Chapter 15 - 

সাম্রাজ্যবাদ এবং অসম 

পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নোত্তর:

১. সাম্রাজ্যবাদের কী অর্থ?
উত্তর: সাম্রাজ্যবাদ (Imperialism) হল একটি নীতি, যার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী দেশ অন্য দুর্বল দেশ বা অঞ্চলের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে এবং নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে।

২. ব্রিটিশরা অসম দখল করতে আগ্রহী হয়েছিল কেন?
উত্তর:
ব্রিটিশরা অসম দখল করতে আগ্রহী হয়েছিল কারণ—

  • অসম ছিল প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ, বিশেষ করে চা, কাঠ, পেট্রোল ইত্যাদিতে।

  • ব্রহ্মপুত্র নদ ছিল বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ জলপথ।

  • বর্মি আক্রমণের ফলে অসমে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছিল, যা ব্রিটিশদের হস্তক্ষেপের সুযোগ করে দেয়।

৩. ব্রিটিশরা কবে এবং কীভাবে অসম দখল করে?
উত্তর:

  • ১৮২৪-১৮২৬ সালের প্রথম অ্যাংলো-বর্মি যুদ্ধের পর ব্রিটিশরা অসম দখল করে।

  • ১৮২৬ সালে "যান্ডাবু চুক্তির" (Treaty of Yandabo) মাধ্যমে অসমকে ব্রিটিশ শাসনের অধীনে আনা হয়।

৪. যান্ডাবু চুক্তির কী শর্ত ছিল?
উত্তর:
যান্ডাবু চুক্তির প্রধান শর্ত ছিল—

  • বর্মিরা অসম, মণিপুর, আরাকান ও তেনাসেরিম ব্রিটিশদের হাতে তুলে দেবে।

  • বর্মিদের ব্রিটিশদের ১০ লাখ পাউন্ড ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

  • ভবিষ্যতে বর্মিরা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করবে না।

৫. ব্রিটিশ শাসনের ফলে অসমে কী ধরনের পরিবর্তন আসে?
উত্তর:
ব্রিটিশ শাসনের ফলে অসমে—

  • চা শিল্পের বিকাশ ঘটে।

  • আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হয়।

  • প্রশাসনিক কাঠামো পরিবর্তিত হয়।

  • কৃষকদের ওপর করের বোঝা বৃদ্ধি পায়।

  • আদিবাসীদের জমি কেড়ে নেওয়া হয়।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর:

৬. ব্রিটিশরা অসমের অর্থনীতিতে কী পরিবর্তন আনে?
উত্তর:

  • অসমকে একটি কৃষিনির্ভর অর্থনীতি থেকে বাণিজ্যিক অর্থনীতিতে পরিণত করে।

  • চা শিল্পের বিকাশ ঘটে এবং ব্রিটিশ মালিকানাধীন বাগান তৈরি হয়।

  • স্থানীয় শিল্প যেমন তাঁত শিল্প ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

  • কৃষকদের ওপর বেশি কর আরোপ করা হয়।

৭. ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে অসমের জনগণের প্রতিরোধের উদাহরণ দাও।
উত্তর:

  • গোমধর কোঁৱৰ বিদ্রোহ (১৮২৮): ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র বিদ্রোহ।

  • পিয়ালি ফুকন ও কৃষ্ণকান্ত তামুলির নেতৃত্বে ষড়যন্ত্র (১৮৩০): ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

  • ফুলগুড়ি ধান বিদ্রোহ (১৮৬১): কৃষকদের ওপর অতিরিক্ত কর আরোপের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ।

৮. অসমে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার বিকাশে ব্রিটিশদের ভূমিকা কী ছিল?
উত্তর:

  • ১৮৩৫ সালে ব্রিটিশ সরকার অসমে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করে।

  • অসমে স্কুল ও কলেজ স্থাপিত হয়, যেমন গৌহাটি কলেজ।

  • ইংরেজি ভাষার প্রচলন ঘটে, যা প্রশাসনিক কাজে ব্যবহৃত হত।

৯. ব্রিটিশ শাসনের ফলে অসমের পরিবেশ ও সমাজে কী প্রভাব পড়ে?
উত্তর:

  • বৃক্ষনিধন ও জমির বাণিজ্যিক ব্যবহার বৃদ্ধি পায়।

  • চা বাগানে বাইরে থেকে শ্রমিক আনা হয়, যা জনসংখ্যাগত পরিবর্তন ঘটায়।

  • অসমিয়া ভাষা ও সংস্কৃতি সংকটের মুখে পড়ে, কারণ ব্রিটিশরা একসময় বাংলা ভাষাকে বাধ্যতামূলক করেছিল।

১০. ব্রিটিশ শাসনের শেষ দিকে অসমে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন কীভাবে গড়ে ওঠে?
উত্তর:

  • অসমে ১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়।

  • ১৯৩০ সালে লবণ সত্যাগ্রহ অসমে ছড়িয়ে পড়ে।

  • তেজপুর ও গৌহাটিতে স্বাধীনতা সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র গড়ে ওঠে।

  • ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় (১৯৪২) অসমের বহু নেতা গ্রেফতার হন।