Chapter-18 

শব্দার্থতত্ত্ব

-------------------------- 



MCQ


 1. 'সন্দেশ' শব্দের অর্থপরিবর্তনের ধারাটি হল-

(a) অর্থের বিস্তার

(b) অর্থের সংশ্লেষ

(c) অর্থের অবনতি

(d) অর্থের সংকোচ

2. 'বর্ণীয় শব্দকোষ' গ্রন্থের লেখক হলেন-

(a) হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

(b) পবিত্র সরকার

(c) ভক্তিপ্রসাদ মল্লিক

(d) মুণীর চৌধুরি

3.'খাড়' শদীনা আদি অর্থ ছিল 'গলা, বর্তমানে 'যে-কোনো নদী'। এখানে পরিবর্তিত অর্থটিকে কী বলা হয়?

(a) সংকুচিত

(b) প্রসারিত

(c) ব়ূপান্তব়িত

(d) কোনোটিই নায়

4. মুগ' শব্দের আদি অর্থ 'বন্য জন্তু', কিন্তু পরিবর্তিত অর্থ 'হরিণ'- এটি শব্দার্থ পরিবর্তনের যে ধারার অন্তর্গত-

(a) শব্দার্থের প্রসার

(b) শব্দার্থের সংকোচ

(c) শব্দার্থের রূপান্তর

(d) কোনোটিই নয়

5. 'খিসরাস' অভিধানের আবিষ্কর্তা হলেন .

(a) চমস্কি

(b) পিটার মার্ক রজেট

(c) ব্লুমফিল্ড

(d) স্টার্টেভ্যান্ট

6. পিটার মার্ক রজেট 'থিসরাস' অভিধান রচনা করেন কত খ্রিস্টাব্দে।

(a) ১৮৫০

(b) ১৮০৫

(c) ১৮১৫

(d) ১৮৫২

7. পিটার মার্ক রজেটের 'থিসরাস' অভিযানটি প্রকাশিত হয় কত খ্রিস্টাব্দে?

(a) ১৮৫০

(b) ১৮০৫

(c) ১৮২৫

(d) ১৮৫২

8. To find the word, on words, by which idea may be most fitly and aptly expressed"-উক্তিটির বক্তা

(a) ব্লমফিল্ড

(b) পিটার মার্ক রজেট

(c) নোয়াম চমস্কি

(d) স্টার্টেভ্যান্ট

9. 'কালি' শব্দের আদি অর্থ 'কালো রঙের তরল', পরিবর্তিত অর্থ 'যে-কোনো রঙের রঞ্জক'। 'কালি' শব্দটিতে রয়েছে

(a) অর্থের ধূপান্তর

(b) অর্থের প্রসার

(d) অর্থের উন্নতি

(d) অর্থের সংকোচ

10. 'কুম্ভকার' শব্দের আদি অর্থ 'মাটির কলসি তৈরি করেন যিনি', পরিবর্তিত অর্থ 'মাটির জিনিস তৈরি করেন যিনি'। এটি-

(a) অর্থের সংকোচ

(b) অর্থেরপ্রসারণ

(c) অর্থের অবনতি

(d) অর্থের রূপান্তর

11. 'উজবুক' শব্দের আদি অর্থ 'উজবেকিস্তানের অধিবাসী', পরিবর্তিত অর্থ হল 'মুখ' বা 'নির্বোধ'। এটি

(a) অর্থের অবনতি

(b) অর্থের প্রসার

(c) সংকোচ অর্থের

(d) অর্থের রূপান্তর

12. শব্দের 'সমার্থকতা' হল

(a) শব্দের সাদৃশ্যমূলক সম্পর্ক

(b) প্রতিশব্দমূলক সম্পর্ক

(c) অনুগত শব্দমূলক সম্পর্ক

(d) শব্দের বিপরীতার্থক সম্পর্ক

13. 'মাছ' হল ইলিশ' শব্দের

(a) সমার্থকতা

(b) প্রতিশব্দ

(c) অনুরূপ অর্থবাহী শব্দ

(d) ব্যাপকার্থকতা

14. থিসরাসে শব্দ বিন্যস্ত থাকে-

(a) বর্ণানুক্রমিক

(b) শব্দানুক্রমিক

(c) অর্থ, ভাব বা বিষয়ানুক্রমিক

(d) এর কোনোটিই নয়

15. 'মুনিশ' শব্দের আদি অর্থ 'মানুষ', পরিবর্তিত অর্থ 'মজুর'। এটি

(a) অর্থের অবনতি

(b) অর্থের রূপান্তর

(c) অর্থের সংকোচ

(d) অর্থের প্রসার

16. 'ধন্য' শব্দের আদি অর্থ 'ধনবান'পরিবর্তিত অর্থ সৌভাগ্যবান। এটি-

(a) অর্থের প্রসার

(b) অর্থের অবনতি

(c) অর্থের সংকোচ

(d) অর্থের রূপান্তর

17.'গবেষণা' শব্দের আদি অর্থ 'গাভির অন্বেষণ' পরিবর্তিত অর্থ 'কোনো বিষয়ের বিজ্ঞানসম্মত বিশ্লেষণ'। এটি-

(a) অর্থের রূপান্তর

(b) অর্থের সংকোচ

(c) অর্থের অবনতি

(d) অর্থের প্রসার 

18. ভাষার অর্থের আলোচনার ক্ষেত্রে তার প্রসঙ্গের বা পরিপ্রেক্ষিতের তাৎপর্যের ওপর গুরুত্ব দেয়-

 (a) ঐতিহাসিক শব্দার্থতত্ত্ব 

(b) শব্দভিত্তিক শব্দার্থতত্ত্ব 


(c) বিষয়মূলক তত্ত্ব    


(d) প্রয়োগতত্ত্ব


19. অধিনাম এবং উপনাম শব্দ দুটি কোন প্রসঙ্গে ব্যবহৃত হয় 


(a) থিসরাস 


(b) সমার্থকতা 


(c) বিপরীতার্থকতা 


(d) ব্যাপকার্থকতা   


20. শব্দার্থের দুটি প্রধান ভাগের প্রথমটিকে বলে 


(a) সাধারণ অর্থ    


(b) নিদর্শন 


(c) আদি অর্থ  


(d) বিশেষ অর্থ


Short Question Answer


1. সমার্থকতা কী?

 'সমার্থকতাশব্দের অর্থ হল অর্থের অভিন্নতা। দুই বা ততোধিক শব্দের মধ্যে অর্থগত সাদৃশ্য থাকলে তাকে বলা হয় সমার্থকতা।


2. শব্দার্থের উৎকর্ষ বলতে কী বোঝ?

 কোনো শব্দ যখন তার ব্যুৎপত্তিগত অর্থে অর্থাৎ আদি অর্থে ব্যবহৃত না হয়ে অন্য কোনো উন্নত অর্থে প্রচলিত হয়ে যায়তখন তাকে বলা হয় শব্দার্থের উৎকর্ষ বা শব্দার্থের উন্নতি। যেমন 'সম্ভ্রান্তশব্দের আদি অর্থ 'সম্যকরূপে ভ্রান্ত', কিন্তু প্রচলিত অর্থ 'মর্যাদাসম্পন্ন'


3. শব্দার্থের অপকর্ষ কাকে বলে?

 শব্দ যখন তার আদি বা ব্যুৎপত্তিগত অর্থে ব্যবহৃত না হয়েঅন্য কোনো অবনত বা নিম্নমানের অর্থে প্রচলিত হয়তখন তাকে বলে শব্দার্থের অপকর্ষ বা শব্দার্থের অবনতি। যেমন-'মহাজনশব্দের আদি অর্থ 'মহৎ ব্যক্তি', কিন্তু প্রচলিত অর্থ 'সুদখোর ঋণদাতা'


4. 'মুনিশশব্দটির আদি ও পরিবর্তিত অর্থ নির্ণয় করে পরিবর্তনের ধারা উল্লেখ করো।

 'মুনিশ' (< মনুষ্য) শব্দটির আদি ও পরিবর্তিত অর্থ যথাক্রমে 'মানুষ 'মজুর'তাই এটি 'শব্দার্থের সংকোচ'


5. 'সন্দেশ 'পাষণ্ডশব্দের আদি অর্থ ও বর্তমান অর্থ লেখো।

 'সন্দেশশব্দের আদি অর্থ 'সংবাদএবং বর্তমান অর্থ 'মিষ্টান্ন-বিশেষ' 'পাষণ্ডশব্দের আদি অর্থ 'বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীএবং প্রচলিত অর্থ 'পাপী'


6. 'থিসরাসশব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ কী?

 'থিসরাসশব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হল রত্নাগার।


7. থিসরাস কেকবে রচনা করেন?

 পিটার মার্ক রজেট (Peter Mark Roget) ১৮০৫ খ্রিস্টাব্দে থিসরাস রচনা ও সংকলন করলেও তা প্রকাশিত হয় ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দে।


8. একটি বাংলা থিসরাসের উদাহরণ দাও।

 একটি বাংলা থিসরাস হলঅশোক মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ও সাহিত্য সংসদ প্রকাশিত 'সমার্থ শব্দকোষ'


9. শব্দার্থতত্ত্বের তাত্ত্বিক ধারণাগুলির উল্লেখ করো।

 শব্দের অর্থ ও তার প্রয়োগের তত্ত্ব বিশ্লেষণের প্রকৃতি অনুসারে আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানের তিনটি তাত্ত্বিক ধারণা হল-(১) উপাদানমূলক তত্ত্ব, (২) সত্যসাপেক্ষ তত্ত্ব এবং (৩) বিষয়মূলক তত্ত্ব।


10. শব্দার্থের সত্যসাপেক্ষ তত্ত্বটির মূলকথা কী?

 যখন আমরা কোনো বাক্যকে সত্য বলে জ্ঞান করি বা বাস্তব সত্যের ভিত্তিতে রচিত বলে মনে করিতখন সেই বাক্যের অন্তর্গত শব্দগুলি সম্পর্কে আমাদের মধ্যে একটি অর্থের বোধ গড়ে ওঠে। এটাই হল সত্যসাপেক্ষ তত্ত্বের মূলকথা।


11. শব্দার্থ নির্ণয়ে উপাদানমূলক তত্ত্বের দার্শনিক ভিত্তি কী?

 শব্দের মূর্ত প্রতিরূপ ছাড়াও তার সাধারণ ধর্মটিকে কল্পনা করাই হল উপাদানমূলক তত্ত্বের দার্শনিক ভিত্তি।


12. বিষয়মূলক শব্দার্থতত্ত্বে শব্দের যে দু-রকম অর্থের কথা বলা হয় সেগুলি লেখো।

 শব্দের অর্থ দু-রকম হতে পারে- (১) সুস্পষ্ট নির্দিষ্ট অভিধানিক অর্থ বা মুখ্য অর্থ। (২) মুখ্য অর্থ থেকে জাত আলংকারিক ব্যবহারে প্রযুক্ত গৌণ অর্থ বা ব্যাঙ্গার্থ।


13. অর্থগত দিক থেকে শব্দের পারস্পরিক সম্পর্ক কী কী রূপে হতে পারে?

 শব্দের সঙ্গে শব্দের যে অর্থ সম্পর্ক তা মূলত তিনটি রূপে হতে পারে। এগুলি হল-(১) সমার্থকতা, (২) বিপরীতার্থকতা এবং (৩) ব্যাপকার্থকতা।


14. গঠনগত সাদৃশ্য আছে অথচ অর্থে বিপরীতধর্মীএমন বাংলা শব্দের উদাহরণ দাও।

 সমান-অসমানজয়-পরাজয়আদর-অনাদর ইত্যাদি শব্দজোড়ের মধ্যে গঠনগত সাদৃশ্য আছেঅথচ অর্থের দিক থেকে এরা একে অন্যের বিপরীত।


15. শব্দার্থ বিশ্লেষণে প্রয়োগবাদীদের প্রধান লক্ষ্য কী?

 বক্তার কথনভঙ্গি ও উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে তার বক্তব্যকে বুঝতে পারার ক্ষমতা অর্জনই প্রয়োগবাদের মূল উদ্দেশ্য।


16. শব্দার্থতত্ত্বের আলোচ্য বিষয় কী?

 শব্দার্থতত্ত্বের আলোচ্য বিষয় মানবভাষায় ব্যবহৃত বিভিন্ন শব্দের অর্থ এবং তার ক্রিয়াকর্ম।


17. শব্দার্থকে ক-টি ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?

 শব্দার্থকে সাধারণ এবং নিদর্শন-এই দুইভাগে ভাগ করা যায়।


18 . সাধারণ শব্দার্থ বলতে কী বোঝায়?

 সাধারণ শব্দার্থ বলতে শব্দের প্রকৃত অর্থ অর্থাৎ অভিধানগত অর্থকেই বোঝায়।


19. নির্দেশন বলতে কী বোঝ?

 কোনো বিশেষ শব্দ এবং শব্দটি যে-বিশেষ বস্তুর নির্দেশকারীতার মধ্যেকার সম্পর্ককে বলা হয় নির্দেশন। স্বাভাবিকভাবেই সব শব্দের নির্দেশন থাকে না।


20. ঐতিহাসিক শব্দার্থতত্ত্ব কাকে বলে?

 সময়ের সঙ্গে ভাষার শব্দার্থের পরিবর্তন যে শব্দার্থতত্ত্বে আলোচিত হয়তাকে বলে ঐতিহাসিক শব্দার্থতত্ত্ব।


21. শব্দভিত্তিক শব্দার্থতত্ত্ব কাকে বলে?

 স্বতন্ত্র শব্দের অর্থবিশ্লেষণ এবং একাধিক শব্দের অর্থভিত্তিক সম্পর্ক যে শব্দার্থতত্ত্বে আলোচিত হয়তা শব্দভিত্তিক শব্দার্থতত্ত্ব।


22. প্রয়োগমূলক শব্দার্থতত্ত্ব কাকে বলে?

 ভাষার অর্থের ওপর তার প্রসঙ্গের প্রভাব আলোচিত হয় যে শব্দার্থতত্ত্বেতাকে বলে প্রয়োগমূলক শব্দার্থতত্ত্ব বা প্রয়োগতত্ত্ব।


23. উপাদানমূলক শব্দার্থতত্ত্ব কী?

 কোনো শব্দের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র উপাদানগুলিকে বিশ্লেষণ করে সেই শব্দ এবং অন্যান্য শব্দের সঙ্গে তার সম্পর্কের যথাযথ ধারণা পাওয়া যায় যে শব্দার্থতত্ত্বেতাই-ই উপাদানমূলক শব্দার্থতত্ত্ব।


24. শব্দার্থ উপাদান কাকে বলে?

 শব্দের অর্থ আলোচনা করার সময় শব্দের অর্থকে ভেঙে যে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অর্থ উপাদানে ভাগ করা হয়তার প্রতিটিই হল শব্দার্থ উপাদান বা শব্দার্থগত বিষয়শ্রেণি।


25. বিষয়মূলক শব্দার্থতত্ত্বের মূল বিষয় কী?

 বিষয়মূলক শব্দার্থতত্ত্বের মূল বিষয় হল ভাষার অর্থের আলোচনার ক্ষেত্রে তার প্রসঙ্গ বা পরিপ্রেক্ষিতটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


26. সমার্থক শব্দ কাকে বলে?

 একাধিক শব্দের মধ্যে অর্থগত অভিন্নতা বা সাদৃশ্য থাকলেসেই শব্দগুলিকে একসঙ্গে সমার্থক শব্দ বলা হয়। যেমন-চোখচক্ষুনয়ন।


27. বিপরীতার্থক শব্দ কাকে বলে?

▶ দুটি শব্দের মধ্যে অর্থের বৈপরীত্য থাকলে তাদের একসঙ্গে বিপরীতার্থক শব্দ বলা হয়। যেমন-দিন-রাতভালো-মন্দ।


28. কী কী পদ্ধতিতে কোনো শব্দের বিপরীতার্থক শব্দ সৃষ্টি করা হয়?

 নেতিবাচক উপসর্গ যোগে (যেমন-বৃষ্টি-অনাবৃষ্টি)ইতিবাচক ও নেতিবাচক উপসর্গযোগে (যেমন-সচল-অচল) এবং স্বতন্ত্র শব্দপ্রয়োগে (যেমন-ভালো-মন্দ) বিপরীতার্থক শব্দ সৃষ্টি হয়।


29. ব্যাপকার্থকতা বা অর্থান্তরভুক্তি কী?

 কোনো শব্দের মধ্যে অন্য একাধিক শব্দের অর্থ অন্তর্ভুক্ত থাকলে তাকে বলা হয় ব্যাপকার্থকতা বা অর্থান্তরভুক্তি।


30. অধিনাম ও উপনাম কাকে বলে?

 ব্যাপকার্থকতা বা অর্থান্তরভুক্তি তত্ত্বে বাঁদিকে থাকা ব্যাপকতর অর্থযুক্ত শব্দগুলিকে অধিনাম এবং ডানদিকের ক্ষুদ্রতর অর্থযুক্ত শব্দগুলিকে উপনাম বলা হয়।


31. একটি সংস্কৃত থিসরাসের উদাহরণ দাও।

 একটি সংস্কৃত থিসরাসের উদাহরণ হল 'অমরকোষ'


32. প্রয়োগতত্ত্বের আলোচ্য বিষয় কী?

 সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভাষার ব্যবহার ভাষা এবং অন্যান্য বচনের অর্থের ওপর যে প্রভাব ফেলেতা-ই প্রয়োগতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়।


33. সত্যসাপেক্ষ তত্ত্বের সঙ্গে প্রয়োগতত্ত্বের ব্যবহারগত পার্থক্য কী?

 নির্দেশক ভাবের বাক্য সত্যসাপেক্ষ তত্ত্বের দ্বারা নিরূপিত হয়আর অনুজ্ঞা ভাবের বাক্য প্রয়োগতত্ত্বের দ্বারা নিরূপিত হয়।


34. শব্দার্থ পরিবর্তনকে ক-টি ভাগে ভাগ করা যায়?

 শব্দার্থ পরিবর্তনকে শব্দার্থের প্রসারশব্দার্থের সংকোচ এবং শব্দার্থের রূপান্তর-এই তিন ভাগে ভাগ করা যায়।


35. শব্দার্থের প্রসার বা বিস্তার বলতে কী বোঝায়?

 সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে শব্দের পূর্বতন অর্থের সাথে নতুন অর্থ যুক্ত হলে তাকে বলে অর্থের বিস্তার বা প্রসার। যেমন-'পরশুশব্দের অর্থ (<পরশ্ব) 'আগামীকালের পরদিনছিলকিন্তু পরে 'গতকালের আগের দিনযুক্ত হয় এই অর্থের সঙ্গে।


36. শব্দার্থের সংকোচ বলতে কী বোঝ?

 সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে কোনো শব্দের মূল অর্থটি সংকুচিত হয়ে গেলে তাকে বলে শব্দার্থের সংকোচ। যেমন, 'অন্ন'-আদি অর্থ 'খাদ্য', বর্তমান অর্থ 'ভাত'


37. শব্দার্থের রূপান্তর কাকে বলে?

 কোনো শব্দের অর্থ-পরিবর্তনে আদি অর্থের সঙ্গে পরিবর্তিত নতুন অর্থের কোনো যোগসূত্র পাওয়া না গেলে তাকে বলে শব্দার্থের রূপান্তর। যেমন, 'দারুণ'-এর শব্দের আদি অর্থ 'কাষ্ঠনির্মিতহলেও বর্তমান অর্থ 'অত্যন্ত'


38. শব্দার্থতত্ত্বের দুটি শাখার নাম লেখো।

 শব্দার্থতত্ত্বের দুটি শাখা হল-ঐতিহাসিক শব্দার্থতত্ত্ব এবং শব্দভিত্তিক শব্দার্থতত্ত্ব।


39. 'থিসরাসকী?

 থিসরাস হল শব্দার্থের এমন এক রেফারেন্স বইযেখানে অর্থ-সম্পর্কযুক্ত (সমার্থক বা বিপরীতার্থক) শব্দগুলিকে বর্ণানুক্রমে তালিকাবদ্ধ করা হয়


40. 'শব্দার্থের রূপান্তরঅন্য কী নামে পরিচিত?

 'শব্দার্থের রূপান্তর'-এর অন্য নাম হল শব্দার্থ সংশ্লেষ বা শব্দার্থের আমূল পরিবর্তন।


Long Question Answer 

প্রশ্ন.1 শব্দার্থের সত্যসাপেক্ষ তত্ত্বটি আলোচনা করো।

উত্তব়ঃ ভাষাবিজ্ঞানী ডোনাল্ড ডেভিডসন তাঁর Semantics of Logic (1967) গ্রন্থে শব্দার্থ বিশ্লেষণের সত্য-সাপেক্ষ তত্ত্বটির কথা প্রথম ব্যক্ত করেন। শব্দার্থের সত্যসাপেক্ষ তত্ত্বটির মূল কথা হচ্ছে যেযখন আমরা কোনো বাক্যকে সত্য বলে জ্ঞান করি বা বাস্তব সত্যের ভিত্তিতে রচিত বলে মনে করিতখন সেই বাক্যের অন্তর্গত শব্দগুলি সম্পর্কে আমাদের মধ্যে একটি অর্থের বোধ গড়ে ওঠে। অর্থাৎএই তত্ত্বানুসারে বাক্যের সত্যাসত্যের উপরই শব্দের অর্থ নির্ভর করে। যেমন-"পাহাড়ের গায়ে সাদা বরফ জমেছে।"

এখন যদি উপরের বাক্যটি সত্য হয় বা বাক্যটি বাস্তব সত্যের ভিত্তিতে রচিত হয় তাহলে আমরা- বরফের রং সাদা। বরফ জমে যেতে পারে। পাহাড়ে বরফ দেখা যায়। ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যের সাহায্যে 'বরফশব্দের অর্থটিকে সুস্পষ্টভাবেই অনুধাবন করতে পারি

এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যেশব্দের অর্থ-বিশ্লেষণে সত্য-সাপেক্ষ তত্ত্বটিকে প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে ভাষার প্রাকৃতিক রূপটিকে গ্রহণ করতে হবে। অর্থাৎ ভাষায় উচ্চারিত বাক্যের বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তব অভিজ্ঞতার বা বৃহত্তর বা গভীরতর সত্যের ইঙ্গিত থাকা চাই। কোনো কৃত্রিম বাক্য বা মনগড়া ভাষা দিয়ে শব্দের অর্থ বিশ্লেষণের চেষ্টা এই তত্ত্বের পরিপন্থী। যেমন- "বরফ হয় কালো।"

এই অবাস্তব বাক্যের অন্তর্গত 'বরফশব্দের অর্থ বিশ্লেষণ করে আমরা যদি বলি 'বরফ কালো রঙের হয়', তাহলে 'বরফ'-এর অর্থটি বাস্তবের সঙ্গে সংগতিহীন এবং অর্থহীন হয়ে পড়ে।


প্রশ্ন.2 শব্দার্থের বিষয়মূলক তত্ত্বটি আলোচনা করো।

উত্তব়ঃ শব্দের অর্থ বিশ্লেষণের তত্ত্ব হিসেবে বিষয়মূলক তত্ত্বটি বহু পুরোনো। বিখ্যাত অস্ট্রীয় দার্শনিক ভিগেনস্টাইন বলেছেন, "The meaning of a word is its use in the language" অর্থাৎএকটা শব্দের অর্থ বোঝা যায় ভাষায় তার প্রয়োগ প্রসঙ্গে। ভাষাবিজ্ঞানী ব্লুমফিল্ডও context বা বিষয় প্রসঙ্গের

কথা বলেছেনতবে একটু অন্যভাবে। তাঁর মতেভাষার বক্তব্য বিষয় থেকেই শব্দের অর্থ বোঝা যায়।

এই মতের অনুসরণকারী ভাষাবিজ্ঞানীরা শব্দের অর্থ বিশ্লেষণে বিষয়মূলক তত্ত্বটিকে বেশি গুরুত্ব দেন।

আমরা জানি বোধগম্য শব্দের 'অর্থ' (a meaning) থাকা বাধ্যতামূলক। বিষয়মূলক শব্দার্থ তাত্ত্বিকদের মতে শব্দের সেই অর্থ দু-রকম হতে পারে-(১) সুস্পষ্ট নির্দিষ্ট আভিধানিক অর্থ-যাকে বলা যায় মুখ্য অর্থ। (২) মুখ্য অর্থ থেকে জাত আলংকারিক ব্যবহারে সৃষ্ট গৌণ অর্থ বা ব্যাঙ্গার্থ।

যেমন ধরা যাক, 'হাতশব্দটির মুখ্য অর্থ মানবশরীরের একটি অঙ্গ-বিশেষ। এটি হল 'হাত'এর আভিধানিক অর্থ। কিন্তু যখন বলি, "ছেলেটির ছবি আঁকায় হাত আছে"-তখন 'হাতশব্দের অর্থ হয় 'দক্ষতা' 'দক্ষতাহল 'হাত'-এর গৌণ অর্থ। শব্দটি বিশেষ বিষয়ে ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে এর আভিধানিক অর্থও বদলে যাচ্ছে।

ক্রিয়াপদবিশেষণ পদেরও এরকম ভিন্নার্থক ব্যবহার হতে পারে। যেমন-সভা ভাঙাপ্রতিজ্ঞা ভাঙাঘাড় ভাঙাকাঁচা ইটকাঁচা আমঅর্ধেক কাঁচা ইত্যাদি। অনেক সময় এই রকম কোনো কোনো শব্দের মুখ্য অর্থ লুপ্ত হয়ে গিয়ে গৌণ অর্থটাই প্রধান হয়ে ওঠে। যেমন 'ভাঙাবা 'কাঁচাক্রিয়াপদের গৌণ অর্থেরই ব্যবহার বেশি। এক্ষেত্রে বক্তা কোন্ অর্থটা বোঝাতে চানতা নির্ভর করে বক্তা এবং শ্রোতার পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং মনোভাবের ওপর। এই যে শব্দের অর্থ বিশ্লেষণে এরকম বিষয়নির্ভরতা-এটাই শব্দার্থের বিষয়মূলক তত্ত্বের আলোচ্য বিষয়।

কিন্তু আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানেআরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলেআধুনিক শব্দার্থতত্ত্বে প্রসঙ্গের (Context) উল্লেখকে অনেকেই তেমন গুরুত্ব দিতে চান না। বরং প্রাধান্য দেওয়া হয় বাক্যের তথা বাক্যের অন্তর্গত শব্দের নিহিত অর্থকে (Sense) |

 

প্রশ্ন.সমার্থকতা বিষয়টি নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

উত্তব়ঃ 'সমার্থকতাশব্দের অর্থ হল অর্থের অভিন্নতা। দুই বা ততোধিক শব্দের মধ্যে অর্থগত সাদৃশ্য থাকলে সেই শব্দগুলিকে সমার্থক শব্দ বলা হয়।

ভাষাবিজ্ঞানী ব্লুমফিল্ড বলেন যেপ্রতি রূপ বা শব্দের বিশেষ অর্থ আছে। অর্থাৎ তাঁর মতেভাষাতে কোনো সমার্থক শব্দ থাকার কথা নয়। কিন্তু বাস্তবে আমরা হামেশাই একটি শব্দকে অন্য শব্দের সমার্থক রূপে ব্যবহার করি। যেমন-'রামরাবণে যুদ্ধ বেধেছে।বাক্যের 'যুদ্ধশব্দটির বদলে আমরা সমার্থক 'লড়াইশব্দটি ব্যবহার করতে পারি। অভিধানে মুখশব্দকে ব্যাখ্যা করতে যে শব্দগুলি ব্যবহৃত হয়তারা সমার্থকতার ভিত্তিতেই নির্বাচিত হয়। যেমন- ঝগড়া: দ্বন্দ্ববিরোধ। জল: পানিবারিনীরসলিল। আনন্দ: হর্ষহরষপুলক। ছাতা: ছাতিছত্র। পাখি: পক্ষীবিহগখেচরবিহঙ্গম।

তবেব্লুমফিল্ডের মতকে কিছুটা সমর্থন করে আমরা বলতে পারি যেদুই শব্দের অর্থ হুবহু এক হয় না কখনোই। সমার্থক শব্দগুলির মধ্যে সামান্য অর্থপার্থক্য থাকেই। এই পার্থক্যটা ব্যাবহারিক পার্থক্য। যেমনকোনো শব্দ আনুষ্ঠানিককোনো শব্দ কাব্যিককোনো শব্দ তৎসমকোনো শব্দ অতৎসমকোনো শব্দ মান্য ভাষার শব্দকোনো শব্দ আঞ্চলিক শব্দ ইত্যাদি। যেমন 'আনন্দআনুষ্ঠানিক শব্দ হলেও 'হরষকাব্যিক শব্দ, 'পাখিঅতৎসম শব্দ হলেও 'পক্ষীতৎসম শব্দ, 'জলমান্য ভাষার শব্দ, 'পানিআঞ্চলিক শব্দ। তা ছাড়াএকথাও ঠিক যে সমার্থক শব্দগুলি সব প্রসঙ্গে সমার্থকও নয়। যেমন-ছাতা হাতছাড়া কোরো না। ছত্রহীন মস্তক তপ্ত হয়। ছাতি বেচে হাতি পেল। ফলে ছাতি-র

জায়গায় 'ছত্রবা ছাতা ব্যবহার করা যায় না সব প্রসঙ্গে। সুতরাং সমার্থক শব্দের 'বিশেষ অবস্থান'-ও থাকে।


প্রশ্ন.4 বিপরীতার্থকতা ও ব্যাপকার্থকতা সম্বন্ধে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

উত্তব়ঃ বিপরীতার্থকতা: দুটি শব্দের মধ্যে অর্থের বৈপরীত্য ফুটে উঠলে আমরা এক শব্দকে অন্য শব্দের বিপরীতার্থক শব্দ বলি। ইতিবাচক শব্দের সঙ্গে নেতিবাচক উপসর্গ যোগ করে বিপরীতার্থক শব্দ সৃষ্টি হয়। যেমন-আবশ্যক-অনাবশ্যক (অন্)বৃষ্টি-অনাবৃষ্টি (অনা)কারণ-অকারণ (অ)। আবার ইতিবাচক শব্দের শুরুতে ইতিবাচক উপসর্গ এবং নেতিবাচক শব্দের আগে নেতিবাচক উপসর্গ বসিয়েও বিপরীতার্থক শব্দের সৃষ্টি হয়।

যেমন-সক্ষম (স)-অক্ষম (অ)সবল (স)-দুর্বল (দুঃ বা দুর)সঠিক (স)-বেঠিক (বে)। সম্পূর্ণ নতুন শব্দযোগেও বিপরীতার্থক শব্দ সৃষ্টি করা হয়। যেমন-সুখ-দুঃখভালো-মন্দউত্তর-দক্ষিণ।

 ব্যাপকার্থকতা: কোনো-একটি শব্দে যদি একাধিক শব্দের অর্থকে একসঙ্গে প্রকাশ করা হয়তবে সেই নির্দিষ্ট শব্দটির ব্যাপকার্থকতা হয়। এক্ষেত্রে একটি শব্দের মধ্যে একাধিক শব্দের অর্থ অন্তর্ভুক্ত থাকে। তাই একে 'অর্থান্তরভুক্তি'ও বলে। যেমন-

ফুল-গোলাপজুইপলাশপদ্মটগর ইত্যাদি।

আসবাব-টেবিলচেয়ারখাটআলমারি ইত্যাদি।

পাখি-কাককোকিলচড়ুইশালিখদোয়েল ইত্যাদি।

ওপরের ফুলআসবাব এবং পাখি শব্দের অর্থ ব্যাপকতর এবং প্রতিটি লাইনের ডানদিকের শব্দগুলি বাঁ-দিকের ব্যাপকতর শব্দের অর্থের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।


প্রশ্ন.5 'থিসরাস'-এর বিস্তৃত বর্ণনা দাও।

উত্তব়ঃ 'থিসরাস' (Thesaurus) (= রত্নাগার) শব্দটি (ইংরেজি) এসেছে গ্রিক শব্দ 'thesauros' (= ভান্ডার) থেকে। থিসরাস হল 'প্রতিশব্দ বা সমার্থক শব্দের কোশগ্রন্থ'সাম্প্রতিক অভিধানকারদের মতে থিসরাস হল 'ভাবানুক্রমে বিন্যস্ত সমার্থ শব্দকোশ'থিসরাস শব্দটি জনপ্রিয়তা পায় পিটার মার্ক রজেট (Peter Mark Roget) সংকলিত 'Thesaurus of English Language words and Phrases' (1852) গ্রন্থসূত্রে। সংস্কৃত ভাষায় লেখা অমরকোশ থিসরাসের উদাহরণ হলেও রজেট-এর থিসরাসই প্রথম আধুনিক থিসরাস। রজেট ১৮০৫ খ্রিস্টাব্দে লিখিত এই বইটিতে যাবতীয় শব্দকে কতকগুলি গুচ্ছে ভাগ করে অভিধানবদ্ধ করেছিলেন। ধরা যাক, 'Apple'শব্দটি কেউ খুঁজছেন। ফলটার ছবি তাঁর মনে আসলেও শব্দটা তাঁর মাথায় আসছে না। তখন থিসরাসে 'Fruits'গুচ্ছে তিনি শব্দটা পেয়ে যাবেন। থিসরাস সাধারণ অভিধানের মতো শব্দার্থ বলেই ক্ষান্ত হয় নাআবারসাধারণ অভিধানের মতো থিসরাসে শব্দগুলি বর্ণানুক্রমিকভাবে সাজানোও থাকে না। 'থিসরাসএমন একটা রেফারেন্স বইযেখানে সমার্থক শব্দগুলি একটা গুচ্ছের মধ্যে থাকে। ফলে সাধারণ অভিধানের তুলনায় এতে শব্দ খোঁজা অনেক সহজতর। এপ্রসঙ্গে থিসরাস সম্বন্ধে রজেট-এর মন্তব্যটি প্রণিধানযোগ্য-“To find the word, or words, by which idea may be most fitly and aptly expressed."


প্রশ্ন.6 বাক্যতত্ত্বের 'প্রয়োগতত্ত্ববিষয়টি আলোচনা করো।

উত্তর সম্পর্কগত প্রত্যক্ষ বা পরিমণ্ডলই অর্থের জন্য শেষ কথা নয়। আসলে সমস্ত শব্দ ও তার অর্থই শেষপর্যন্ত ভিন্ন ভিন্ন সম্পর্কের মধ্যে দিয়ে উদ্ভাবিত হয়। রূপান্তর ও সৃজনমূলক ব্যাকরণে শব্দার্থতত্ত্বের ক্ষেত্রে অর্থ এবং অন্বয়ের মধ্যে একটা সম্পর্ক স্থাপন করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা যে

বাক্যই উচ্চারণ করি না কেনশেষপর্যন্ত তা আমরা বুঝতে পারলাম কি না বা অন্যকে বোঝাতে পারলাম কি নাতার উপরই বাক্যটির স্বীকৃতি নির্ভর করে। এই বোধগম্যতা ব্যাকরণের প্রত্যেকটি প্রকরণ নির্ণয়ের নিয়মের ওপর নির্ভরশীল। ভাষাবিজ্ঞানী চমস্কি সেই জন্য তাঁর 'Aspects of the Theory of Syntax' গ্রন্থে শব্দার্থকে ব্যাকরণের একটি প্রধান অঙ্গরূপে প্রতিষ্ঠা করেছেন। চমস্কি প্রবর্তিত বাক্যতত্ত্বে অন্বয় সম্বন্ধীয় স্তর থেকে বাক্যগুলি রূপান্তর বিধি দ্বারা পরিবর্তিত হয়ে ধ্বনিতাত্ত্বিক রূপ গ্রহণ করে। কিন্তু অন্ধয় সম্বন্ধীয় স্তরের বিমূর্ত উপাদানগুলি যখন প্রকৃত শব্দ গ্রহণ করেতখন তাকে শব্দার্থের নিয়মাবলি মানতে হয়। তাই শব্দার্থ হল রূপান্তরমূলক ব্যাকরণের একটি অন্যতম অঙ্গ। প্রথাগত ব্যাকরণ মেনে শব্দের দ্ব্যর্থকতা বা অসংগতি দিয়েও আমরা শব্দের অর্থ ব্যাখ্যা করতে পারিযেমন- "আনিয়াছে তব স্বামী বাঁধি নিজ গুণে।"

এই বাক্যে 'গুণেশব্দটি দুটি অর্থ প্রকাশ করে-'ধনুকের ছিলাএবং 'চারিত্রিক উৎকর্ষ'ফলে বাক্যটি দুটি অর্থে প্রতিভাত হয়। কিন্তু বাক্যে প্রযুক্ত এতসব শব্দের অর্থ বোঝাতে আমাদের বহু ক্ষেত্রেই ব্যাকরণের জগতের বাইরে যেতে হয়। অর্থাৎ আমরা সব শব্দেরই ব্যাকরণসম্মত অর্থ জেনে তাকে ভাষায় বা বাক্যে প্রয়োগ করি না। সেইজন্য কোনো কোনো ভাষাবিজ্ঞানী প্রয়োগতত্ত্ব বা Pragmatics নামে একটি শাখার কথা ভেবেছেনযার লক্ষ্য হল ভাষাতাত্ত্বিক সম্পর্কের বাইরের জ্ঞান ও বিশ্বাসের সঙ্গে অর্থের সম্পর্ক আবিষ্কার। তাঁদের মতেকোনো বক্তার কথনভঙ্গি ও উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে তার বক্তব্যকে বুঝতে পারার ক্ষমতাই হল প্রয়োগমূলক দক্ষতা।

প্রয়োগতত্ত্বের দ্বারা দেখা হয়শব্দার্থের পরিবর্তন শুধু ভাষার জ্ঞান ও গঠনের ওপর নির্ভর করে না। ভাষা-বিশেষ সম্পর্কে বক্তা এবং শ্রোতার পূর্বধারণাভঙ্গিউদ্দেশ্য বা আরও অন্যান্য কারণের ওপরও শব্দার্থের পরিবর্তন নির্ভর করে। প্রয়োগতত্ত্ববাদীরা মনে করেনস্থান-কাল-পাত্র-বুচি-স্বভাব ইত্যাদি প্রত্যক্ষণ দ্বারাও ভাষাজ্ঞান অর্জন বা ভাষায় ব্যবহৃত শব্দের অর্থবোধ হতে পারে।


প্রশ্ন.শব্দের অর্থ বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে তিনটি প্রধান তাত্ত্বিক ধারণার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

উত্তব়ঃ শব্দের অর্থ ও তার প্রয়োগের তত্ত্ব বিশ্লেষণের প্রকৃতি অনুসারে আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানে বেশ কয়েকটি ধারণা প্রচলিত আছে। তার মধ্যে বহু আলোচিত ধারণা তিনটি হল-(১) শব্দার্থের উপাদানমূলক তত্ত্ব, (২) শব্দার্থের সত্য-সাপেক্ষ তত্ত্ব এবং (৩) শব্দার্থের বিষয়মূলক তত্ত্ব।

1. শব্দার্থের উপাদানমূলক তত্ত্ব: গঠনমূলক শব্দার্থতত্ত্বের ধারায় উপাদানমূলক বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে শব্দার্থকে ভেঙে তাকে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশে অর্থাৎ শব্দার্থ-উপাদানে বিভক্ত করে বিশ্লেষণ করা হয়। এমনটা করার ফলে শব্দটির অর্থ সম্বন্ধে পরিষ্কার ধারণা এবং অন্যান্য শব্দের সঙ্গে তার সম্পর্কের একটি যথার্থ রূপ পাওয়া যায়। যেমন-'মাশব্দটির আক্ষরিক অর্থ থেকে সাধারণ অর্থ সমাধানের পথটি হবে নিম্নরূপ- মা মহিলা বয়স্কা স্ত্রীলিঙ্গ একবচন বিশেষ্য  মনুষ্যবাচক। নোয়াম চমস্কিও তাঁর রূপান্তরমূলক ব্যাকরণে অর্থ বিশ্লেষণের এই তত্ত্বটিকে মডেল রূপে গণ্য করেন। তবে সেক্ষেত্রে তিনি শব্দার্থের ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক দিকগুলিও নির্দেশ করেন।

2. শব্দার্থের সত্যসাপেক্ষ তত্ত্ব:  শব্দার্থের সত্যসাপেক্ষ তত্ত্বটির মূল কথা হলযখন আমরা কোনো বাক্যকে সত্য বলে জ্ঞান করি বা বাক্যটি বাস্তব সত্যের ভিত্তিতে রচিত বলে মনে করিতখন সেই বাক্যের অন্তর্গত শব্দগুলি সম্পর্কেও আমাদের মধ্যে একটি অর্থের বোধ গড়ে ওঠে। অর্থাৎএই তত্ত্বানুসারে বাক্যের সত্যাসত্যের উপরই শব্দের অর্থ নির্ভর করে। যেমন-বরফ হয় সাদা। এই বাক্যটি যদি সত্য হয়তবে বরফ যে সাদা রঙের হয় এই অর্থটি প্রতীয়মান হবে।

3. শব্দার্থের বিষয়মূলক তত্ত্ব বা প্রাসঙ্গিক অর্থতত্ত্ব: বিষয়মূলক তাত্ত্বিকরা মনে করেনশব্দের অর্থ বোঝা যায় ভাষায় ব্যবহৃত শব্দটির বক্তব্য বিষয় থেকে। যেমন-আমার হাতে আঘাত লেগেছে। তুমি হাত চালিয়ে কাজটা সেরে নাও। বিদ্যাসাগর কখনও কারও কাছে হাত পাতেননি। উপরের বাক্যগুলিতে 'হাতশব্দটি নানা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম বাক্যের 'হাততার মূল অর্থ (অঙ্গ-বিশেষ) বজায় রেখেছে। কিন্তু অন্য বাক্য দুটিতে 'হাতশব্দের অর্থটি বাক্যের বিষয় অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়েছে। এইভাবে বক্তব্যের বিষয় অনুযায়ী অর্থাৎ প্রসঙ্গ এবং পরিপ্রেক্ষিত অনুযায়ী শব্দের অর্থ বিশ্লেষণের ধারাটি বিষয়মূলক তত্ত্ব বা Contextual theory হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।


প্রশ্ন.8 শব্দার্থ পরিবর্তনের ধারা ক-টি ভাগে বিভক্ত ও কী কীযে-কোনো একটি ভাগ উদাহরণ-সহ বুঝিয়ে দাও।। অথবাশব্দার্থের রূপান্তর বা সংশ্লেষ বলতে কী বোঝউদাহরণ দাও।

উত্তব়ঃ প্রধানত তিনটি ধারায় অর্থ পরিবর্তন হয়ে থাকে। যেমন-(১) অর্থপ্রসার, (২) অর্থসংকোচ এবং (৩) অর্থের রূপান্তর বা অর্থসংশ্লেষ।

 শব্দার্থের রূপান্তর: শব্দের অর্থ পরিবর্তন কতকগুলি ধাপের মধ্যে দিয়ে হয়। অনেক সময় অর্থ পরিবর্তনের ধারায় শেষ ধাপে এসে শব্দের এমন নতুন অর্থ দাঁড়িয়ে যায় যে মূল অর্থের সঙ্গে তার আর কোনো যোগ খুঁজে পাওয়া যায় না। তখন মনে হয় শব্দটির অর্থ এক বস্তু থেকে একেবারে অন্য বস্তুতে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। এই ধরনের পরিবর্তনকে অর্থের রূপান্তর বা অর্থসংক্রম বলে। যেমন- সংস্কৃত শব্দ 'ঘর্ম'-এর মূল অর্থ প্রথমে ছিল 'গরম'পরে তার অর্থ দাঁড়ায় 'শরীরের ওপর গরমের ফল'আর এখন আমরা 'ঘর্মবলতে বুঝি 'ঘামবাস্বেদ'তেমনি 'পাষন্ডশব্দের মৌলিক অর্থ 'ধর্ম সম্প্রদায়'অর্থের প্রসার ঘটে তা হল 'অন্য ধর্ম সম্প্রদায়', তারপর বিরুদ্ধ ধর্ম সম্প্রদায়'সবশেষে 'পাষণ্ডশব্দের রূপান্তরিত অর্থ হল 'অত্যাচারী' 'পাত্রশব্দের মূল অর্থ 'পান করার আধার', অর্থ প্রসারে হল 'কন্যা সম্প্রদানের আধার'শেষে 'পাত্রশব্দের রূপান্তরিত অর্থ হল 'বর'

'সন্দেশশব্দেও অর্থ পরিবর্তনের একাধিক প্রক্রিয়া কাজ করেছে। এই শব্দের মূল অর্থ ছিল 'খবর', 'সংবাদ'যখন ডাকব্যবস্থা প্রচলিত ছিল নাতখন আত্মীয়দের বাড়িতে যে খবরাখবর নিয়ে যেতসে কিছু মিষ্টান্ন নিয়ে যেত। এই অনুষঙ্গের সূত্র ধরে 'সন্দেশশব্দের অর্থ দাঁড়ায় 'মিষ্টান্ন' 'খবরথেকে 'মিষ্টান্ন'-এটাও একধরনের অর্থের 'রূপান্তর'


প্রশ্ন.9 শব্দার্থের পরিবর্তনবলতে কী বোঝউদাহরণ-সহ 'শব্দার্থের সংকোচ 'শব্দার্থের প্রসারসম্বন্ধে আলোচনা করো।

উত্তব়ঃ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কোনো শব্দের যে আদি অর্থ তা পরিবর্তিত হয়ে কখনও এক ব্যাপকতর অর্থকখনও সংকুচিত অর্থ আবার কখনও সম্পূর্ণ নতুন অর্থ পায়। একেই শব্দার্থের পরিবর্তন বলা হয়।

 শব্দার্থের সংকোচ: অর্থ পরিবর্তনের ফলে যদি শব্দের নতুন অর্থটি আদি অর্থের তুলনায় সংকুচিত বা ক্ষুদ্র রূপ লাভ করেতাকে শব্দার্থের সংকোচ বলা হয়। যেমন-'মৃগশব্দের আদি অর্থ ছিল যে-কোনো পশুকিন্তু এখন তা শুধু 'হরিণ'-কে বোঝায়।

 বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী ১ নং প্রশ্নের উত্তরের 'শব্দার্থের প্রসারশীর্ষক অংশ দ্যাখো।

 

EDITING BY-- Liza Mahanta