Chapter--20
বাংলা
চিত্ৰকলা
-----------------------------------
MCQ
1. বাংলার
প্রাচীন চিত্রকলার নিদর্শন পাওয়া যায় কোন রাজবংশের আমলে?
(a) গুপ্ত
(b) পাল ✔
(c) সেন
(d) চোল
2. পালযুগের
পৃথিচিত্রে গৌতম বুদ্ধের জীবনের ক-টি প্রধান ঘটনার ছবি দেখা যায়?
(a) তিনটি
(b) পাঁচটি
(c) সাতটি
(d) আটটি ✔
3. কোন্
পালরাজার শাসনকালে 'অষ্টসহস্রিকা-প্রজ্ঞাপারমিতা' নামের
বারোটি প্রধান রঙিন চিত্র অঙ্কিত হয়েছিল?
(a) গোপাল
(b) দেবপাল
(c) প্রথম
(d) মহীপাল ✔
4.'অষ্টসহসিকা-প্রজ্ঞাপারমিতা' নামে
তালপাতার পুথিতে কয়টি রঙিন চিত্র পাওয়া যায়?
(a) আটটি
(b) দশটি
(c) বারোটি ✔
(d) কুড়িটি
5. কোন্
রাজার ঢিবি খুঁড়ে আবিষ্কৃত হয়েছে নকশা-আঁকা নানারকম মৃৎপাত্র?
(a) পাণ্ড ✔
(b) চোল
(c) পাল
(d) সেন
6. কঙ্গোদেশে
কোন্ রাজাদের আমলে বাঙালি জাতিসত্তার প্রথম বিকাশ ঘটেছিল বলে মনে করা হয়?
(a) সেন
(b) গুপ্ত
(c) পাল ✔
(d) চোল
7. প্রাচীনযুগে
বাংলাদেশে নীল আর হলুদের মিশ্রণে তৈরি হত কী রং?
(a) লাল
(b) কমলা
(c) সবুজ ✔
(d) বেগুনি
8. বাংলাদেশে
পুথিচিত্রের বিশিষ্ট ধারাটি দুর্বল হয়ে পড়ে কবে থেকে?
(a) দশম
শতকের প্রথম ভাগ
(b) দশম
শতকের দ্বিতীয় ভাগ
(c) একাদশ
শতকে প্রথম ভাগ
(d) একাদশ শতকের দ্বিতীয় ভাগ ✔
9. সাময়িকভাবে
বাংলার মূর্তি ও চিত্রকলার অনুশীলন বিলুপ্ত হয়ে যায় কোন্ শতাব্দীর সূচনায়?
(a) দ্বাদশ
(b) ত্রয়োদশ ✔
(c) চতুর্দশ
(d) পঞ্চম
10. বাংলায়
সামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহের শাসনকাল
(a) ১৩৪২
খ্রিস্টাব্দ-১৩৫৭ খ্রিস্টাব্দ ✔
(b) ১৩০১
খ্রিস্টাব্দ-১৩১২ খ্রিস্টাব্দ
(c) ১৩৩২
খ্রিস্টাব্দ-১৩৪১ খ্রিস্টাব্দ
(d) ১৩৫৭ খ্রিস্টাব্দ-১৩৭২ খ্রিস্টাব্দ
11. নিজামি
রচিত 'ইসকন্দর নামা' সুলতান
নসরৎ শাহের জন্য কে কপি করেন?
(a) আমির
খান
(b) ইউসুফ
খান
(c) রসিদ
খান
(d) হামিদ খান ✔
12.দরবারি
মুঘল চিত্রকলার সূচনা ঘটে কোন্ মুঘল সম্রাটের আগ্রহ ও আনুকূল্যে?
(a) বাবর
(b) জাহাঙ্গির
(c) হুমায়ুন
(d) আকবর ✔
13. কোন্
মুঘল সম্রাটের চিত্রকলার তুলনায় স্থাপত্যে বেশি অনুরাগ ছিল?
(a) হুমায়ুন
(b) আকবর
(c) জাহাঙ্গির
(d) শাজাহান ✔
14. বাংলার
কোন্ নবাব মহরম এবং খাজা-খিজির উপলক্ষ্যে মুরশিদাবাদকে আলোকসজ্জায় সাজাতেন?
(a) মুরশিদকুলি
খাঁ ✔
(b) আলিবর্দি
খাঁ
(c) সিরাজ
উদ্দদৌলা
(d) মীরজাফর
15. মুরশিদাবাদের
চিত্রকলা- শৈলীর শ্রেষ্ঠ সময় কোন্ নবাবের আমলে হয়?
(a) মুরশিদকুলি
খাঁ
(b) আলিবর্দি
খাঁ ✔
(c) মীরজাফর
(d) মীরকাশিম
16. বাংলা
চিত্রকলার ইতিহাসে মুরশিদাবাদ শৈলীর চরম উৎকর্ষ দেখা যায়-
(a) মুরশিদকুলি
খাঁ-র শাসকালে
(b) সুজাউদ্দিনের
শাসনকালে
(c) সরফরাজের
শাসনকালে
(d) আলিবর্দি
খাঁ-র শাসনকালে ✔
(a) মুরশিদাবাদে
(b) পাটনায়
(c) তানজোরে ✔
(d) কলকাতায়
18. কোম্পানি
চিত্রশৈলীর প্রথম নিদর্শন পাওয়া যায় কোন প্রেসিডেন্সিতে।
(a) কলকাতা
(b) বোম্বাই
(c) মাদ্রাজ ✔
(d) চেন্নাই
19. দিল্লি
ও আগ্রাতে কোম্পানি চিত্রশৈলীর প্রসার ঘটে কোন শতকের শুরুতে।
(a) ষোড়শ
(b) সপ্তদশ
(c) অষ্টাদশ
(d) ঊনবিংশ ✔
20. দিল্লি
অঞ্চলের শিল্পীরা সাধারণত কীসের ওপর চিত্র আঁকতেন।
(a) হাতির
দাঁত
(b) অভ্রের
পাত
(c) তালপাতা ✔
(d) মাটি
Long Question Answer
প্ৰশ্ন.1 কালীঘাটের পটের বিষয়বৈচিত্র্য সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তব়ঃ ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে কালীঘাটের মন্দির প্রতিষ্ঠিত হলে ভক্তমহলে ও দর্শনার্থীদের কাছে পট বিক্রির অভিপ্রায়ে গ্রামীণ পটুয়ারা সেই এলাকায় বসবাস শুরু করেন। তাঁদের কাছে থাকত দেবদেবীর মুখের মূর্তি, পুতুল, সরাচিত্র ইত্যাদি। পরবর্তীতে ক্রমশ চৌকো পটে দেবতার মূর্তি আঁকা শুরু হয়। কালীঘাটের পটুয়াদের পটচিত্রের ক্রমবিকাশের রূপটিকে দেবদেবীর মুখের অবয়ব ও পুতুল, সরায় আঁকা দেবদেবীর ছবি, ধর্মীয় পট, পৌরাণিক পট, দৈনন্দিন জীবনের ছবি, ব্যঙ্গচিত্র ইত্যাদি বিভিন্ন ধারায় বিন্যস্ত করা যেতে পারে। পটের বিষয়বস্তুর মধ্যে ছিল দাঁড়ে বাঁধা কাকাতুয়া, পাকানো চাদর গায়ে বিলাসী বাবু, পটের বিবি, গড়গড়ার নল মুখে সাহেব, মাছকুটুনী বাঙালি গিন্নি, বীণাবাদনরতা যুবতী, সালংকারা গৃহবধূর সামনে হুঁকো হাতে চেয়ারে বসা গৃহকর্তা, মোহন্ত এলোকেশী, মহাদেবের কোলে ঘুমন্ত পার্বতী ও বৃক্ষশাখায় শুকপাখি ইত্যাদি। ১৮০০ থেকে ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কলকাতার সমাজে লক্ষণীয় বাবু-কালচারের ক্ষয়িষু রূপের প্রতিফলন পটচিত্রে ধরা পড়েছিল। বস্তুত, পটুয়ারা সমাজ পরিবর্তনের ধারাটিকেই তাঁদের শিল্পের মাধ্যমে প্রকাশ করার চেষ্টা করেছেন এবং যাবতীয় সামাজিক অন্যায় ও অসংগতির বিরুদ্ধে ব্যঙ্গের কশাঘাত হেনেছেন। এক্ষেত্রে সমাজ সংশোধনই ছিল তাঁদের মুখ্য উদ্দেশ্য। মুসলিম ও ইংরেজ শাসনের যুগসন্ধিক্ষণে যে কালীঘাটের পটের উদ্ভব ঘটেছিল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগেই তা বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যায়।
প্রশ্ন.2 বাংলা চিত্রকলা চর্চার ইতিহাসে চিত্তপ্রসাদ ভট্টাচার্যের অবদান আলোচনা করো।
উত্তব়ঃ চিত্তপ্রসাদ ভট্টাচার্যের জন্ম বর্তমান বাংলাদেশের চট্টগ্রামে। তাঁর পিতা ছিলেন চারুচন্দ্র ভট্টাচার্য। চিত্তপ্রসাদ চট্টগ্রামেই তাঁর বিদ্যালয় ও কলেজ জীবন অতিবাহিত করেন। স্নাতক স্তরে পাঠরত থাকার সময়ে চট্টগ্রামে কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে এসে তিনি গণ-আন্দোলনে যুক্ত হন। চিত্রাঙ্কনে স্বাভাবিক প্রতিভার অধিকারী চিত্তপ্রসাদ, ১৯৪২-৪৩ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট আন্দোলনের ও দুর্ভিক্ষের পটভূমিকায় আঁকা ছবিগুলির জন্য শিল্পজগতে বিখ্যাত হয়ে আছেন। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে মেদিনীপুরের দুর্ভিক্ষের যে ছবি তিনি এঁকেছিলেন, তা সর্বকালীন দুর্ভিক্ষের প্রতিচ্ছবি হয়ে আছে। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের নৌবিদ্রোহের এবং ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের তেলেঙ্গানার কৃষক বিদ্রোহের ছবিগুলি তাঁর অবিস্মরণীয় কীর্তি। বোম্বাই, দিল্লি, কলকাতার নানা স্থানে তাঁর এই ছবিগুলির প্রদর্শনী হয়েছে। অবনীন্দ্রনাথের বা পাশ্চাত্যের প্রভাব থাকলেও গ্রামের সাধারণ দুঃখী ও সংগ্রামী মানুষই তাঁর শিল্পকলার প্রধান বিষয়বস্তু ছিল। তিনি স্কেচ ও উডকাটের মাধ্যমে দুর্ভিক্ষের ভয়াবহ চিত্রাবলি এঁকেছেন বলিষ্ঠ ভঙ্গিতে। তাঁর আঁকা 'তেভাগার প্রতিরোধ', আর 'ফসলের অধিকার' শিরোনামের ছবি দুটি ছাড়াও শিরোনামহীন আরও কয়েকটি ছবিতে আন্দোলনের সময়কার আবহ ফুটে উঠেছে। ৩৩ বছর বোম্বাই-এর আন্ধেরিতে থাকাকালীন অ্যালবাম, কার্ড, ছবি প্রভৃতি বিক্রি করে অনিয়মিত উপার্জনের মাধ্যমে তিনি নানা অসুবিধার মধ্যেই থাকতেন। অসুস্থ অবস্থায় তিনি কলকাতায় চিকিৎসার জন্য আসেন এবং কলকাতাতেই তাঁর মৃত্যু হয়।ফ্রেসকোর তুলনায় রিলিফের কাজে শিল্পীরা বেশি বিভিন্ন প্রাকৃতিক রং ব্যবহার করে থাকেন।লাল রঙের জন্য লাল মাটি, নীলের জন্য গুঁড়ো নীল, কালো রঙের জন্য টায়ার পোড়া, মাটি মেশানো সিঁদুর ছিল
বেগুনি রঙের জন্য এবং সবুজ রঙের জন্য ব্যবহার হত সিমপাতার রস। রিলিফের ছবিতে লতাপাতা ফুলগাছ ফুল,বিড়াল, কুকুল, বাঘ, গোরু, শিয়াল, ঘোড়া, হরিণ, মানুষ, হাতি মুরগি, চিল, ঘুঘু, পেঁচা, হাঁস, মাছরাঙা, ময়ূর ইত্যাদির উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।
প্ৰশ্ন.3 চিত্রশিল্পী
হেমেন মজুমদারের চিত্রকলার পরিচয় দাও।
উত্তব়ঃ হেমেন (হেমেন্দ্রনাথ মজুমদার) ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের ১৪ এপ্রিল (১৩০১ বঙ্গাব্দ) বর্তমান বাংলাদেশের ময়মনসিংহের অন্তর্গত গচিহাটা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কলকাতার গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজের ছাত্র ছিলেন। পঞ্চম জর্জের ভারত আগমন উপলক্ষ্যে এই কলেজের ছাত্রদের তোরণসজ্জার আদেশ দেওয়া হলে দেশপ্রেমিক হেমেন্দ্রনাথ তা অগ্রাহ্য করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি কলেজ ত্যাগ করে স্বাধীনভাবে শিল্পসাধনায় ব্রতী হন। বোম্বাই, মাদ্রাজ, দিল্লি ও কলকাতায় অনুষ্ঠিত চিত্র প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে তিনি শীর্ষস্থান অধিকার করেন এবং শিল্পীসমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত হন। চিত্রকলার প্রায় সকল বিভাগেই তাঁর প্রতিভা লক্ষ করা যায়। বসুমতী, প্রবাসী, ভারতবর্ষ প্রভৃতি নামী পত্রিকায় তাঁর বহু ছবি মুদ্রিত হয়। ১৩৩৯ বঙ্গাব্দে তিনি পাঞ্জাবের পাতিয়ালা রাজ্যের রাজশিল্পী পদে যোগ দেন। তাঁর আঁকা 'স্মৃতি', 'মানসকমল', 'পরিণাম', 'অনন্তের সুর', সাকী', 'কমল না কণ্টক' প্রভৃতি ছবি বিখ্যাত। 'আর্ট অব এইচ্ মজুমদার', 'শিল্পী', ইন্ডিয়ান মাস্টার' প্রভৃতি চিত্রপত্রিকাগুলি তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে যোগেশচন্দ্র শীল, যামিনী রায়, অতুল বসু প্রমুখের সহযোগী হিসেবে তিনি 'Indian Academy of Fine Arts' প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেন। ১৩৫০ বঙ্গাব্দে শিল্পী হেমেন মজুমদারের মৃত্যু হয়।
প্রশ্ন.4 বাংলা চিত্রকলা চর্চার ইতিহাসে জয়নুল আবেদিনের অবদান আলোচনা করো।
উত্তব়ঃ '১৯৪৩ বাংলা দুর্ভিক্ষ' নামে বিখ্যাত চিত্রাবলির শিল্পী জয়নুল আবেদিনের জন্ম বর্তমান বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জে। তিনি কলকাতা গভর্নমেন্ট আর্ট স্কুল (বর্তমানে কলেজ) থেকে ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে পাস করেন। প্রথমে তাঁর আঁকার বিষয়বস্তু ছিল প্রধানত রোমান্টিক ল্যান্ডস্কেপ ও বর্ণময় উপজাতি মহিলা। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে সারা বাংলাদেশ জুড়ে দুর্ভিক্ষের যে বিভীষিকা তিনি দেখেন, তা তাঁর শিল্পকর্মকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। 'ম্যাডোনা ১৯৪৩' ছবিতে দুর্ভিক্ষের শিকার কঙ্কালসার মৃত্যুপথযাত্রী সন্তানের সদ্য মৃত মায়ের বুক থেকে সুধা টেনে নেবার ঐকান্তিক চেষ্টার নির্মম দৃশ্যকে তিনি ফুটিয়ে তোলেন। দেশ বিভাগের পর তিনি করাচিতে পাকিস্তান সরকারের আর্ট বিভাগে যোগ দেন। এখানে থাকার সময়ে আবেদিন ঢাকায় আর্ট ইন্সটিটিউশনের পরিকল্পনা করেন। ১৯৪৭খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় আর্ট ও ক্র্যাফ্ট কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি তার অধ্যক্ষ হন। ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব ফাইন আর্ট-এর ডিনপদ লাভ করেন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর কলকাতা ও ঢাকার মধ্যে সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানের সময় কলকাতায় তাঁর আঁকা ছবির একটি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এইসব ছবির মধ্য দিয়ে তিনি বাংলাদেশের যুদ্ধ-বিধ্বস্ত মানুষের অবস্থা দেখিয়েছেন।
প্রশ্ন.5 বাংলা
চিত্রকলাচর্চার ধারায় অসিতকুমার হালদারের অবদান আলোচনা করো।
উত্তব়ঃ শিল্পী অসিতকুমার হালদার ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দের ১০ সেপ্টেম্বর কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন শ্রী সুকুমার হালদার। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের যে ছাত্রেরা 'নব্যবঙ্গীয় চিত্রকলা'র প্রসার ঘটিয়েছিলেন, অসিতকুমার ছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন। নন্দলাল বসুর অন্যতম সহযোগী হিসেবে ১৯০৯ থেকে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি অজন্তা গুহাচিত্রের অনুলিপির কাজে নিযুক্ত ছিলেন। এ ছাড়াও তিনি বাগ্ গুহাচিত্র ও যোগীমারা গুহাচিত্রের অনুলিপির কাজ করেন। ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে তিনি শান্তিনিকেতনের অধ্যক্ষরূপে কলাভবনের সূচনা করেন। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে অসিতকুমার জয়পুর শিল্প বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হন। ১৯২৫ থেকে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি লখনউ সরকারি শিল্প মহাবিদ্যালয়ের স্থায়ী অধ্যক্ষ ছিলেন। তাঁর আঁকা অজস্র ছবির মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য-'রাসলীলা', 'যশোদা ও শ্রীকৃষ্ণ', 'অগ্নিময়ী সরস্বতী', 'কুণালের চক্ষুলাভ', 'ওমর খৈয়াম' ইত্যাদি। 'অজন্তা', 'বাগ্ গুহা ও রামগড়', 'হো-দের গল্প', 'পাথুরে বাঁদর রামদাস ও কয়েকটি গল্প', 'ভারতের কারুশিল্প', 'ঋতুসংহার' ও 'মেঘদূত' কাব্যের অনুবাদ তাঁর সাহিত্য ও শিল্প প্রতিভার সাক্ষ্য বহন করে। মূর্তিকলাতেও তিনি বিশিষ্টতা অর্জন করেন। তাঁর কৃতি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে রয়েছেন মুকুল দে, রমেন চক্রবর্তী, প্রতিমা ঠাকুর প্রমুখ। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দের ১৩ ফেব্রুয়ারি তাঁর জীবনাবসান হয়।
প্রশ্ন.6 বাঙালির
চিত্রকলাচর্চার ধারায় অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান আলোচনা করো।
উত্তব়ঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভ্রাতুষ্পুত্র অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর চিত্রশিল্পী হিসেবে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন। অবনীন্দ্রনাথ পাশ্চাত্যরীতি অনুসরণে ইটালিয়ান গিলার্ডি এবং ইংরেজ শিল্পী পামার-এর কাছে প্যাস্টেল, জলরং, তেলরং এবং প্রতিকৃতি অঙ্কন শেখেন। কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে তিনি ভারতীয় চিত্রাঙ্কন-রীতি পুনরুদ্ধারের সাধনা শুরু করেন। ভারতীয় রীতিতে আঁকা তাঁর প্রথম দিকের বজ্রমুকুট, ঋতুসংহার, বুদ্ধ, সুজাতা, কৃষ্ণলীলা প্রভৃতি বিষয়ক ছবিতেও ভারতীয় আঙ্গিকের অনুকরণ প্রচেষ্টা লক্ষ করা যায়। ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে হ্যাভেল সাহেবের আগ্রহে অবনীন্দ্রনাথ কলকাতার আর্ট কলেজের উপাধ্যক্ষ হন। তিনি জাপানি শিল্পী টাইকানের কাছে জাপানি অঙ্কনরীতি শিক্ষা করেন, যার প্রভাব ওমর খৈয়াম চিত্রাবলিতে দেখা যায়। শিক্ষকরূপে সারা ভারতে ভারতীয় চিত্রাঙ্কন-রীতি পুনরুদ্ধারের যে ব্যাপক আন্দোলন অবনীন্দ্রনাথ শুরু করেন, তার মাধ্যমেই ভারতীয় শিল্প নবজন্ম লাভ করে। শেষ জীবনে তিনি 'কুটুম-কাটাম' নামে বিখ্যাত আকারনিষ্ঠ বিমূর্তরূপ সৃষ্টি করেন। ভগিনী নিবেদিতা, স্যার জন উডরক, হ্যাভেল প্রমুখের উদ্যোগে অবনীন্দ্রনাথের শিল্পাদর্শ জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে 'ওরিয়েন্টাল আর্ট সোসাইটি' স্থাপিত হয়। ভারত ছাড়াও লন্ডনে, প্যারিসে, জাপানে তাঁর ছবির প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর আঁকা বিখ্যাত কিছু ছবির নাম-সাহাজাদপুর দৃশ্যাবলি, আরব্যোপন্যাসের গল্প, কবিকঙ্কন চন্ডি, প্রত্যাবর্তন, জারনিস এন্ড, সাজাহান প্রভৃতি। এ ছাড়াও তিনি বহু মুখোশের পরিকল্পনাও রচনা করেছিলেন।
প্ৰশ্ন.7 পালযুগের
চিত্রকলার পরিচয় দাও।
উত্তব়ঃ বাংলার
প্রাচীনতম ছবির নিদর্শন পাওয়া যায় পালরাজা প্রথম হিপালদেবের শাসনকালের ষষ্ঠ বছরে।
আনুমানিক ৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে নালন্দা মহাবিহারে লেখা 'অষ্টসহস্রিকা
প্রজ্ঞাপারমিতা' পুথির বারোটি রঙিন ছবিলপাতার উপরে আঁকা
হয়েছিল। তাঁর আমলের আঁকা আরও দুটি পুথি এবং পলরাজাদের দীর্ঘ সাড়ে চারশো বছরের
শাসনপর্বের বহু পুথিচিত্রের সন্ধান গওয়া গেছে। এ ছাড়াও তাদের আমলে স্থাপত্য, ভাস্কর্য
ও চিত্রকলার ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়। ধর্মপাল দক্ষিণবিহারের ওদন্তপুরী ও
বিক্রমশীলা আর উত্তরবঙ্গের সোমপুর বিহারের সংস্থাপক ছিলেন। দেবপাল, প্রথম
মহিপাল ছিলেন নালন্দা মহাবিহারের পৃষ্ঠপোষক, যেখানে তাঁদের সময়কালীন বহু প্রস্তর ও
ধাতুর মূর্তির সন্ধান মিলেছে। এ ছাড়াও মহাযানপন্থী বৌদ্ধ পালরাজাদের শাসনকালে আঁকা
ছবিতে তন্ত্রযানী, বজ্রযানী ও কালচক্রযানী দেবদেবীর
প্রতিমার উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। ধর্মপাল ও দেবপালের সমসাময়িক ইতিহাসবিখ্যাত
ভাস্কর তথা চিত্রশিল্পী ধীমান ও তাঁর পুত্র বিটপাল পূর্বদেশীয় এবং মধ্যদেশীয়
রীতিতে ছবি আঁকেন। পালযুগের পুথিচিত্রে গৌতম বুদ্ধের জীবনের প্রধান আটটি ঘটনার
বিবরণ পাওয়া যায়। এগুলি হল-(১)লুম্বিনী
বন জন্ম,(২)বুদ্ধগয়ায়
বোধিলাভ,(৩)সারনাথে
ধর্মচক্র প্রবর্তন,(৪)কুশীনগরে
মহাপরিনির্বাণ,(৫)শ্রাবন্তী
নগরে অলৌকিক ক্রিয়া প্রদর্শন,(৬)সঙ্কাশ্যে
স্বর্গাবতরণ,(৭)রাজগৃহে
নালগিরি বশীকরণ এবং(৮)বৈশালীর
আম্রবনে বানরের মধুদান গ্রহণ। এ ছাড়াও এ যুগের চিত্রগুলির যারা রয়েছে
মহাযান-বজ্রযানসম্মত দেবদেবীর প্রতিকৃতি, যার মধ্যে রয়েছেন
প্রজ্ঞাপারমিতা, তারা, লোকনাথ, মৈত্রেয়, মহাকাল, বজ্রপাণি, বসুধারা প্রমুখ। অবশ্য ভারতীয় চিত্রকলার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে গুপ্ত সম্রাটদের শাসনকালে (৩২০-৫৭৬ খ্রিস্টাব্দ)।
প্রশ্ন.8 বাংলাদেশে
সুলতানি শাসনকালের চিত্রকলার পরিচয় দাও।
উত্তব়ঃ বাংলার অধিকাংশ অঞ্চলই বৌদ্ধ পালরাজাদের অধিকার থেকে একাদশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে পৌরাণিক ব্রাহ্মণ্যধর্মের অনুগামী সেন ও বর্মণ রাজাদের কুক্ষিগত হয়ে পড়ে। ফলে পাল-পুথিচিত্রের ধারাটি ক্রমশ বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যায়। ত্রয়োদশ শতকের শুরুতে তুর্কি আক্রমণের ফলশ্রুতিতে দক্ষিণবিহার ও বাংলার বৌদ্ধবিহারগুলি ধ্বংস হলে নিরাশ্রয় পূর্ব ভারতীয় বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নেপাল ও তিব্বতে আশ্রয় নেন এবং এভাবেই সেখানে পূর্ব ভারতীয় শিল্পরীতি স্থান পায়।
সামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহের নেতৃত্বে (১৩৪২-৫৭ খ্রিস্টাব্দ) বাংলায় সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পরবর্তীকালে হুসেন শাহির শাসনকালে তা আরও ব্যাপ্তি লাভকরে। সুলতানি আমলে বাংলার স্থাপত্যে বাঙালির সৃজনশীলতার
পাশাপাশি উত্তর ভারতীয় সুলতানি স্থাপত্যের প্রভাব দেখা যায়। মুসলিম শাসনের সূচনাপর্বে বাংলার মূর্তি ও চিত্রকলা অনুশীলন ব্যাহত হলেও গ্রামীণ লোকচিত্রের মাধ্যমে তা আপন অস্তিত্ব রক্ষা করেছিল, যার পরিচয়
গ্রামবাংলার পটচিত্রে সহজেই পাওয়া যায়। এ ছাড়াও গৌড়ের মসজিদ ও সমাধিসৌধে পোড়ামাটির ইট ও টালির উপর অলংকরণে নানান নকশায় এ দেশীয় কারিগরদের শিল্পপ্রতিভার সাক্ষ্য ছড়িয়ে রয়েছে। সেই চিত্রকলায় পশ্চিম এশিয়ার আরবীয় ও ভারতীয় নকশার অপরূপ সমন্বয় লক্ষ করা যায়।
EDITING BY--Liza Mahanta