Chapter 11 -
অসমের আর্থ-সামাজিক জীবনে মধ্যযুগের শাসকদের অবদান
পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নোত্তর:
১. মধ্যযুগের অসমের প্রধান শাসকদের নাম লেখ।
উত্তর: মধ্যযুগের অসমের প্রধান শাসকরা হলেন—
-
আহোম রাজবংশ: চাও লুং সুকাফা, স্বর্গদেউ সুসেনফা, স্বর্গদেউ প্রাতাপসিংহ, স্বর্গদেউ রুদ্রসিংহ।
-
কোচ রাজবংশ: মহারাজ বিশ্বসিংহ, মহারাজ নরনারায়ণ।
-
চুতিয়া রাজবংশ: মহারাজ বিষ্মল্লা।
-
কচার রাজবংশ: ধনমানিক্য।
২. আহোম শাসকরা অসমের সমাজে কী ধরনের পরিবর্তন আনেন?
উত্তর: আহোম শাসকরা অসমের সমাজে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনেন—
-
ভূমি সংস্কার ও কৃষির উন্নয়ন।
-
বৈজ্ঞানিক উপায়ে জলব্যবস্থার উন্নতি।
-
নতুন নতুন জনপদের সম্প্রসারণ।
-
বিভিন্ন জনজাতিকে সমাজের মূল স্রোতে অন্তর্ভুক্ত করা।
-
অসমীয় ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশ।
৩. মধ্যযুগের অসমের অর্থনীতি কেমন ছিল?
উত্তর: মধ্যযুগের অসমের অর্থনীতি ছিল কৃষিনির্ভর। প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হল—
-
ধান ছিল প্রধান শস্য।
-
ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছিল, বিশেষ করে হাতির দাঁত, লাক্ষা, রেশম ও বাঁশজাত সামগ্রীর ব্যবসা।
-
মুদ্রা বিনিময় প্রচলিত ছিল না, বিনিময় প্রথা চালু ছিল।
-
কাঠমিস্ত্রি, কামার, তাঁত শিল্পীদের বড়ো ভূমিকা ছিল।
৪. নরনারায়ণের শাসনকালকে স্বর্ণযুগ বলা হয় কেন?
উত্তর: নরনারায়ণের শাসনকালকে স্বর্ণযুগ বলা হয় কারণ—
-
তিনি প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থাকে সুসংহত করেন।
-
শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রসার ঘটান।
-
বৈদেশিক বাণিজ্য সম্প্রসারিত করেন।
-
কামতাপুর রাজ্যের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করেন।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর:
৫. চাও লুং সুকাফার ভূমিকা কী ছিল?
উত্তর: চাও লুং সুকাফা আহোম রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। ১২২৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় আসেন ও একটি শক্তিশালী শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলেন। অসমীয় সমাজের সাথে আহোম সংস্কৃতির সংমিশ্রণ ঘটান।
৬. আহোমদের ‘পাইক’ ব্যবস্থা কী?
উত্তর: ‘পাইক’ ব্যবস্থা ছিল আহোম সাম্রাজ্যের সামরিক ও প্রশাসনিক কাঠামো। এই ব্যবস্থায় প্রতিটি যুবককে সৈন্য, কৃষক বা কারিগর হিসেবে কাজ করতে হতো।
৭. মধ্যযুগে অসমে ধর্ম ও সংস্কৃতির বিকাশে কার অবদান ছিল?
উত্তর: মধ্যযুগে অসমে ধর্ম ও সংস্কৃতির বিকাশে মহাপুরুষ শ্রীমন্ত শঙ্করদেব ও মাধবদেবের অবদান ছিল। তারা বৈষ্ণব ধর্ম প্রচার করেন ও অসমীয় সাহিত্য, সত্র সংস্কৃতি এবং নৃত্য-গীতের বিকাশ ঘটান।
৮. মধ্যযুগে অসমে কী ধরনের কৃষিজ ফসল উৎপাদিত হতো?
উত্তর: মধ্যযুগে অসমে ধান, সরষে, তিল, পাট, মোঙ, আখ ইত্যাদি কৃষিজ ফসল উৎপাদিত হতো।
৯. আহোম রাজত্বের প্রশাসনিক কাঠামো কেমন ছিল?
উত্তর: আহোম প্রশাসন তিনটি স্তরে বিভক্ত ছিল—
-
রাজা বা স্বর্গদেউ সর্বোচ্চ শাসক।
-
‘বরগোহাঞি’, ‘বরপাত্রগোহাঞি’, ‘বরফুকন’ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।
-
পাইক ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রশাসন চালানো হতো।
১০. মধ্যযুগের অসমে শিক্ষার অবস্থা কেমন ছিল?
উত্তর: মধ্যযুগের অসমে শিক্ষার ব্যবস্থা প্রধানত মন্দির ও সত্রকেন্দ্রিক ছিল। বৈষ্ণব ধর্ম প্রচারকদের হাতে অসমীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে।
এইভাবে, মধ্যযুগের শাসকদের শাসন ও সংস্কৃতির প্রভাব অসমের আর্থ-সামাজিক জীবনে গভীর ছাপ ফেলেছিল।