Chapter--22

 

বাংলা বিজ্ঞানৰ্চ্চাব় ইতিহাস

------------------------------------------------------

 

MCQ


 1. হাওড়ার শিবপুরে বোটানিক্যাল গার্ডেনটি গড়ে ওঠে

(a) ১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে

(b) ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে

(c) ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে

(d) ১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে 


2. শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন'-এর আদি নাম কী ছিল?

(a) সাহা বোটানিক্যাল গার্ডেন

(b) ইস্ট ইন্ডিয়া বোটানিক্যাল গার্ডেন

(c) রয়‍্যাল বোটানিক্যাল গার্ডেন    

(d) জর্জ কিং বোটানিক্যাল গার্ডেন


3. 'কোম্পানি বাগান' তথা 'বোটানিক্যাল গার্ডেন'-এর প্রতিষ্ঠাতা

(a) রবার্ট কিড    

(b) উইলিয়াম কেরি

(c) ডেভিড হেয়ার

(d) উইলিয়াম রক্কক্সবার্গ


4. কাকে 'ভারতীয় উদ্ভিদবিদ্যার জনক' বলা হয়?

(a) উইলিয়াম জোন্স

(b) উইলিয়াম রকক্সবার্গ    

(c) রবার্ট কিড

(d) জন টমাস


5. Annals of the Royal Botanic Garden, Calcutta নামক সাময়িকপত্রটি প্রকাশ করেন 

(a) রবাট কিড

(b) উইলিয়াম রক্সবার্গ

(c) স্যার জর্জ কিং    

(d) জন টমাস


6. Record of the Botanical Surgery of India প্রকাশিত হয় কত খ্রিস্টাব্দে

(a) ১৭৮৭

(b) ১৮৯০

(c) ১৮৯৩    

(d) ১৯৫২


7. এশিয়াটিক সোসাইটির তত্ত্বাবধানে ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনটি অনুষ্ঠিত হয়-

(a) ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে    

(b) ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে

(c) ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে

(d) ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে


8. 'এশিয়াটিক সোসাইটি' প্রতিষ্ঠিত হয় কত খ্রিস্টাব্দে?

(a) ১৭৮৪    

(b) ১৭৮৩

(c) ১৭৮৭

(d) ১৮৯০


9. এশিয়াটিক সোসাইটি'র প্রাণপুরুষ ছিলেন-

(a) রবার্ট কিড

(b) উইলিয়াম রক্সবার্গ

(c) উইলিয়াম জোন্স    

(d) জব চার্নক


10.সুপ্রিম কোর্টের (তৎকালীন) বিচারপতি হিসেবে উইলিয়াম জোন্স কত খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় আসেন

(a) ১৭৮৩    

(b) ১৭৮৪

(c) ১৭৮৭ 

(d) ১৮৯০


11. কোন বড়োলাটের পৃষ্ঠপোষকতায় 'এশিয়াটিক সোসাইটি' এবং 'ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ'-এর প্রতিষ্ঠা হয়

(a) লর্ড ডালহৌসি

(b) লর্ড ক্যানিংহাম

(c) লর্ড কর্নওয়ালিস

(d) লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস    


12. 'এশিয়াটিক সোসাইটি'র প্রথম ভারতীয় সভাপতি ছিলেন-

(a) রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্র    

(b) রাধাগোবিন্দ কর

(c) হরপ্রসাদ শাস্ত্রী

(d) রবি বর্মা


 13. রবার্ট মে রচিত 'মে গণিত' গ্রন্থাটি প্রকাশ করেন- 

(a) রবার্ট মে

(b) এশিয়াটিক সোসাইটি

(c) ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেস

(d) স্কুল বুক সোসাইটি    


14. সর্বপ্রথম বাংলা মুদ্রা অক্ষর খোদাই করেন- 

(a) হরপ্রসাদ শাস্ত্রী

(b) পঞ্চানন কর্মকার    

(c) জন টমাস

(d) জোশুয়া মার্শম্যান


15. কার পৃষ্ঠপোষকতায় পঞ্চানন কর্মকার বাংলা মুদ্রা অক্ষর খোদাই করেন। 

(a) স্কুল বুক সোসাইটি

(b) এশিয়াটিক সোসাইটি

(c) শ্রীরামপুর কলেজ    

(d) রিপন কলেজ 


16, এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা-র আদলে বিদ্যাহারাবলী (১৮২০) রচনা করেন-

(a) পঞ্চানন কর্মকার

(b) হরপ্রসাদ শাস্ত্রী

(c) উইলিয়াম কেরি

(d) ফেলিক্স কেরি    


 17. অস্থি ও শারীরবিদ্যার প্রথম বাংলা গ্রন্থ কোনটি।

(a) সর্বস্বসার

(b) শারীরতত্ত্ব

(c) বিদ্যাহারাবলী    

(d) শারীরবিদ্যা


18. বাংলা ভাষার প্রথম সাময়িকপত্রের নাম-

(a) বঙ্গদর্শন

(b) সমাচার দর্শন

(c) দিগ্দর্শন    

(d) সাধনা


19. সাহিত্যিক একরামুল লাইলার উপন্যাসে কার জীবন এঁকেছেন। 

(a) বনবিহারী মুখোপাধ্যায়    

(b) সুব়েশচন্দ সৰ্বাধিকাব়ী

(c) উপেন্দ্ৰনাথ ব্ৰহ্মচাব়ী

(d) লালমাধব মুখোপাধ্যায়


20. বনফুল তাঁর শিক্ষক ডা, বনবিহারী মুখোপাধ্যায়ের জীবন অবলম্বন করে কোন উপন্যাস লেখেন। 

(a) জঙ্গম 

(b) ডানা

(c) অগ্নীশ্বর    

(d) সে ও আমি


Long Question Answer

 

প্রশ্ন.1 ঔপনিবেশিক বাংলায় আধুনিক বিজ্ঞানচর্চার সূত্রপাতে বোটানিক্যাল গার্ডেনের ভূমিকা ব্যক্ত করো।

উত্তরঃ বর্তমানে হওড়া শিবপুরের যে জাতীয় উদ্যান আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু বোটানিক্যাল গার্ডেন বা শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন নামে পরিচিত, তার আদি নাম ছিল রয়‍্যাল বোটানিক্যাল গার্ডেন। যদিও কোম্পানির বাগান নামেই লোকে উদ্যানটিকে চিনত। মধ্যযুগে ভারত উপমহাদেশে মশলা ও সেই ধরনের বাণিজ্যবস্তুর প্রাচুর্যের আকর্ষণ থাকায় উদ্ভিদবিদ্যা ও উদ্যানবিদ্যায় উৎসাহী বহু মানুষ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারী গোষ্ঠীতে স্থান পেয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্থাপিত কয়েকটি উদ্যানে বিলাতি বিশেষজ্ঞের পরামর্শে নতুন উদ্ভিদ রোপণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই উদ্যানগুলির মধ্যে অন্যতম হল

বোটানিক্যাল গার্ডেন। এখানে উদ্ভিদ সম্পর্কিত অনুসন্ধান ও গবেষণা যেমন চলত, তেমনি উদ্যানের কেন্দ্রে ছিল একটি ওষধিশালা। গবেষণা ও পথনির্দেশের জন্য উদ্ভিদের সংগ্রহশালা হিসেবে এটি গড়ে উঠেছিল।

হুগলি নদীর পশ্চিমতীরে হাওড়ার শিবপুরে ভারতের প্রাচীনতম বোটানিক্যাল গার্ডেনটি ১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে গড়ে ওঠে। ২৭৩ একর জমির উপর ৩৫ হাজার ফুল ও ফলগাছে সমৃদ্ধ এই উদ্যানে ১৪০০ রকমের নানাধর্মী ভারতীয় গাছ এবং ৬৫ রকমের বিদেশি গাছ রয়েছে। এই উদ্যানে রয়েছে ১.২ হেক্টর জমি জুড়ে থাকা ২৫০ বছরেরও বেশি পুরোনো বিশ্বের বৃহত্তম বট গাছ। এই উদ্যানের আয়ুর্বেদিক গাছপালা ভারতের চিকিৎসা গবেষণাকে আজও অমূল্য সহায়তা দান করে। গবেষণার সাহায্যার্থে এখানকার গ্রন্থাগারে বহু দুষ্প্রাপ্য বইও রয়েছে।


প্রশ্ন.2 উপনিবেশিক বাংলায় আধুনিক বিজ্ঞানচর্চার সূত্রপাতে এশিয়াটিক সোসাইটির অবদান কতখানি তা বিশ্লেষণ করে বুঝিয়ে দাও

উত্তরঃ উইলিয়াম জোনসের উদ্যোগে ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার পার্ক হয়। সংগ্রহশালা ও সংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র। সংস্কৃত, বাংলা, পারসি, আরবি, ইংরেজি ইত্যাদি ভাষায় লেখা দেড় লক্ষাধিক দুষ্প্রাপ্য বই ও পুথির সংগ্রহ এখানে হয়েছে। আর, রয়েছে অগণিত মুদ্রা, জার্নাল, পেন্টিং, ষাট হাজারের উপর পাণ্ডুলিপি, বহু দুষ্প্রাপ্য সংগ্রহ ও আলোকচিত্র। এশিয়াটিক সোসাইটির তত্তাবধানে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ১৫ জানুয়ারি ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে ২ নভেম্বর এশিয়াটিক সোসাইটিতে আহত সম্মেলনে স্থির হয় সোসাইটির পয়িত্বে প্রতি বছর বিজ্ঞান কংগ্রেসের একটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। সাহিত্য, বিজ্ঞান, শিল্প প্রভৃতি নানান শাখার প্রতিনিধিস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ শিক্ষা ও সংস্কৃতির পীঠস্থান এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। শিক্ষার বিস্তারে বাংলায় আধুনিক বিজ্ঞানচর্চার সূত্রপাতে ওই প্রতিষ্ঠানটির উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল।

 এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল বিজ্ঞান অধিবেশনের প্রস্তাবে সম্মত হলে সোসাইটির ১ নং পার্ক স্ট্রিটের বাড়িতেই তিনদিনের অধিবেশনে (১৫-১৭৫০ জানুয়ারি, ১৯১৪) বাংলার তৎকালীন রাজ্যপাল, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, বোটানিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার প্রতিনিধি, দেশবিদেশের শতাধিক বিজ্ঞানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির প্রয়োজনীয়তা, গুরুত্ব আজও অপরিসীম। নানান গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠানের গবেষণার ধারার মধ্যে সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে এশিয়াটিক সোসাইটিতে আয়োজিত বিজ্ঞান অধিবেশন অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা নিয়েছিল।


প্রশ্ন.3 ঔপনিবেশিক বাংলায় শ্রীরামপুর মিশন আধুনিক বিজ্ঞান-চর্চায় প্রচার ও প্রসারে কীভাবে অংশনিয়েছিল তা পর্যালোচনা করো।

উত্তরঃ শ্রীরামপুর মিশন ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়। জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চায় বা কারিগরিবিদ্যায় বাঙালির উদ্যোগী হয়ে ওঠার আগে ইউরোপীয় লেখকেরা উ ঔপনিবেশিক দেশের মানুষকে আধুনিক শিক্ষাদীক্ষায় গড়ে তোলার কাজে ব্রতী হন। বাংলা ভাষায় শিক্ষার ক্রমবিকাশে ফেলিক্স কেরি, জন ক্লার্ক মার্শম্যানই এবং রেভারেন্ড জন ম্যাকের কথা স্মরণীয়। বাংলা ভাষায় পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞান গ্রন্থ প ব্যবচ্ছেদ বিদ্যা (১৮১৯) ফেলিক্স কেরির রচনা। বইটির বিষয় শারীরবিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিদ্যা। বাংলায় বিদ্যাহারাবলী নামে বিশ্বকোশ প্রকাশের সঙ্গে তাঁর নাম যুক্ত আছে। গ্রন্থ রচনার ক্ষেত্রে লেখক কবিরত্ন তর্কশিরোমণির সাহায্য নেন। মার্শম্যান লিখিত বহু গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য জ্যোতিষ ও গোলাধ্যায়। তাঁর সম্পাদিত দিগ্দর্শন ও সমাচার দর্পণ (১৮১৮) পত্রিকায় বিজ্ঞান আলোচনা নিয়মিত প্রকাশিত হত। উইলিয়াম কেরি, পাশ্চাত্য ধারায় যে বিজ্ঞানচর্চার সূত্রপাত করেন, মার্শম্যান তাকেই বিস্তৃত করে তোলেন। তাঁরই প্রচেষ্টায় শ্রীরামপুর কলেজে রসায়নের বীক্ষণাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। কিমিয়াবিদ্যার সার তাঁর লেখা বাংলা ভাষায় রসায়নের প্রথম বই। বইটি বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় লেখা। উইলিয়াম ওয়ার্ডের নেতৃত্বে শ্রীরামপুর মিশনের উদ্যোগে আধুনিক মুদ্রণ এবং কাগজ নির্মাণ শিল্পের বনিয়াদ গড়ে ওঠে। ক্রমে এদেশে কাগজের কল তৈরি শুরু হয়। এদেশে যন্ত্র যুগের সূচনায় শ্রীরামপুরের কাগজের কলে বাষ্পের ইঞ্জিনকে উৎপাদনের কাজে লাগানো হয় ও ক্রমে বৃহৎ কাগজ শিল্প গড়ে ওঠে। আর এভাবেই পুথিনির্ভর সাহিত্য ও মৌখিক ধারা ক্রমশ ছাপা বইয়ের বৃহত্তর আত্মপ্রকাশের সামর্থ্য অর্জন করে। ইতিহাস


প্রশ্ন.4 বাংলার বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে রাধাগোবিন্দ করের অবদান আলোচনা করো।

উত্তরঃ প্রখ্যাত চিকিৎসক ডা. রাধাগোবিন্দ কর ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দের ২৩ আগস্ট হাওড়া জেলার সাঁতরাগাছিতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা হলেন ডা. দুর্গাদাস কর। তিনি হেয়ার স্কুল থেকে প্রবেশিক পরীক্ষা পাশ করার পর চিকিৎসাবিজ্ঞান শিক্ষার জন্য মেডিকেল কলেজে ভরতি হন। চিকিৎসাশাস্ত্রের পাঠ গ্রহণ করে রাধাগোবিন্দ ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপ যাত্রা করেন। ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি চিকিৎসাশাস্ত্রে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি নিজ উদ্যোগে 'করপ্রেস' নামে একটি ছাপাখানা গড়ে তোলেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি মেডিকেল কলেজ 'কারমাইকেল কলেজ' বর্তমানে তাঁরই নামাঙ্কিত 'R G Kar Medical College and Hospital' নামে পরিচিত। মাতৃভাষায় চিকিৎসাবিজ্ঞানচর্চা ছিল রাধাগোবিন্দ করের একান্ত স্বপ্ন। মেডিকেল স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি অবসর সময়ে তিনি বাঙলা ভাষায় চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে পুস্তক প্রণয়ন করেছেন। তিনি ডা. সুরথ বসুকে সঙ্গে নিয়ে ধাত্রীসহায় নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেন। এ ছাড়াও তিনি ভীষক্ সুহৃদ, অ্যানাটমি, কর-সংহিতা, সংক্ষিপ্ত ভেষজতত্ত্ব, সংক্ষিপ্ত শিশু ও বালক চিকিৎসা, রোগী পরিচর্যা, নূতন ভৈষজ্য তত্ত্ব, প্লেগ, স্ত্রীরোগচিকিৎসা, গাইনিকল্যাজি প্রভৃতি গ্রন্থ প্রণয়ন করেন।


প্রশ্ন.5 বাংলার বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে নীলরতন সরকারের অবদান আলোচনা করো।

উত্তরঃ প্রখ্যাত চিকিৎসক নীলরতন সরকার ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ১ অক্টোবর চব্বিশ পরগনার নেত্রায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে জয়নগর থেকে এন্ট্রান্স এবং ক্যান্সেল মেডিকেল স্কুল থেকে ডাক্তারি পাস করে সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জনের চাকরি নেন। ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি মেডিকেল কলেজে ভরতি হন এবং ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে এম বি হন। পরের দু-বছরের মধ্যে তিনি এম এ এবং এম ডি উপাধি অর্জন করেন। ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো এবং ক্রমে ফ্যাকাল্টি অব সায়েন্স, ফ্যাকাল্টি অব মেডিসিনের ডিন ও স্নাতকোত্তর কলা ও বিজ্ঞানশিক্ষা বিভাগের সভাপতি হন। নীলরতন, রাধাগোবিন্দ কর এবং সুরেশপ্রসাদ সর্বাধিকারীর সঙ্গে যোগ দিয়ে ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে বেলগাছিয়া মেডিকেল কলেজ (বর্তমান আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল) স্থাপন করেন। তিনি জাতীয় শিক্ষা পরিষদের সম্পাদক ব্যাপারে বিশেষভাবে উদ্যোগী হয়ে যাদবপুর যক্ষ্মা হাসপাতাল, বেঙ্গল টেকনিক্যাল স্কুল, যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারি কলেজ, ন্যাশানাল ট্যানারি, ন্যাশানাল সোপ ফ্যাক্টরি গঠনে তাঁর ভূমিকা করেন। নীলরতন সরকার বসু বিজ্ঞান মন্দির, বিশ্বভারতী ও ভারতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি এবং ১৯১২-২৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য ছিলেন। ক্যাম্পবেল মেডিকেল স্কুল, কলেজে রূপান্তরিত হলে তাঁরই নামাঙ্কিত হয়ে 'নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল' নামে পরিচিত হয়।


প্রশ্ন.6 চিকিৎসাবিজ্ঞানে ড. মহেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো।

উত্তরঃ ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে 'ক্যালকাটা স্কুল অব মেডিসিন' প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগীদের মধ্যে ডা. মহেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয় হয়ে আছে। কলকাতার কয়েকজন চিকিৎসক যখন একটি বেসরকারি মেডিকেল স্কুল স্থাপনে উদ্যোগী হন তখন তিনি সেই সভার সভাপতিত্ব করেন। মেডিকেল স্কুলটি স্থাপনের লক্ষ্যে উক্ত সভায় প্রস্তুত সাব-কমিটিরও তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে স্কুলটির নাম রাখা হয় 'ক্যালকাটা মেডিকেল স্কুল'। স্কুলটি কলেজে পরিণত হওয়ার সময়ে মহেন্দ্রনাথ তার পরিচালন সমিতির সভাপতি ছিলেন। কারমাইকেল কলেজ উদ্বোধনের পর তিনি এর অধ্যক্ষ হন। মেডিকেল কলেজের সঙ্গে প্রতিযোগিতায়, আর্থিক সংগতির অভাবে কলেজটির কাজকর্ম ব্যাহত হতে থাকে। তবু কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত বহু চিকিৎসক নিঃস্বার্থভাবে এখানে কাজ করায় এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তা বন্ধ হয়ে যায়নি। ডা. নীলরতন সরকার, ডা. কেদারনাথ বসু, রাধাগোবিন্দ কর, এম এল দে, কুমুদনাথ ভট্টাচার্য প্রমুখ বিখ্যাত চিকিৎসক এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ভারতের এই প্রথম বেসরকারি মেডিকেল স্কুলটি মফস্সলে 'করসাহেবের স্কুল' নামে পরিচিত ছিল।


প্রশ্ন.7 বাংলার বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে বনবিহারী মুখোপাধ্যায়ের অবদান আলোচনা করো।

উত্তরঃ শিল্পী বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের অগ্রজ ও চিকিৎসক বনবিহারী মুখোপাধ্যায় ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম বিপিনবিহারী মুখোপাধ্যায়। সুদক্ষ চিকিৎসকের পরিচিতি ছাড়াও ব্যঙ্গসাহিত্যস্রষ্টা এবং ব্যঙ্গচিত্রী হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছিল। সাহিত্যিক বনফুল (বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়) মেডিকেল কলেজে তাঁর ছাত্র ছিলেন। পরবর্তীকালে বনফুল তাঁরই জীবনকাহিনি অবলম্বনে অগ্নীশ্বর উপন্যাস রচনা করেন। এই উপন্যাস অবলম্বনে বনফুলের ভাই অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের সৃষ্ট চলচ্চিত্রটিও অত্যন্ত জনপ্রিয়। বঙ্গবাণী, শনিবারের চিঠি, ভারতবর্ষ প্রভৃতি পত্রিকায় তাঁর রচনা প্রকাশিত হত। বঙ্কিমচন্দ্রের দেবী চৌধুরাণী অবলম্বনে তাঁর লেখা ঢেলে সাজা নামক সচিত্র প্যারডি অত্যন্ত সমাদৃত হয়েছিল। তাঁর লেখা উপন্যাস ও ছোটোগল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য-দশচক্র, যোগভ্রষ্ট, সিরাজের পেয়ালা, নরকের কীট প্রভৃতি। সংস্কৃত আর ফরাসি ভাষার পাশাপাশি দর্শনে, নক্ষত্রবিজ্ঞানে, পক্ষীতত্ত্বে তিনি দক্ষ ছিলেন। 'বেপরোয়া' নামে একটি সাংস্কৃতিক সংস্থার সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন এবং সেই দলের এক সভ্য বিচরণ ভট্টাচার্যের সম্পাদনায় ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে বেপরোয়া পত্রিকা প্রকাশিত হলে, তাঁর অধিকাংশ লেখাই তিনি লিখতেন। ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের ৫ জুলাই তিনি লোকান্তরিত হন।


প্রশ্ন.8 বাংলার বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে সুরেশপ্রসাদ সর্বাধিকারীর অবদান আলোচনা করো।

উত্তরঃ কর্নেল সি. আই. ই. সুরেশপ্রসাদ সর্বাধিকারী ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে হুগলি জেলার রাধানগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বৌবাজার স্কুল, হেয়ার স্কুল, প্রেসিডেন্সি কলেজ, সেন্ট্রাল কলেজ এবং মেডিকেল কলেজে শিক্ষাগ্রহণ করেন। মেডিসিন ও সার্জারিতে অনার্স-সহ এম বি এবং এম ডি ডিগ্রি লাভ করে মেয়ো হাসপাতালে কিছুদিন অধ্যাপনার পর তিনি স্বাধীনভাবে চিকিৎসার কাজ শুরু করেন। বহু দুরূহ ও জটিল অস্ত্রোপচার করে তিনি অসামান্য খ্যাতি ও প্রতিপত্তি অর্জন করেন। ইউরোপীয় চিকিৎসকদের সমমর্যাদায় দেশীয় চিকিৎসকদের ৪ প্রতিষ্ঠিত করতে তিনি নিরলস চেষ্টা করেছেন। ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে মেডিকেল কলেজে যথেষ্ট ছাত্রের জায়গা না হওয়ায় তিনি নীলরতন সরকার, কালীকৃয় বাগচি, অমূল্যচরণ বসু প্রমুখ চিকিৎসকেরা মিলে 'College of Surgeons and Physicians of Bengal' নামে ভারতে প্রথম বেসরকারি মেডিকেল কলেজ গড়ে তোলেন। এটি পরে বেলগাছিয়া অ্যালবার্ট ভিক্টর হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত হয়। ১৯১৬-তে সেই প্রতিষ্ঠানটিই কারমাইকেল মেডিকেল কলেজে (বর্তমান আর জি কর) রূপান্তরিত হয়। সুরেশপ্রসাদ সর্বাধিকারী এই কলেজের পরিচালন সমিতির প্রথম সভাপতি ছিলেন। এ ছাড়া প্রথম সর্বভারতীয় চিকিৎসক সম্মেলনের সহ-সভাপতি এবং ২৫ বছর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো এবং সিন্ডিকেটের সদস্য ছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তিনি মেডিকেল কলেজের অবৈতনিক ইনস্পেকটর নিযুক্ত হন। ইউরোপের যুদ্ধের সময় 'বেঙ্গল অ্যাম্বুলেন্স কোর' গঠনের উদ্যোগের জন্য তিনি আই এম এস-এর লেফটেন্যান্ট কর্নেল উপাধিতে ভূষিত হন। কলকাতা 'ইউনিভার্সিটি কোরও তিনি নিজের হাতে

পড়েছেন। পরবর্তীকালে তাঁর সুযোগ্য পুত্র কনকচন্দ্র সর্বাধিকারী কলকাতা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ হন। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ১০ মার্চ ডা. সুরেশপ্রসাদ সাধিকারী পরলোক গমন করেন।


প্রশ্ন.9 বাংলার বিজ্ঞানাচার ইতিহাসে চুনীলাল বসুর অবদান আলোচনা করো।

উত্তরঃ প্রখাতে চিকিৎসক-গবেষক, রসায়নবিদ চুনীলাল বসু ১৮৬১ চিলাকের ১৩ মার্চ কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাল্যকালে পাঠশালা, তারপর শ্যামবাজার এডি (অ্যাংলো ভার্নাকুলার) স্কুল এবং সংস্কৃত কলেজিয়েট তৎ সাশার পড়ার জন্য মেডিকেল কলেজে ভরতি হয়ে চুনীলাল প্রাথমিক এম বি পরীক্ষাতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। শেষ এম বি পরীক্ষাতেও তিনি বহু পুরস্কার ও স্বর্ণপদক-সহ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। সারাজীবনে তিনি নানান উল্লেখযোগ্য পদে আসীন ছিলেন, যথা-মেডিকেল সদস্য, প্রথম যথা- মেডিকেল কাউন্সিলের সদস, ইন্ডিয়ান মেডিলোকেশন ফর দি বার্ষিক অধিবেশনের সহ-সভাপতি, ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিকেল জার্নালের কালাটিভেশন অব সায়েন্সের সহ-সভাপতি, ক্যালকাটা মেডি পতি প্রভৃতি। সিআইই উপরি ভারতি তিনি কলকাতার 'শেরিফ' হন। করবী ফুল নিয়ে বিশেষ গবেষণার জন্য ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'কোটস মেমোরিয়াল প্রাইজ' লাভ করেন। কুষ্ঠ রোগের ইনজেকশন প্রভৃতির গবেষণায় পরিশুদ্ধ দ্রাবক প্রস্তুতির ব্যাপারে তাঁর অসীম অবদান ছিল। তাঁর বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণামূলক বক্তৃতাগুলি The Scientific and Other Paper গ্রন্থের দুই খন্ডে সংকলিত রয়েছে। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় তিনি পঁচিশটি গ্রন্থ রচনা করেন, যার মধ্যে একুশটিই বিজ্ঞান প্রসঙ্গে রচিত। বইগুলির মধ্যে রয়েছে- ফলিত রসায়ন, রসায়ন সূত্র, জল, বায়ু, কাগজ, খাদ্য, শরীরস্বাস্থ্য বিধান, পল্লীস্বাস্থ্য, চা ইত্যাদি।


প্রশ্ন.10 চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে বিধানচন্দ্র রায়ের অবদান আলোচনা করো।

উত্তরঃ প্রখ্যাত চিকিৎসক এবং স্বনামধন্য রাজনীতিবিদ ডা. বিধানচন্দ্র রায় ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দের ১ জুলাই বিহারের পাটনায় জন্মগ্রহণ করেন। বিএ পাস করার পর থেকে তিনি কলকাতায় বসবাস শুরু করেন। তিনি কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে এলএমএস এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমডি ডিগ্রি লাভকরেন। প্রাদেশিক মেডিকেল সার্ভিসে যোগ দেওয়ার সুবাদে তিনি বিভিন্ন প্রদেশে পরিক্রমা করার সুযোগ পান। বিধানচন্দ্র বিলেতে গিয়ে এমআরসিপি, এমআরসিএস, এফআরসিএস ডিগ্রি লাভ করেন। দেশে ফিরে তিনি ক্যাম্পবেল মেডিকেল স্কুলে (বর্তমান নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল) শিক্ষকতার জীবিকা গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে বিধানচন্দ্র রয়‍্যাল সোসাইটি অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিনের এবং আমেরিকান সোসাইটি চেস্ট ফিজিসিয়ানের ফেলো নির্বাচিত হন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হন। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডিএসসি উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হন। ব্যাবসাবাণিজ্যের ক্ষেত্রেও তাঁর স্বচ্ছন্দ বিচরণ ছিল। তিনি শিলং হাইড্রো ইলেকট্রিক কোম্পানির অন্যতম ডিরেক্টর ছিলেন। জাহাজ, বিমান, ইনসিওরেন্সের ব্যবসার পাশাপাশি মায়ের নামে পাটনায় একটি বিদ্যালয়ও স্থাপন করেন। মূলত তাঁরই উদ্যোগে দুর্গাপুর একটি প্রসিদ্ধ শিল্পাঞ্চল হিসেবে গড়ে ওঠে। ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে তিনি 'ভারতরত্ন' উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দের ১ জুলাই তাঁর প্রয়াণ ঘটে। তাঁর ইচ্ছানুসারে পরবর্তীকালে তাঁর বাসভবনে রোগ-নির্ণয় গবেষণাকেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে।


প্রশ্ন.11 বাংলার বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে গিরীন্দ্রশেখর বসুর অবদান আলোচনা করো

উত্তরঃ ড. গিরীন্দ্রশেখর বসু নদিয়া জেলার বীরনগরের অন্তর্গত উলা গ্রামে ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দের ৩০ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএসসি এবং মেডিকেল কলেজ থেকে এমবি পাস করেন। মানসিক রোগ ও চিকিৎসাশাস্ত্রে তাঁর অসামান্য অবদান ছিল। ফ্রয়েডীয় মনঃসমীক্ষা-পদ্ধতির ব্যক্ত করেছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি মনোবিদ্যায় এমএসসি এবং ডিএসসি উপাধি লাভ করেন। ফ্রয়েডের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ ছিল। তিনি কলকাতায় ১৪ নং পারশিবাগান লেনে নিজের বাড়িতে 'ভারতীয় মনঃসমীক্ষা সমিতি' গড়ে তুলে আন্তর্জাতিক সংঘের অনুমোদন অর্জন করেন। গিরীন্দ্রশেখর ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে নিজের ভাই রাজশেখর বসুর দান করা বাড়িতে মানসিক হাসপাতাল গড়ে তোলেন। পরবর্তীকালে তিনি মেডিকেল কলেজের বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাবনর্মাল শারীরবিদ্যান। অসুস্থতার জন্য অবসর গ্রহণের আগেই তাঁকে পদত্যাগ করতে হয়। তিনি মনোবিজ্ঞান বিষয়ে বাংলায় স্বপ্ন, ইংরাজিতে Everyday Psycho. analysis, Concept of repression ইত্যাদি বই লিখেছেন। এ ছাড়াও লালকালো analysis, তাদের বই, পুরাণ প্রবেশ, ভগবদ্গীতা প্রভৃতি ধর্মীয় গ্রন্থ রচনা করেন। নামক ছোটোদের বাবিদ্যার পরিভাষা গ্রন্থে মনোবিদ্যার পরিভাষা রচনা ও চয়নে তাঁর বিপুল উদ্যোগ ও শ্রমের সাক্ষ্য ছড়িয়ে রয়েছে।


প্রশ্ন.12 বাংলার বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে গোলকচন্দ্র নন্দীর অবদান আলোচনা করো।

উত্তরঃ প্রথম ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ার গোলকচন্দ্র নন্দীর আদি বাসস্থান ছিল চব্বিশ পরগনার টিটাগড়ে। উইলিয়াম কেরির উৎসাহেই এই সুদক্ষ কর্মী শ্রীরামপুরের কাগজকলের কাজে নিয়োজিত হয়ে প্রথম বাষ্পীয় ইঞ্জিনটি পর্যবেক্ষণের সুযোগ লাভ করেন। পরবর্তীকালে তিনি সেই যন্ত্রটির অনুকরণে কোনোরকম বিদেশি সাহায্য বা বিদেশি উপকরণ ছাড়াই একটি ছোটো আকারের বাষ্পের ইঞ্জিন তৈরি করেছিলেন। তাঁর তৈরি বাষ্পীয় ইঞ্জিনটি সম্পর্কে উইলিয়াম কেরিরই উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এগ্রি-হর্টিকালচারাল সোসাইটির ৯ জানুয়ারি, ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দের অধিবেশনের কার্যাবলির বিবরণ থেকে বিস্তারিত জানা যায়। তাঁরই পরামর্শে গোলকচন্দ্রকে সেই ইঞ্জিনটি এগ্রি-হর্টিকালচারাল সোসাইটির দ্বিতীয় বার্ষিক প্রদর্শনীর সময় সকলের সামনে পেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়। ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দের ১৬ জানুয়ারি কলকাতার টাউন ল হলে প্রদর্শনীটি শুরু হলে গোলকচন্দ্র তাঁর ইঞ্জিনটি দিয়ে পাম্প চালিয়ে ও জল 10 তুলে সকলকে অবাক করে দেন।গোলকচন্দ্রের প্রায় একই সময়ে ফোর্ট গ্লস্টারের (বাউরিয়া) মিস্টার ম্যাক্সট একটি চার-অশ্বক্ষমতাসম্পন্ন ইঞ্জিন তৈরি করেন। এটি ভারতে নির্মিত প্রথম বাষ্পীয় ইঞ্জিন, যা জলযান চালানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। উপনিবেশকে স্বনির্ভর হতে না দেওয়াই যেখানে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির মূল লক্ষ্য, সেই পরিস্থিতিতেও গোলকচন্দ্রের বাষ্পীয় ইঞ্জিন সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে নির্মাণের এই উদ্যোগ বাঙালির শিল্পসাধনার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত রয়েছে।


প্রশ্ন.13 বাংলার বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে বিপিনবিহারী দাসের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তরঃ ভারতীয় হিসেবে সর্বপ্রথম একটি সম্পূর্ণ মোটরগাড়ি তৈরির কৃতিত্ব শ্রীবিপিনবিহারী দাসের। পুরোপুরি স্বদেশি উপাদানে নির্মিত গাড়িটির নামকরণও করা হয় 'স্বদেশি'। প্রথাগত শিক্ষালাভ না বলালেও স্বশিক্ষিত যন্ত্রবিদ বিপিনবিহারী এই প্রায় অসাধ্য কাজটিকে সম্ভব করেছিলেন। দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জ ও বন্ডেল রোডের মোড়ের কাছে তাঁর একটি ছোটো গাড়ি বানানোর কারখানা ছিল। টায়ার, কারবুরেটর এবং আর দু-একটি সরক্সাম ছাড়া গাড়ির বডি', চেসিস' সহ বাকি সব কিছুই তিনি নিজের হাতে তৈরি করতেন। চারটি দরজা-সহ পাঁচ আসনযুক্ত প্রথম তৈরি গাড়িটি ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে বিপিনবিহারী বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্রি করেন। মতিলাল নেহরু, মদনমোহন মালব্যর মতো স্বনামধন্য মানুষ তাঁর গাড়িতে চড়েন। কলকাতা কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বিপিনবিহারী একটি গাড়ি তৈরির দায়িত্ব পান। ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে গাড়িটি কলকাতার পথে নামে এবং বাংলা ও বাঙালির তৈরি গাড়িটিকে পুলিশ কর্তৃপক্ষ রেজিস্ট্রেশনের জন্য অনুমতি দেয়। ঘণ্টায় ৩৫ মাইল বেগে গাড়িটি চলত। তৎকালীন সমাজে যথাযোগ্য প্রশংসা ও আর্থিক আনুকূল্য না পেলেও তিনি গোয়ালিয়র রাজের জন্যও একটি গাড়ি তৈরি করেন যা বহুবছর চলেছিল। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ৫৫ বছর বয়সে তাঁর জীবনাবসান হয়।

 

EDITING BY--Liza Mahanta