে-কোনো এক প্রকারের উদাহরণ-সহ পরিচয় দাও। অথবা, বাক্যের অর্থগত শ্রেণিবিভাগগুলি আলোচনা করো।

উত্তরঃ আমরা আমাদের মনের ভাব প্রকাশ করার সময় নানা ধরনের বাক্য উচ্চারণ করি। নানাধরনের মানে নানা ভঙ্গিতে বা নানা অর্থে সেই বাক্যগুলিকে ব্যবহার করি। দরকারমতো আমাদের বলার ধরন বা ভঙ্গি বা অর্থও বদলে যায়। যেমন, কখনও আমরা প্রশ্ন করি, কখনও বিস্ময় প্রকাশ করি বা উচ্ছ্বাস দেখাই, আবার কখনও আদেশ ও নির্দেশের ভঙ্গিতে কথা বলি। আমাদের মনের ভাব আমাদের বাক্যের ভঙ্গির উপরই নির্ভর করে, আর সেদিক থেকে বাক্যকে মূলত চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। নীচে সংক্ষেপে এগুলির সম্পর্কে আলোচনা করা হল-

 1 . নির্দেশক বা উক্তিবাচক বাক্য: যে বাক্যের দ্বারা কোনো বিষয় বর্ণনা করা হয়, অথবা কোনো তথ্য বা সংবাদ স্বীকার বা অস্বীকার করা হয়, তাকে বলা হয় নির্দেশক বা উক্তিবাচক বাক্য।

বৈশিষ্ট্য: এই বাক্যের শেষে অবশ্যই পূর্ণচ্ছেদ বা দাঁড়ি চিহ্ন (।) থাকবে। এই ধরনের বাক্যের কোনোটা সদর্থক, আবার কোনোটা নর্থক হতে পারে। যেমন-

সদর্থক বাক্য: সত্যবাদীকে সকলেই বিশ্বাস করে।

নঞর্থক বাক্য: আমার শরীরটা আজ ভালো নেই।

2. প্রশ্নবাচক বাক্য: যে বাক্যের সাহায্যে আমরা কোনো কিছু জানতে চাই বা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করি, তা-ই প্রশ্নবাচক বাক্য।

বৈশিষ্ট্য: প্রশ্নবাচক বাক্যের প্রাথমিক শর্ত হল প্রশ্নচিহ্ন (?)। সাধারণভাবে বাক্যের শেষে প্রশ্নচিহ্ন দেখেই বোঝা যায় যে, বাক্যটিতে প্রশ্ন করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, প্রশ্নবাক্যে প্রশ্নসূচক সর্বনাম বা অব্যয় বা বিশেষণ থাকে। কী-কি-কেন-কোথায়-কোন্-কখন-এইসব শব্দ ব্যবহারে বাক্যকে প্রশ্নবাচক করে তোলা হয়। যেমন-"তোমার নাম কী?"


তবে কখনো-কখনো প্রশ্নচিহ্ন ছাড়াই প্রশ্নবাচক বাক্য তৈরি হতে পারে। একে বলা হয় ছদ্ম প্রশ্নবাচক বাক্য। যেমন- "সবই তো শেষ করেছ। এখন আমাকে বলে কী লাভ।"

প্রশ্নবাচক বাক্য দুই প্রকার- (১) হ্যাঁ-না প্রশ্নবাচক বাক্য (যেমন-তুমি যাবে কি? একেই কি বলে সভ্যতা?) (২) বস্তুগত প্রশ্নবাচক বাক্য (যেমন-তুমি কী খাবে? কোথায় যাচ্ছ এখন?)


3. বিস্ময়বাচক বা উচ্ছ্বাসবাচক বাক্য: যে বাক্যের দ্বারা আমরা আমাদের মনের বিস্ময়, রাগ, দুঃখ, অভিমান, ভালোলাগা, মন্দলাগা ইত্যাদি আবেগ ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করি, তাকেই বিস্ময়বাচক বা উচ্ছ্বাসবাচক বাক্য বলে।

বৈশিষ্ট্য: অনুভূতি প্রকাশ অনুযায়ী এই ধরনের বাক্য বিভিন্ন রকমের হতে পারে। যেমন-

ইচ্ছাবাচক বাক্য: ইস। যদি পাখির মতো হতে পারতাম!

আবেগবাচক বাক্য: মরি মরি! এ কী অপরূপ দৃশ্য!

সন্দেহবাচক বাক্য: হয়তো এবার গরমের ছুটিতে বেড়াতে যাব

শর্তবাচক বাক্য: মন দিয়ে না পড়লে ভালো ফল হয় না।


4. অনুজ্ঞাবাচক বাক্য: যে বাক্যে শ্রোতাকে আদেশ, হুকুম, উপদেশ, অনুরোধ, অনুনয়, নির্দেশ ইত্যাদির কোনো-একটি করা হয়, তাকে বলে অনুজ্ঞাবাচক বাক্য।

বৈশিষ্ট্য: এই ধরনের বাক্যের অনুজ্ঞামূলক ক্রিয়াটি শুধুমাত্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কালের জন্যই প্রযোজ্য। আর সেক্ষেত্রে অনুজ্ঞামূলক ক্রিয়ার কর্তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মধ্যম পুরুষ হয়। যেমন-তুমি, তুই, আপনি, তোমরা ইত্যাদি। কিছুক্ষেত্রে প্রথম পুরুষও অনুজ্ঞাবাচক বাক্যের কর্তা হয়। যেমন- সে, তারা, কেউ কেউ ইত্যাদি। যাই হোক, অনুজ্ঞামূলক ক্রিয়ার কালের উপর নির্ভর করেই অনুজ্ঞাবাচক বাক্য দু-ধরনের হয়। যেমন-

বর্তমান অনুজ্ঞা: তুমি একটা গান করো তো।

ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞা: কাল একবার কলকাতায় এসো।


প্রশ্ন.3 বাংলা বাক্যের প্রধান দুটি অংশ এবং তাদের বিশ্লেষণ পদ্ধতি ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ বাক্য হল কতকগুলি ব্যাকরণগত উপাদান দিয়ে গঠিত ভাষার বৃহত্তম স্বয়ংসম্পূর্ণ একক। এই বাক্যের উপাদানগুলিকে চিহ্নিত করাই হল বাক্যের বিশ্লেষণ। প্রথাগত ব্যাকরণে বাক্যের প্রধান দুটি উপাদানের কথা বলা হয়- (১) উদ্দেশ্য এবং (২) বিধেয়।

(১) আমি বাংলা সাহিত্য পড়তে ভালোবাসি। (২) আমার বাবাও ভালোবাসেন।

উপরে বাক্যের উদাহরণ দুটি থেকে দেখা যাচ্ছে, বাক্যের উদ্দেশ্য এবং বিধেয় এক বা একাধিক পদ নিয়ে গঠিত হতে পারে। সেই সঙ্গে এও বোঝা যাচ্ছে যে, বাক্যে যার সম্বন্ধে কিছু বলা হচ্ছে, সেই পদ বা পদসমষ্টি উদ্দেশ্য অংশে আছে, যেমন-'আমি' 'আমার বাবাও'। আর এই উদ্দেশ্যগুলি সম্পর্কে যা বলা হচ্ছে তা আছে বিধেয় অংশে, যেমন-'বাংলা সাহিত্য পড়তে ভালোবাসি' এবং 'ভালোবাসেন'। কিন্তু আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে, বাক্যের এই পুরোনো উদ্দেশ্য-বিধেয় বিভাজন পদ্ধতি অনেকসময়ই বাক্য বিশ্লেষণে ঠিকমতো সাহায্য করে না। বাক্যের অন্তর্গত পদগুলোর সংস্থান ও বাক্যের বিভিন্ন পদের পারস্পরিক সম্পর্কও এতে ধরা পড়ে না। এই জন্য এখন বাক্যকে 'বিশেষ্যখণ্ড' বা 'কর্তাখণ্ড' (Noun phrase) এবং 'ক্রিয়াখণ্ড' (Verb phrase)- এই দুটি অংশে ভেঙে বিশ্লেষণ করার চল শুরু হয়েছে।


বাক্যের 'কর্তাখণ্ডে' থাকে বিশেষ্য, সর্বনাম, বিশেষণ, সর্বনামীয় বিশেষণ, নির্দেশক, বিভক্তি ও প্রত্যয়। তবে কোনো একটি বাক্যে কর্তাখন্ডের এইসব উপাদান একসঙ্গে থাকবে এমন কোনো নিয়ম নেই।


অন্যদিকে, বাক্যের 'ক্রিয়াখন্ডের' মূল উপাদান হল ক্রিয়াপদ। আর সঙ্গে থাকতে পারে স্থানবাচক ও কালবাচক ক্রিয়াবিশেষণ, গৌণকর্ম ও মুখ্যকর্ম। এই ক্রিয়াখণ্ডের আবার দুটি ভাগ। যার একদিকে থাকে একটি বিশেষ্যখণ্ড। এই বিশেষ্যখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকে অসমাপিকা ক্রিয়া। ক্রিয়াখণ্ডের অন্য বা মূল উপাদানটি হলো সমাপিকা ক্রিয়া। নীচের একটি বাক্যে আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানসম্মতভাবে বাক্য বিশ্লেষণের উদাহরণ দেওয়া হল- "আমরা কাল ফুটবল খেলতে মণ্ডলপাড়ায় যাব।"


প্রশ্ন.4 বাক্যতত্ত্ব কাকে বলে? এই ক্ষেত্রে ফার্দিনান্দ (ফের্দিনাঁ) দ্য সোস্যুর (Ferdinand De Saussure)-এর অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো।

উত্তরঃ ভাষাবিজ্ঞানের যে শাখায় বাক্যে পদের সঙ্গে পদের সম্পর্ক এবং সেই সম্পর্কের সৌজন্যে জোটবদ্ধ হয়ে একাধিক পদ কীভাবে একটা বাক্য তৈরি করে-সেই প্রক্রিয়ার নানান দিক ব্যাখ্যা করা হয়, তাকে বলে বাক্যতত্ত্ব। জেনিভা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফের্দিনী দ্য সোস্যুর (১৮৫৭-১৯১৩) বিশ শতকের গোড়ায় বর্ণনামূলক ভাষাবিজ্ঞানচর্চায় বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেন। ভাষাবিশ্লেষণের ক্ষেত্রে সোস্যুর প্রথম ধরিয়ে দেন যে, ভাষার খন্ড খন্ড উপাদান মিলে যে অখণ্ড রূপের সৃষ্টি হয়, সেই অখণ্ড রূপেই ভাষার সামগ্রিক তাৎপর্য রয়েছে। বিচ্ছিন্নভাবে ভাষাখণ্ডগুলি সার্থকতাহীন। ভাষা-বিশ্লেষণে এই অখণ্ড ভাষাদৃষ্টির প্রতিষ্ঠাই সোস্যুরের মৌলিকতম অবদান।

ভাষাবিশ্লেষণের ক্ষেত্রে সোস্যুরের বিগ্রহী-প্রতিগ্রাহী (সিনট্যাগম্যাটিক- প্যারাডিগম্যাটিক) সম্পর্কটিও গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর মতে, ভাষাবিশ্লেষণ করতে গেলে দেখা দরকার উপাদানগুলো কোন্ সম্পর্কে অবস্থান করছে। বাক্যের মধ্যে উপাদানগুলো যদি পরপর অবস্থান করে, তবে তারা বিগ্রহী সম্পর্কযুক্ত। বিগ্রহী প্রকৃতপক্ষে অনুভূমিক অক্ষ। অন্যদিকে, প্রতিগ্রাহী সম্পর্ক হল উল্লম্ব অক্ষ। বাক্যে একটা বিকল্পকে অন্য একটা বিকল্প দিয়ে পরিবর্তন করলে তার বিগ্রহী ক্রমেও পরিবর্তন করা জরুরি হয়ে পড়ে।

বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে নোয়াম চমস্কি তাঁর সংবর্তনী-সঞ্জননী (বা রূপান্তরমূলক-সৃজনমূলক) (Transformational Generative) ব্যাকরণ সোস্যুরেরই উত্তরাধিকার।


প্রশ্ন.5 গঠনগত দিক থেকে বাক্য কত প্রকারের? যে-কোনো এক প্রকারের উদাহরণ-সহ পরিচয় দাও।

উত্তরঃ গঠনগত দিক থেকে বাক্য তিনপ্রকার-সরল বাক্য, জটিল বাক্য এবং যৌগিক বাক্য।

সরল বাক্য: উপস্থিত বা উহ্য একটি মাত্র সমাপিকা ক্রিয়া দ্বারা যে বাক্য তৈরি হয়, তা-ই সরল বাক্য (Simple sentence) | আমার নাম রাম। আমি বাড়ি গিয়ে তোমাকে ফোন করব। প্রথম বাক্যটিতে 'হয়' সমাপিকা ক্রিয়া উহ্য আছে। আর দ্বিতীয় বাক্যটিতে 'গিয়ে' এবং 'ফোন করব'-

এই দুই ক্রিয়া থাকলেও দ্বিতীয়টিই কেবল সমাপিকা ক্রিয়া। তাই এ দুটিই সরল বাক্য।

হওয়া' বা 'থাকা' ক্রিয়ার অতীত বা বর্তমান কালের রূপগুলি সমপিকা ক্রিয়া হলেও অনেক সময় সরল বাক্যে এগুলি উহ্য থাকতে পারে। সরল বাক্যে অসমাপিকা ক্রিয়া নাও থাকতে পারে, আবার এক বা একাধিকও থাকতে পারে। আর, সরল বাক্যের কর্তা উহ্য থাকতে পারে। যেমন, "ওকে কথাটা বলো।”

আবার, সংযুক্ত বিশেষ্য অর্থাৎ অব্যয় দ্বারা বিভক্ত বা অব্যয়হীন পদগুচ্ছও সরল বাক্যের কর্তা হতে পারে। যেমন-"তর্পণ ও স্মৃতি দুই ভাইবোন।" "রাম, লক্ষ্মণ, সীতা বলে গেলেন।” প্রথম উদাহরণটি '' অব্যয়যুক্ত হলেও দ্বিতীয়টি অব্যয়হীন।


প্ৰশ্ন.6 বাক্যের অব্যবহিত উপাদান বিশ্লেষণ বলতে কী বোঝ? উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দাও।

উত্তরঃ বাক্যকে ধাপে ধাপে ক্রমশ বড়ো থেকে ছোটো উপাদানে ভাগ করা হয় বাক্যবিশ্লেষণ করতে গিয়ে। বাক্য, উপবাক্য (Clause), পদগুচ্ছ (Phrase)-কে আমরা যদি একাধিক বৃহত্তম, অর্থপূর্ণ উপাদান ক্রমশ ভাগ করি, তবে সেই ভাগগুলিকে বলা হয় বাক্যের 'অব্যবহিত উপাদান' (Immediate Constituent)যেমন-"আমরা যখন ফুটবল খেলছিলাম, তখন বাইচুং দর্শকাসনে বসেছিলেন।” এই বৃহৎ বাক্যটিকে যে দুটি অব্যবহিত উপাদানে ভাগ করা যায়, তা হল-

(১) আমরা যখন ফুটবল খেলছিলাম

(২) তখন বাইচুং দর্শকাসনে বসেছিলেন

প্রকৃতপক্ষে এই দুই অব্যবহিত উপাদান এক-একটি উপবাক্য। এবার (২) নম্বর শ উপবাক্যটি তথা অব্যবহিত উপাদানটি বিশ্লেষণ করলে আমরা যে দুটি । অব্যবহিত উপাদান পাই, তা হল-

বাইচুং 

তখন দর্শকাসনে বসেছিলেন

ওপরের অংশ দুটিও অব্যবহিত উপাদান। তবে তা সমগ্র বাক্যের নয়, উপবাক্যের অব্যবহিত উপাদান। দ্বিতীয় অব্যবহিত উপাদানকে (তখন দর্শকাসনে বসেছিলেন) আবার (১) তখন, (২) দর্শকাসনে (৩) বসেছিলেন-এই তিনটি অব্যবহিত উপাদানে ভাগ করা যায়।

লেওনার্দ ব্লুমফিল্ড বলেন যে, বাক্য যদি পদ-পরম্পরা হয়, তবে বাক্যের অন্তর্গত পদগুলির অন্বয়ের প্রকৃতিও নির্দেশ করতে পারে তার অব্যবহিত উপাদান। পারস্পরিক জোটও তৈরি করে। যেমন-


প্রশ্ন.7 বিশেষ্যজোট, অনুসর্গজোট, ক্রিয়াজোট এবং ক্রিয়াবিশেষণজোট সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তরঃ বাক্যের প্রধান চারটি জোট বা গুচ্ছ হল-(১) বিশেষ্যজোট, (২) অনুসর্গজোট, (৩) ক্রিয়াজোট এবং (৪) ক্রিয়াবিশেষণজোট।

1. বিশেষ্যজোট: বিশেষ্যজোট বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ ঘিরে জোট বেঁধে কর্তা, কর্ম ইত্যাদির ভূমিকা পালন করে। এই জোটে বিশেষণ, অসমাপিকা ক্রিয়া, ক্রিয়া-বিশেষ্য ইত্যাদি পদবর্ধক হিসেবে থাকে। যেমন-একদল ছাত্র বেরিয়ে গেল। ভাগীরথীতে নৌকাডুবি হওয়ার ঘটনাটা আমাকে ভাবাচ্ছে। আমাকে এখন চলে যেতে বলছ?

2. অনুসর্গজোট: একপদী বা বহুপদী বিশেষ্য-সহ অনুসর্গ দিয়ে তৈরি হয় অনুসর্গ জোট। যেমন-বড়ো পুকুরের পাশে ক্লাবঘর তৈরি হয়েছে। শচীন আর সৌরভকে দিয়ে ওপেন করাতে হবে।

3. ক্রিয়াজোট: ক্রিয়াজোট একপদী এবং বহুপদী-এই দুরকমই হতে পারে। একপদী ক্রিয়াজোটের উদাহরণ হল-তুমি তখন খাচ্ছিলে।

এক্ষেত্রে 'খা' ধাতুর সঙ্গে 'চ্ছ' প্রকার বিভক্তি, 'ইল্' কাল বিভক্তি এবং '' পুরুষ বিভক্তি যুক্ত হয়েছে। এই বিভক্তিগুলিকে সহচর বা দিশারী বলা হয়। বহুপদী ক্রিয়াজোট তিনপ্রকার-(১) যুক্ত ক্রিয়াজোট (যেমন-মাথাটা ব্যবহার করো।) (২) যুক্ত-যৌগিক ক্রিয়াজোট (যেমন-ও হঠাৎ চিৎকার করে উঠল।) (৩) যুগ্ম ক্রিয়াজোট বা যৌগিক ক্রিয়াজোট (যেমন-আমি উঠে পড়লাম। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় ক্রিয়া আপতভাবে অর্থহীন এবং প্রথম ক্রিয়ার অর্থ দ্বিতীয় ক্রিয়াকে উসকে দেয়।

4. ক্রিয়াবিশেষণজোট: এই জোট ক্রিয়াপদ ও বিশেষণপদকে বিশেষিত করে। সাধারণত সময়, স্থান, প্রকার, কারণ, প্রকৃতি বোঝাতে এই জোট ব্যবহৃত হয়। যেমন-ছেলেটা ভালো খেলছে। ছেলেটি প্রাণ বাজি রেখে দৌড়চ্ছে। এমন করে বোলো না। বানানটা বার বার লেখো।


প্রশ্ন.8 অন্তর্মুখী এবং বহির্মুখী বাক্যগঠন-এই দুই প্রকার গঠনগত প্রকৃতি পর্যালোচনা করো।

উত্তরঃ বাক্যের গঠন (construction)-এর প্রকৃতি দুই প্রকার- (১) অন্তর্মুখী গঠন বা অন্তঃকেন্দ্রিক গঠন (Endocentric Construction) এবং (২) বহির্মুখী গঠন বা বহিঃকেন্দ্রিক গঠন (Exocentric Construction) |

১. অন্তর্মুখী সংগঠন: যে গঠন (অর্থসম্বন্ধযুক্ত পদসমষ্টি)-এর অন্তর্গত এক বা একাধিক পদ সেই গোটা গঠনটির পরিবর্তে বসলেও বাক্যটি ব্যাকরণগতভাবে নির্ভুল হয়, সেই গঠনকে বলে অন্তর্মুখী গঠন। যেমন-"লাল বাড়িতে আমি থাকি।"-এই বাক্যে 'লাল বাড়িতে' একটি গঠন। এই গঠন-এর অন্তর্গত 'বাড়িতে' পদটি 'লাল বাড়িতে'র বদলে যদি ব্যবহার করি, তবে বাক্যটি কিন্তু ব্যাকরণগতভাবে ভুল হবে না। আবার,

'লাল বাড়িতে' গঠন-এর 'লাল'-এই বর্ধক (subordinate) অংশ-এর পরিবর্তে 'লাল পাকা' অংশও ব্যবহার করা যায় ব্যাকরণসম্মতভাবে তা-ই অন্তর্মুখী সংগঠন জোট গঠন করে। বাক্যতাত্ত্বিকভাবে বর্ধক-সহ মাথা (Head) (যেমন বাড়িতে) এবং কেবলমাত্র মাথা-এর গুরুত্ব এক। অন্তর্মুখী সংগঠনের উদাহরণ হল বিশেষ্যজোট, ক্রিয়াজোট

অন্তর্মুখী সংগঠক দুই প্রকার- (১) অধীনস্থ বা অধীনতাজ্ঞাপক (Subordinate) এবং (২) যৌগিক বা সমানাধিকারজ্ঞাপক (Coordinative)যখন কোনো অন্তর্মুখী গঠন-এর অন্তর্গত উপাদানগুলির একটি প্রধান, অন্যটি তার অধীনস্থ উপাদান, তখন তাকে বলে অধীনস্থ গঠন। যেমন-'লাল বাড়িতে' হল অধীনস্থ গঠন। এক্ষেত্রে একটি মাত্র বর্ধক-সহ থাকে। আবার, যখন কোনো অন্তর্মুখী গঠন-এর অন্তর্গত উপাদানগুলি সমগুরুত্বসম্পন্ন, তখন তা যৌগিক গঠন। এই গঠনে একাধিক মাথা থাকে। যেমন-“শচীন ও সৌরভ ওপেন করছে।” বাক্যের 'শচীন ও সৌরভ' হল যৌগিক গঠন।

২. বহির্মুখী সংগঠন: যে গঠন-এর অন্তর্গত এক বা একাধিক পদ সেই গোটা গঠনটির পরিবর্তে বসলে বাক্যটি ব্যাকরণগতভাবে ভুল বাক্য হয়ে যায়, তাকে বলে বহির্মুখী গঠন। যেমন-"আমি যাব।” এই বাক্যটি অথবা "বাড়িটার সামনে আমি থাকি" বাক্যের 'বাড়িটার সামনে' গঠনটি। বাক্যটিতে দুটি মাথা থাকলেও গঠনটিতে মাথা 'বাড়িটার' নয়, 'সামনে'। এই দুই ক্ষেত্রেই কোনো পরিবর্তন ঘটালে বাক্য দুটি অশুদ্ধ বাক্য হয়ে পড়বে। দুই পদের সরল বাক্য বা অনুসর্গ জোট বহির্মুখী গঠন-এর উদাহরণ।

 

EDITING BY-- Liza Mahanta